“ক্ষমতা আছে আমাদের মগজে, অক্ষমতা আমাদের পকেটে"— কার উক্তি? এ কথার অর্থ কী | “সেই করেই তো তারা মুছে দিয়েছে আমার মনের ময়লা”—উক্তিটি কার? এ কথার তাৎপর্য কী?

“সরকার বাহাদুর শয়তানির জোরে দুনিয়া জিতে নিয়েছে, খ্রিস্টানির জোরে নয়”- উক্তিটি কার? উত্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।


আলোচ্য উক্তিটি সোহিনীর।

রবীন্দ্রনাথের ‘ল্যাবরেটরি' গল্পের সোহিনী অত্যন্ত স্পষ্টবাদী মেয়ে। নন্দকিশোরের কাছে কথা প্রসঙ্গে তৎকালীন সরকার সম্বন্ধে সে ওই মন্তব্য করেছিল।

সেই সময়ে পরাধীন ভারতবর্ষ চালাচ্ছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু তাদের পরিচালনার মধ্যে ধর্মের আশ্রয়ের চেয়ে অধর্মের প্রেরণাই ছিল বেশি। লোভ, ক্রোধের উদগ্রতায় সাধুতা হয়েছিল দূরে অপসৃত। রাজ্য রক্ষা করতে গেলে যে দাপট দেখানো আবশ্যক তা কোমল মন নিয়ে সম্ভব নয়। সোহিনী সেই দাপট, সেই অসহিষ্ণু মনোভাব সেই কাঠিন্য ও ক্রোধকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিতে চেয়েছে। বস্তুত, স্বাধীনতাকামী ভারতীয়দের ওপর ব্রিটিশ সরকার সেই সময় যে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছিল তা খ্রিস্টান ধর্মের বিরোধী। খ্রিস্টান ধর্মে যে মানবতা ও প্রেমের কথা প্রচার করা হয়ে থকে। ব্রিটিশ সরকারের কঠিন শাসনের দাপটে তার লেশমাত্র অনুভূত হত না। সেই অবস্থাকে বোঝাতেই সোহিনী উক্ত মন্তব্য করেছিল।



“পতিব্রতা স্ত্রী চাও যদি, আগে ব্রতের মিল করাও”—উক্তিটি কার? এই ব্রতের মিল কীভাবে সম্ভব?

আলোচ্য উক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ল্যাবরেটরি' গল্পের নন্দকিশোরের।

সাধারণভাবে পতিব্রতা স্ত্রী বলতে আমরা বুঝি পতির ধর্মকে নিজ ধর্ম রূপে পালনকারিনী স্ত্রী। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আলোচ্য গল্পে নন্দকিশোরের জবানিতে নতুন একটি কথা আমাদের শোনাতে চেয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন যে পতিব্রতা স্ত্রী মানে পতির ব্রতের সহব্রতী স্ত্রী। পতি যদি বিজ্ঞানী হয় স্ত্রীকেও বিজ্ঞান চর্চায় অনুরাগিনী কিংবা অনুধ্যানী হতে হবে। প্রায়শই দেখা যায় স্ত্রী মাত্রই রান্না-বান্না, কোটনা-কুটনি নিয়ে ব্যস্ত অন্যদিকে স্বামীর কর্ম তাঁর একার সাধ্য। কিন্তু যদি উভয়েই সমব্রতীর মানুষ হয় তবে একে অন্যকে বাড়িয়ে তুলতে অবশ্যই সহায়তা করবে। তাই নন্দকিশোরের মুখ দিয়ে তিনি ওই কথা বলিয়েছেন। উভয়ের ব্রতের মিল যদি সর্বক্ষেত্রে ঘটে তা হলে পতি বা স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক হয়ে দেশের উন্নতি সাধনে তৎপর হতে পারে। নচেৎ একে অন্যকে বুঝতে জানতে না পেরে অশান্তির আগুনে দগ্ধ হয়ে অসহনীয় জীবনযাপনে শরীর ও সময় নষ্ট করতে থাকবে।



“ক্ষমতা আছে আমাদের মগজে, অক্ষমতা আমাদের পকেটে"— কার উক্তি? এ কথার অর্থ কী?

আলোচ্য উক্তিটি নন্দকিশোরের।

বাঙালির বুদ্ধির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সকলেই জানে এদেশের যুবক-যুবতীর মগজের ক্ষমতা। কিন্তু মস্তিষ্ক যতই উর্বর ও সমৃদ্ধ হোক না কেন আমাদের দেশের অর্থভাণ্ডার অত্যন্ত অপুষ্ট। সেইজন্যে এদেশের উর্বর মস্তিষ্ক সমূহ বিদেশের উন্নতি সাধনে রত থাকে। এমনকি বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রেও বিদেশের ল্যাবরেটরিকেই আশ্রয় করতে হয়। এই সত্য “ল্যাবরেটরি” গল্পের অন্যতম চরিত্র নন্দকিশোর বুঝতে পেরে উক্ত মন্তব্য করেছিলেন। সেই সঙ্গে এই অভাবের অনুভব করার জন্যে তাঁর জীবনে উপার্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে অত্যাধুনিক একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিলেন।

তিনি জানতেন, দেশের উর্বর মস্তিষ্কগুলোকে যদি দেশের কাজে নিয়োজিত করা যায়, তা হলে, সভ্যতার পীঠস্থান য়ুরোপের তুলনায় বহুলাংশে শ্রীবৃদ্ধি হতে পারে আমাদের দেশে অনায়াসে। এই অনুভবের প্রেক্ষিতেই নন্দকিশোর ওই মন্তব্য করেছিলেন।



“উনি একটা পূজোর আলো পূজোর হাওয়ার মধ্যে ছিলেন"-কে কাকে এই কথা বলেছিল? কার সম্বন্ধে ও কেন এই কথা বলেছিল?

আলোচ্য কথাটি ল্যাবরেটরি গল্পের সোহিনী অধ্যাপক মন্মথ চৌধুরীকে বলেছিল।

সোহিনী এই কথা তার স্বামী নন্দকিশোর সম্বন্ধে বলেছিল।

নন্দকিশোর ছিলেন লন্ডন য়ুনিভার্সিটি থেকে পাশ করা এঞ্জিনিয়ার। জীবনে বহু রোজগার তিনি করেছিলেন। কিন্তু কোনোদিন বিলাস ব্যসনে অর্থের অপব্যয় তিনি করেননি। তাঁর নেশা ছিল বিজ্ঞানের। সেই অনুযায়ী একটা ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিলেন অত্যন্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে। তাঁর কাজে তিনি স্ত্রী সোহিনীকে নিয়েছিলেন সঙ্গী করে। তিনি বুঝতেন—এ দেশের লোকেদের মস্তিষ্ক থাকলেও অর্থের অভাবে বিজ্ঞান গবেষণা সম্ভব হয় না। তাই উপার্জিত টাকা দিয়ে ল্যাবরেটরি তৈরি করে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই উদ্যম, উদ্যোগ, কর্মপ্রাণতা যে কতটা নিষ্কলুষ ছিল, সে কথা বোঝাতেই সোহিনী উক্ত মন্তব্যটি করেছিল।



“সেই করেই তো তারা মুছে দিয়েছে আমার মনের ময়লা”—উক্তিটি কার? এ কথার তাৎপর্য কী?

আলোচ্য উক্তিটি সোহিনীর।

পাঞ্জাবী মেয়ে সোহিনীর স্বভাব চরিত্র খুব একটা নির্মল ছিল না। প্রেমের ভোগ বাসনায় শরীরী সুখাস্বাদন তার মনে কখনোই দ্বিধার উদ্রেক করেনি। তার স্বামী যখন ল্যাবরেটরিতে ছাত্রদের বিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন, সেই সময় সোহিনীকেও সঙ্গে নিতেন। তাতে সোহিনীর উপস্থিতি কিছু কিছু ছাত্রের মনকে চঞ্চল করে তুলতো। তারা সোহিনীর উদ্দেশ্যে প্রেমপত্রও পাঠাতো। 

প্রথম দিকে সোহিনীও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মেতে উঠত প্রেমের খেলায়। কিন্তু পরে যখন দেখতো যে, সেই সব যুবকের দৃষ্টি তার থেকেও তার অর্থভাণ্ডারের প্রতি অধিক লুব্ধ, তখনই নিজেকে সরিয়ে নিত সোহিনী। 

এই প্রক্রিয়াতেই সে চিনতে পেরেছিল সেই সমস্ত ছাত্রদের স্বরূপ এবং সেই সঙ্গে নিজের দুর্বলতারও অবসান হয়েছিল ক্রমে ক্রমে। এই কথা ব্যক্ত করতেই সোহিনী উক্ত মন্তব্য করেছিল।


“এইবার আমার মেয়ে আমার ল্যাবরেটরিকে বাঁচিয়েছে”—উক্তিটি কার? তার মেয়ে কীভাবে ল্যাবরেটরিকে বাঁচিয়েছিল?

আলোচ্য উক্তিটি সোহিনীর।

সোহিনী ল্যাবরেটরি তত্ত্বাবধানের জন্যে রেবতীকে নিযুক্ত করেছিল। ডক্টর অফ সায়েন্স রেবতী তুল্য যোগ্য কোনো ব্যক্তি সে সময় যে ছিল না এ কথা সকলেই স্বীকার করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞান গবেষণার কাজে রেবতী অতুলনীয় হলেও, তার মধ্যে পৌরুষের অভাব ছিল। তাই সহজেই সে সোহিনীর মেয়ে নীলার মোহচক্রান্তের শিকার হয়েছিল এবং মোহের বশে ল্যাবরেটরির খরচের জন্যে টাকা চেয়ে সেই টাকা নীলাদের জাগানী ক্লাবকে দিয়েছিল ও দামী রেস্তোরাঁয় ভোজের আয়োজন করেছিল।

নন্দকিশোর যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনি সোহিনীর প্রতি মোহগ্রস্তদের ল্যাবরেটরি থেকে বার করে দিতেন। এইভাবেই সোহিনীর মাধ্যমে যাচাই হয়ে যেত ছাত্রদের বিদ্যানুরাগ। কিন্তু সোহিনী চিনতে পারেনি রেবতীকে। মায়ের ব্রত ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে নীলা, রেবতীকে তার প্রতি অনুরক্ত করিয়েছিল। এর ফলে সোহিনী চিনতে পেরেছিল রেবর্তীর স্বরূপ। এরপর রেবতীকে সে বার করে দিয়েছিল ল্যাবরেটরি থেকে। এইভাবেই নীলা সেবার সোহিনীর ল্যাবরেটরি বাঁচিয়েছিল।