“সে দেখিয়ে দেবে, রাজ্য শাসন লাঠিবাজি নয়; এও একটা আর্ট”—কার কথা এখানে বলা হয়েছে? উদ্দিষ্টের পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করো।

“তবে অঞ্জনগড় থেকে দয়াধর্ম একেবারে নির্বাসিত নয়”– উৎস নির্দেশ করো। অঞ্জনগড়ের দয়াধর্মের পরিচয় দাও।


আলোচ্য অংশটি সুবোধ ঘোষের ‘ফসিল' গল্প থেকে উদ্ধৃত।

নেটিভস্টেট অঞ্জনগড়ে মহারাজার শাসনে বর্তমানকালে প্রাচীনকালের মতো অপরাধীকে শূলে চড়ানো হয়। না, তার বদলে তাকে উলঙ্গ করে মৌমাছি লেলিয়ে দেওয়া হয়। সাড়ে আটষট্টি বর্গমাইল এই স্টেটে কুর্মি আর ভীল প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্যে রাজপুত বীরের বল্লম আর লাঠির মারে ক্ষাত্রবীর্যের স্ফুলিঙ্গ বৃষ্টি হয়। এই অশান্তির কারণে প্রজারা বেহায়ার মতো চাষ করে। কিন্তু চাষের অধিকাংশ ভুট্টা, যব, জনার যায় মহারাজের রাজ-আস্তাবলে লালিত ঘোড়াদের সেবায়। এই দেবতুল্য পশুদের ওপর মহারাজার অপার মমতা তাই এদের ভূষি খাওয়ানো যায় না। প্রজারা তাই চাষ করে, বিদ্রোহও করে, মারও খায়।

তাই বলে অনগড় থেকে দয়াধর্ম একেবারে নির্বাসিত হয়নি। প্রতি রবিবারে কেল্লার সামনে দুঃস্থদের চিড়ে আর গুড় বিতরণ করা হয়। রাজার জন্মদিনে রামলীলার গান হয়, প্রজারা নিমন্ত্রণ পায়। লাঠি সহযোগে রামলীলা আর চিঁড়ে গুড়ের আশীর্বাদ মহারাজা প্রায়ই করে থাকেন।



“সত্যিই নতুন প্রাণের জোয়ার এসেছে অঞ্জনগড়ে”–উৎস নির্দেশ করো। নতুন জোয়ার কীভাবে এসেছে ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য অংশটি সুবোধ ঘোষের 'ফসিল' গল্প থেকে উদ্ধৃত।

নেটিভস্টেট অঞ্চনগড়ের রুক্ষ মাটিতে প্রজারা বেহায়ার মতো ভুট্টা, যব, জনার চাষ করে, বিদ্রোহ করে মার খেয়ে কালযাপন করতো। এই অঞ্জনগড়ের দরবারে ল-এজেন্ট হিসেবে আদর্শবাদী মুখার্জী আসার পর এখানকার অনেক পরিবর্তন ঘটল। সর্বপ্রথম লাঠির যুগ অপসৃত হল। তারপর অঞ্জনগড়ে অন্তভৌম সম্পদ আবিষ্কৃত হল। বোঝা গেল এই শুষ্ক অঞ্জনগড় প্রকৃতই রত্নগর্ভ। গ্রানিটে গড়া এর পাঁজরের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অভ্র আর অ্যাসবেস্টসের স্তূপ। লাঘ লাখ টাকায় কলকাতার মার্চেন্টবাবুরা অঞ্জনগড়ের কাঁকুরে মাটি ডাঙার ইজারা নিল। শ্রী ফিরে গেল অঞ্জনগড়ের। মাইনিং সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠা হল। ধীরে ধীরে গড়ে ও সেজে উঠল খনি অঞ্চল মার্বেল, মোজাইক, কংক্রীট আর ভিনিসিয়ান শার্শির বিচিত্র পরিসজ্জায় সজ্জিত হল কেল্লাও। রাজ-আস্তাবলে শোনা যেতে লাগল নতুন আনা আইরিশ পনির অবিশ্রাম লাথালাথির শব্দ। পাওয়ার হাউস চলতে লাগল ধক্ ধক্ শব্দে, পাম্প বসল, বড়ো বড়ো সড়ক, ক্লাব, বাংলো, কেয়ারি করা ফুলের বাগান, জিমখানায় ঝলমল করে উঠল কুর্মি ভীলেদের নেটিভ অঞ্জনগড়। কুর্মি কুলিরা দলে দলে যোগ দিল খনির কাজে। নগদ মজুরি পায়, মুরগী বলি দেয়, হাঁড়িয়া খায় আর নিত্য সন্ধ্যায় মাদল ঢোলক পিটিয়ে সরগরম করে রাখে খনি অঞ্চল। এইভাবে নতুন প্রাণের জোয়ার এল অঞ্জনগড়ে।



“সে দেখিয়ে দেবে, রাজ্য শাসন লাঠিবাজি নয়; এও একটা আর্ট”—কার কথা এখানে বলা হয়েছে? উদ্দিষ্টের পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করো।

আলোচ্য অংশে অঞ্জনগড়ের ল-এজেন্ট মুখার্জীর কথা বলা হয়েছে।

সাড়ে আটষট্টি বর্গমাইল নেটিভস্টেট অঞ্জনগড়ের মহারাজা রাজ্যশাসন বলতে বোঝেন কুর্মি আর ভীল প্রজাদের ওপর রাজপুত বীরের বল্লম আর লাঠির মারে ক্ষাত্রবীর্যের স্ফুলিঙ্গ বৃষ্টি। এখানকার প্রজারা বেহায়ার মতো চাষ করে। কিন্তু ফসল তাদের ঘরে ওঠে না। চাষের অধিকাংশ ভুট্টা, যব, জনার যায় মহারাজের রাজ-আস্তাবলে লালিত ঘোড়াদের সেবায়। এই দেবতুল্য পশুদের ওপর মহারাজের অপার মমতা তাই এদের ভূষি খাওয়ানো যায় না। প্রজারা তাই বিদ্রোহও করে, মারও খায়। এই রীতিতেই তারা অভ্যস্ত হয়ে সাত-আট পুরুষের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে অঞ্জনগড়ে। মহারাজা লাঠির জোরে খাজনা আদায় করতেন। প্রজারা তাই বিদ্রোহও করে, মারও খায়। এই রীতিতেই তারা অভ্যস্ত হয়ে সাত-আট পুরুষের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে অঞ্জনগড়ে। মহারাজা লাঠির জোরে খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু নেটিভস্টেটের আয় নিতান্তই নগণ্য।

অঞ্জনগড়ের ল-এজেন্ট হিসেবে মুখার্জী এসে এর অন্তর সম্পদ আবিষ্কার করে কলকাতার মার্চেন্টদের হাতে এর কাঁকুরে জমির ইজারা দিল লাখ লাখ টাকায়। ক্রমশ জেগে উঠল অনগড় নতুন সাজে। মুখার্জীর পরিকল্পনামাফিক ক্রমে ক্রমে অঞ্জনগড়ের জমির রুক্ষ মাটিতে অন্ত্বনার জলের ঢালটা বইয়ে দিয়ে আউস, আমন ও রবির চাষ হবে, উঠবে আলু, তামাক, আখ, যব আর গম। প্রজারা মাথা পিছু এক বিঘা করে জমি পাবে বিনা সেলামিতে। তারপর একটা ট্যানারী, একটা কাগজের মিল আর ব্যাঙ্ক। অবশেষে একটা স্কুল। বর্তমানে নেটিভস্টেটের রাজকোষের অকিঞ্চনতা এখন আর নেই। এই পরিকল্পনামাফিক রাজ্য চালিয়ে মুখার্জী দেখাতে চায় রাজ্যশাসন লাঠিবাজি নয়; এও একটা আর্ট।



“আমি একবার ভেতরে ভেতরে অনুসন্ধান করি, আসল ব্যাপারটা কি”–কে কাকে এই কথা বলেছিল? কেন বলেছিল?

আলোচ্য কথাটি সুবোধ ঘোষের 'ফসিল' গল্পের ল-এজেন্ট মুখার্জী মহারাজাকে বলেছিল। 

মহারাজা এতদিন দাপটের সঙ্গে রাজ্য শাসন করেছেন। প্রজারা জানতো লাঠি আর বল্লম ছাড়া মহারাজা কথা বলেন না। সেই জায়গায় মুখার্জী আসার পর অঞ্জনগড়ে লাঠি-তন্ত্র বন্ধ হয়েছে। স্টেটের শ্রী ফিরে গেছে। খনিতে কাজ জুটেছে কুর্মি কুলিদের। তারা নগদ পয়সা পাচ্ছে। কুলিদের সর্দার দুলাল মাহাতো তাদের বুঝিয়েছে নগদ মজুরী কি জিনিস। তারা মহারাজের কাছে পত্র পাঠিয়ে সুশাসন দাবি করেছে। আইনসঙ্গতভাবে সরকারের প্রাপ্য নগদ মজুরী তারা দিতে চায়। তাদের চাষের ভুট্টা, জনার যা ফলবে তার ওপর তসীলদারের জুলুম যেন বন্ধ হয়।

এতদিন যে সব প্রজা মাথা তুলে তাকাতে সাহস করত না, তারা যখন মহারাজের কাছে দাবি জানাতে শুরু করল তখন স্বভাবতই মহারাজের সম্মানে আঘাত লাগল। তার ওপর মহারাজার সাধের ঘোড়াগুলোর জন্যে লুঠ করে আনা ভুট্টা, জনার প্রজারা দেবে না বলে ঘোষণা করায় এবং সেই সঙ্গে মাইনিং সিন্ডিকেটও সুমীমাংসা আশা করে পত্র দিয়ে সুকৌশলে চাপ সৃষ্টি করায় ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি দুলাল মাহাতোর মুখটা কেটে নিয়ে আসার হুকুম দিতে গেলে মুখার্জী তখন এই কথা বলে তাঁকে শান্ত করেছিল।



“ব্যাঙের লাথি আর সহ্য হয় না, মুখার্জী"—উৎস নির্দেশ করো। বক্তা কে? এই কথা বলার কারণ কী?

আলোচ্য অংশটি সুবোধ ঘোষের 'ফসিল' গল্প থেকে উদ্ধৃত।

আলোচ্য উক্তিটি নেটিভস্টেট অঞ্জনগড়ের মহারাজার। অঞ্জনগড়ের অন্তর সম্পদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর, রাজকোষের আয় বেড়েছে, স্টেটও নতুন সাজে সেজেছে। কিন্তু মহারাজের দাপট কমে গেছে। খনি অঞ্চলের মার্চেন্টদের সহায়তায় এখানকার প্রজাদেরও সাহস বেড়ে গেছে। এতদিন যারা রাজার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস করত না, তারা অসঙ্কোচে তাদের দাবি জানাচ্ছে। নগদ মজুরির জন্যে সমবেত হয়ে মিটিং করছে। এই খবর পেয়ে কুর্মি কুলিদের সর্দার দুলাল মাহাতোকে ডেকে মহারাজা সতর্ক করে দিয়েছিলেন। মাইনিং সিন্ডিকেটেও চিঠি দিয়ে জানিয়ে ছিলেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন কোনো কুলিকে খনির কাজে লাগানো না হয়। কিন্তু মাইনিং সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে মি গিবসন জানিয়েছেন, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার আগে আর নতুন কোনো শর্ত তারা মানতে পারবে না। এই কথায় রেগে গিয়ে মহারাজ এই উক্তি করেছিলেন।



“এ সব কাজে একটু শক্ত হতে হয় মুখার্জী”—উৎস নির্দেশ করো। এ কথা কে বলেছিল? কোন কাজের কথা এখানে বলা হয়েছে?

আলোচ্য অংশটি সুবোধ ঘোষের 'ফসিল' গল্প থেকে উদ্ধৃত।

আলোচ্য উক্তিটি অঞ্জনগড়ের মাইনিং সিন্ডিকেটের মিঃ গিবসনের।

কুলিদের নিয়ে খনির কাজে নেমেছিল মাইনিং সিন্ডিকেট। তাদের মজুরী বরাদ্দ দিলেও তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা ছিল উদাসীন। সীমের ছাদ যথাযথভাবে টিম্বার না করার ফলে খনিতে ধস নেমে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মার্চেন্টরা হাজিরা খাতাটা পুড়িয়ে ফেলে নতুন করে খাতা তৈরি করার কথা ভাবছে। ঠিক সেই সময়, মহারাজের এস্টেটেও অশান্তি দেখা দিয়েছে। কুর্মি প্রজারা ঘোড়ানিমের জঙ্গলে বিনা টিকিটে লকড়ি কাটছিল। ফরেস্ট রেঞ্ঝার বাধা দেয়। রেখার আর গার্ডদের কুর্মিরা তাড়িয়ে দিলে ফৌজদার কুর্মিদের ওপর গুলি চালায়। তাতে বাইশ জন মারা যায়, পঞ্চাশ জনের ওপর ঘায়েল হয়। এই দুটো খবর কাগজের লোকেরা জানতে পারলে স্ক্যান্ডেল ছড়াবে। মুখার্জীর কাছে মহারাজ পরামর্শ চাইলে, মুখার্জী বলেছিল, 'সব ছেড়ে দিয়ে মাহাতোকে আগে আটক করে ফেলুন।। এই বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মহারাজা ও মার্চেন্টরা মিলে মাহাতোকে খুন করে তাকেও ধসে যাওয়া খনির গর্ভে ফেলে দেয়। এই খবর শুনে মুখার্জী মুখ ঢেকে বসে পড়লে মিঃ গিবসন তাকে সান্ত্বনা দিতে ঐ কথা বলেছিল।