‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসন দুটির তুলনামূলক সমালোচনা করো।

বাংলা নাট্যসাহিত্যের সফল প্রহসন রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'একেই কি বলে সভ্যতা?’ এবং ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসন-দুটি প্রকাশিত হয় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম প্রহসনটিতে নাট্যকার শিক্ষিত সমাজকে সম্ভবত এই প্রশ্ন করেছিলেন যে, সভ্যতার নামে যে শিক্ষা আচার-ব্যবহার নৈতিক চরিত্র তারা গড়ে তুলছে তা কি সভ্য জাতি রূপে বাঙালিকে গড়ে তুলতে সমর্থ হবে? ‘একেই কি বলে সভ্যতা?” এক জীবন্ত সমাজ চিত্র। ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসনে কয়েকটি বিপজ্জনক মুহূর্তের মধ্যে আজীবন লালসার শিকার একটি বুড়োর জীবনে যে সত্যিকার পরিবর্তন আসতে পারে না, এ সন্দেহজনক সত্যটি মেনে নিয়েও দর্শক নাটকটির হাস্যরস ও সামাজিক বিদ্রূপ উপভোগ করেন। দুষ্টের দমনের চাইতে দুষ্টামির দমনই সেখানে প্রধান। নাটকের পরিণতির যে একটি প্রতীকী অর্থ আছে দৰ্শক তাই ধরে রাখেন কাহিনীর শেষে।


‘একেই কি বলে সভ্যতা?’র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য নাট্যকারের বাস্তবতা ও সমাজ সচেতনতা। প্রহসন রচয়িতারা সাধারণত সামাজিক জীবনের কোন দোষ ত্রুটি বা অসঙ্গতি অবলম্বন করেই তাঁদের চিত্রকে রূপায়িত করেন এবং এর ফলে জীবদ্দশায় জনসাধারণের কাছে প্রীতিভাজন হন না। মধুসূদনের জীবনেও এর ব্যতিক্রম নেই।


‘একেই কি বলে সভ্যতা?’র অল্প পরেই মধুসূদনের অপর প্রহসন ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' লিখিত হয়। সমাজের বিপরীতমুখী আর একটি বাস্তব চরিত্রকে অবলম্বন করেই এ প্রহসনখানি রচিত হয়। প্রহসনখানির নামকরণ করেন রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ। 'একেই কি বলে সভ্যতা?’য় নগরবিহারী শিক্ষিত যুবকের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আর ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ'র পটভূমিকায় পল্লী-সমাজ, এবং নায়ক সনাতন হিন্দুধর্মে আস্থাবান এক বৃদ্ধ প্রৌঢ় ভক্তপ্ৰসাদ বৰ্দ্ধিষ্ণু গৃহস্থ। দেব দ্বিজে পরম ভক্তি, জপের মালা সব সময়ে হাতেই আছে। খাজনা আদায় ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। দান ধ্যানে তাঁর আস্থা নেই। কেউ একটি পয়সা তাঁর কাছ থেকে ফাঁকি দিয়েও নিতে পারবে না, চেয়েও নিতে পারবে না। প্রহসনের নায়কের চরিত্রও ট্র্যাজিডির নায়কের মতোই একটি দুর্বলতা বা অসঙ্গতি থাকবে, যাকে অবলম্বন করে হাস্যরসের সুযোগ দর্শককে দান করা হবে। ইয়ংবেঙ্গলের মদ্য পানাসক্তি ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’র কাহিনীর প্রাণ দিয়েছিল আর 'বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’তে নারীমাংস লোলুপতা ভক্ত প্রসাদের জীবনকে লাঞ্ছিত করে সকলের কাছে হাস্যাস্পদ করেছে। একেই কি বলে সভ্যতা?' রচনা করে মধুসুদন ইংরেজি শিক্ষিত সমাজের বিরাগের পাত্র হয়েছিলেন, এবং তারা কত চেষ্টা করে প্রহসনের মঞ্চস্থ হওয়া বন্ধ করেছিল। সুতরাং এক খানা প্রহসনের ভেতর দিয়ে নাট্যকার নাগরিক সভ্যতার ছায়া দর্পণে প্রতিফলিত করে তাদের সমালোচনার পাত্র হয়েছিলেন কিন্তু তখন অপর সম্প্রদায় মধুসূদনের উপর একান্ত ভাবেই প্রীত হয়েছিলেন। সনাতনপন্থীরা মধুসূদনের সদবুদ্ধির উদয় দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলেন এবং ‘একেই কি বলে সভ্যতা' প্রহসনখানির প্রচুর সুখ্যাতিও করেছিলেন। এবারে কিন্তু নাট্যকারের মত বিপরীত সুরে প্রকাশিত হল। শহর দূরে পড়ে রইলো ইংরাজি শিক্ষিতদের খুঁজে পাওয়া গেল না, প্রহসনের নায়ক রূপে এলেন বকধার্মিক ভণ্ড, দুষ্কৃতিকারী অত্যাচারী সমাজের প্রতিনিধি বৈষ্ণবভক্তপ্ৰসাদ। এ চরিত্র একান্তভাবেই বাস্তব ও জীবন্ত। তা ছাড়া একদিক দিয়ে বিচার করলে নববাবুর থেকে ভক্তপ্রসাদের আবেদন দর্শক ও পাঠক চিত্তে অধিকতর, কারণ নববাবুরা সাময়িক গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিল আর ভক্ত প্রসাদেরা শাশ্বত, চিরন্তন ধারায় প্রবাহিত। দেশ কাল ও সমাজের গণ্ডিতে এদের আবদ্ধ করা যায় না। এঁরা সব দেশে, সব কালে সব সময়েই বাস করেন। সমৃদ্ধ ভূস্বামী সম্প্রদায়ের চরিত্রের এ ঘৃণিত দিকটির কথা কারও অজানা নেই। পরবর্তী কালে মীর মোশাররফ হোসেনের ‘জমিদার দর্পণের’ নায়ক হায়ওয়ান আলী ভক্তপ্রসাদের উত্তরাধিকারী। দীনবন্ধুর ‘বিয়ে-পাগলা বুড়ো’র নায়ক ও জ্যোতিরিন্দ্র নাথের ‘বিয়ে-পাগলা বুড়োর’ নায়কও ভক্ত প্রসাদেরই উত্তরসুরী। ভক্তপ্রসাদের সজীবতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে যোগীন্দ্রনাথ বসু বলেছেন- ‘মধুসূদনের সময়ে এই শ্রেণীর কতকগুলি লোকের কলিকাতার ও তাহার নিকটবর্তী পল্লী সমাজে বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। বাহিরে মালাজপ কিন্তু গোপনে পরস্বাপহরণ, সামাজিক প্রতিপত্তির জন্য দেবমন্দির প্রতিষ্ঠা কিন্তু গোপনে বারাঙ্গনা প্রতিপালন তাঁহাদিগের অনেকের নিত্যব্রত ছিল।'


মাইকেলের দুটি প্রহসনই বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। কিন্তু তাদের প্রেরণা ও উৎস হল দুশো বছরের আগের একটি যুগ। 'একেই কি বলে সভ্যতা?’ ও ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ'— প্রহসনদুটির চমৎকারিত্বে মুগ্ধ হয়ে পাঠক বিস্মৃত হয় যে দুটি প্রহসন মধুসূদনের নিজস্ব সৃষ্টি হলেও তাদের উৎস ভিন্নদেশকালে। উভয় প্রহসনের তুলনামূলক আলোচনায় তাদের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য এবং একই সঙ্গে মাইকেল মধুসূদনের নিজস্বতা ও বিশিষ্টতাসমূহ ধরা পড়ে।


মাইকেলের প্রহসন দুটির গুণগত বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে, 'বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ থেকে অনেক উৎকৃষ্ট। কাহিনী, ঘটনা, হাস্যরস উদ্ভাবন, সংঘাত, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি প্রেক্ষিত থেকে বিচার করলে ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' শ্রেষ্ঠতর। অবশ্য এই শ্রেষ্ঠতার কারণ নির্ণয় খুব সহজ নয়। কেননা, দুটি নাটকেই সমাজে প্রচলিত আচার-ব্যবহার, অবস্থান প্রতিষ্ঠানকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে। উভয় ক্ষেত্রেই ভাষা তির্যক, শ্লেষাত্মক ও প্রবলভাবে কার্যকরী। চরিত্রায়নেও দক্ষতার পরিচয় আছে; যদিও 'একেই কি বলে সভ্যতা?' প্রহসনে মেকীত্ব লক্ষ্য করা যায়।


‘একেই কি বলে সভ্যতা?’য় কিছুটা মেকীত্ব পরিলক্ষিত। আসল তফাৎটি মাইকেলের গ্রহণের মধ্যে নিহিত। “সভ্যতা’য় যে শহুরে মেকী সভ্যতা ও অপসংস্কৃতির উপর আঘাত হেনেছেন তিনি, তাই দুটি সমান্তরাল অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দু'টি পাশাপাশি সমাজ ব্যবস্থার অভিন্ন কিছু অনুষঙ্গ তিনি “সভ্যতা”য় নিয়ে এসেছেন। যদিও এই গ্রহণের মাত্রা সীমিত ছিল। বলা যায়, এই নাটকে মাইকেলের পরিক্রমণের পরিধি ততটা বিস্তৃত নয় যতটা “বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ”এ। “বুড়ো সালিকের—” প্রেক্ষাপট গ্রামীণ এবং বক ধার্মিকতার সাথে সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের একটি অত্যন্ত বাস্তব এবং জটিল চিত্র তিনি এখানে উপস্থিত করেছেন। “সভ্যতা”র বাবু সমাজের মতিভ্রম ছিল মোটামুটি সাম্প্রতিক ঘটনা, দু’এক যুগ আগেও তা ততটা প্রবল ছিল না, কাজেই অতি সাম্প্রতিক এক সামাজিক স্খলনের উপর লিখিত প্রহসনটির গভীরতা গ্রাম-বাংলার চিরন্তন কিছু কু’প্রথার উপর লিখিত প্রহসন থেকে অধিক না হওয়াই স্বাভাবিক। “সভ্যতা”র প্রেক্ষাপটটি কোলকাতার বাইরে কোথাও স্থাপনযোগ্য নয়, কিন্তু “বুড় সালিকের” কাহিনী স্বয়ং কোলকাতাসহ বাংলার যে-কোনো অংশের জন্য প্রযোজ্য। এই নাটকে চরিত্র বেশি। ধনী-দরিদ্র, বকধার্মিক ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ভূস্বামী-প্রজা, ধনী আত্মীয়, গরীব কৃপাপ্রার্থী, হিন্দু মুসলমান ইত্যাদি মান ও অবস্থানগত সংঘাত এই নাটকে প্রচুর। তুলনায় “সভ্যতা”য় শুধু বৃদ্ধ-তরুণ, ধার্মিক নাস্তিক ছাড়া তেমন প্রবল প্রতিপক্ষসমূহ নেই, যাদের সংঘর্ষে নাটক গতিময় হবে। শেষ পর্যন্ত বাবাজীকেও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে পক্ষান্তরী হতে দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে “বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ”তে এক ধরনের সম্ভাবনাপূর্ণ কমেডি বা potential comedyর দেখা পাওয়া যায় যা ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’য় অনুপস্থিত। মাইকেল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার করেছেন।


‘একেই কি বলে সভ্যতা'র প্রেক্ষাপট ১৮৬০ সাল নাগাদ কোলকাতায়। মাইকেলের সমসাময়িক রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই নাটক সম্বন্ধে লেখেন: “ইয়ং বেঙ্গল' অভিধেয় নব বাবুদিগের দোষোদঘাটনই বর্তমান প্রহসনের একমাত্র উদ্দেশ্য এবং তাহা যে অবিকল হইয়াছে ইহার প্রমাণার্থে আমরা একমাত্র বলিতে পারি যে, ইহাতে যে সকল ঘটনা বর্ণিত হইয়াছে প্রায় তৎসমুদয়ই আমাদিগের জানিত কোন না কোন নব বাবু দ্বারা আচরিত হইয়াছে।” অর্থাৎ, বর্ণিত কাহিনীটি প্রতিনিধিত্বমূলক এবং কুপ্রথাসমূহ বহুব্যাপৃত। রাজেন্দ্রলাল মিত্র যে মতামত প্রকাশ করেছেন, তার থেকে বেশিদূর যাওয়া সমালোচকের পক্ষে সম্ভব নয়, অর্থাৎ প্রহসনটির কোন গভীর অর্থ বা প্রতীক চরিত্র খোঁজা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু মাইকেল এই সাদামাটা একটি ঘটনা বা কিছু ঘটনাকে এমন আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে এর ফলে একটি দীর্ঘ মেয়াদী আবেদন অনুভূত হয়। এই আবেদনের মূল চাবিকাঠি নিহিত কাহিনীর অন্তর্গত হাস্যরসে।


কাহিনীতে একটি plot আছে, যা অসম্পূর্ণ। অবশ্য কাহিনীর মেয়াদকালে অনুভূত প্রভাবটি বলা যায় সম্পূর্ণ। এই কাহিনীটির প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে মিথ্যাভাষণ; প্রতারণা, নাস্তিকতা, মদ্যপান, গণিকাসভোগ, দাম্পত্য প্রবঞ্চনা, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানাদির প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন ইত্যাদি। মাইকেলের কিছু চরিত্র যেমন পয়োধরী, নিতম্বিনী, বারবিলাসিনী এবং নব ও কালীবাবু সহ ইয়ং বেঙ্গলের নব্য বাবুদের সমতুল্য বাবুদের বেশ কটাক্ষ করা হয়েছে।


মাইকেলের 'একেই কি সভ্যতা?' প্রহসনে তির্যকতাবোধ বেশ প্রবল। নাটকব্যাপী একটি ধারাবাহিক ব্যঙ্গ প্রচেষ্টা দেখা যায়। আলোচ্য প্রহসনে দুই প্রজন্মের প্রতিনিধিদের মধ্যবর্তী শিক্ষা ও অভিব্যক্তির ফাঁকটুকু ফুটে ওঠেনি, উভয়ের সীমাবদ্ধতাও চোখে পড়ে। কালী ও নবর মিথ্যাভণিতা এবং চাটুকারিতা যেমন নিন্দনীয়, কর্তামশায়ের নির্বুদ্ধি বিশ্বাস ও তার বোকামি সমানভাবে নিন্দনীয়। মাইকেল সমাজের ভণ্ডামি ও বোকামি উভয়দোষের সমালোচনা করেছেন একই সঙ্গে। একেই কি বলে সভ্যতা' প্রহসনে মাইকেল কথোপকথনকে চরিত্র সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করেছেন। আলোচ্য প্রহসনটিতে নব্যবাবুদের মদের আসর, বারবিলাসিনীদের নৃত্যগীত হাস্যকর ভুল বোঝাবুঝি, রাস্তার দৃশ্য ও পরিক্রমণ দৃশ্য, সাধাসিধা চরিত্রকে নিয়ে কৌতুকদৃশ্য, পিতাপুত্রের সংঘাত ইত্যাদি মাঝে মাঝে অতিরঞ্জন ও অতিকথন দোষদুষ্ট মনে হয়। মদ্যপানের আসরগুলি অকারণে দীর্ঘায়ত। বাবাজীর পরিবর্তনও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। নববাবুদের বিদ্রুপ করার জন্য মাইকেল বাংলা ভাষায় ইংরেজির যে মিশ্রণ এনেছেন তাও অপ্রয়োজনীয়।


উপরি-উক্ত সমস্যাগুলি ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসনটিতে অনুপস্থিত। এই প্রহসনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের গভীরতা আছে এবং তার পরিধিও বিস্তৃত। হিন্দু বকধার্মিক এবং মুসলমান সরলপ্রাণা গৃহবধূকে এরূপ একটি সংঘাতের কেন্দ্রে স্থাপন করে মাইকেল নাটকে যুগপৎ প্রাণসঞ্চার করেছেন এবং তাঁর সামাজিক উদ্দেশ্যসমূহও সাধন করেছেন। এই মুসলমান চরিত্র ব্যবহার আপাতদৃষ্টিতে হাস্যরসের পাশাপাশি একজন বকধার্মিকের পাপ বাসনার সাথে একটি বুদ্ধিমতী গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রের সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ পুরোপুরি দেশজ। যশোর-খুলনা-চব্বিশ পরগনার আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের ফলে তা আরও অর্থপূর্ণ হয়েছে। মধুসূদন সচেতন শিল্পী ছিলেন বলে সামাজিক সমস্যাগুলি অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। ভূস্বামী, প্রজার সম্পর্ক, খাজনা আদায়ের কঠোর পন্থা, হতদরিদ্র লোকজনের বাস্তব অবস্থা ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বকধার্মিকতা ও দুশ্চরিত্রতার প্রসঙ্গটিকে প্রধান করে তুলেছেন। 'একেই কি বলে সভ্যতা?’র বিষয় সমকালীন; আর ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসনে চিরন্তন বিষয়বস্তুর সফল উত্তরণ ঘটিয়েছেন কাহিনী ও চরিত্র সৃষ্টিতে এবং প্রহসনের অনুষঙ্গ নির্মাণে।