“যে মানুষ বাড়ির অথচ বাড়ির নহে, তাহার মতো ভাগ্যকর্তৃক পরিহাসিত আর কে আছে। পথের ভিক্ষুকও নহে।”—উৎস নির্দেশ করে মন্তব্যটির কারণ বর্ণনা করো।

হালদার পরিবারের অশান্তির সূত্রপাতের কারণটি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।


স্ত্রী কিরণকে বনোয়ারি অত্যন্ত ভালোবাসতো। স্ত্রীকে খুশি করার জন্যে যে নানা উপায় উদ্ভাবন করে, দুর্মূল্য দ্রব্যাদি উপহার দিয়ে সে তার মন অধিকার করতে চাইত। কিন্তু কিরণের মধ্যে বনোয়ারির এই আবেগ ধরা পড়ত না। ফলে বনোয়ারির স্ত্রীকে খুশি করার উপায় অন্বেষণের স্পৃহা আরো বেড়ে যেত। বনোয়ারিলালের এই দুর্বলতার সূত্র ধরেই হালদার পরিবারের মধ্যে অশান্তি প্রবেশ করেছিল।

স্ত্রীর প্রতি তার এই ভালোবাসার কথা জেনেই একদিন ভিটে বাড়ির প্রজা মধুকৈবর্ত তার স্ত্রী সুখদাকে কিরণের কাছে পাঠিয়েছিল, তার ঋণ মকুব করার আর্জি জানাতে। কেন না, সে জানতো হালদার পরিবারের বিষয় রক্ষক নীলকণ্ঠের সঙ্গে বনোয়ারির বনিবনা হচ্ছিল না। তাই নীলকণ্ঠকে উপেক্ষা করে বনোয়ারির শরণাপন্ন হয়ে নিজের ভিটে মাটি রক্ষা করার উপায় নির্ধারণ করেছিল সে। সুখদা কিরণের কাছে তাদের ঋণ মকুবের প্রার্থনা জানালে কিরণ তাকে বিষয়সম্পত্তির ব্যাপারে নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিল, কিন্তু আড়াল থেকে বনোয়ারি তাদের কথা শুনে, কিরণের মনে বিজয়গর্ব ধ্বনিত করার অভিপ্রায়ে নীলকণ্ঠের তথা হালদার পরিবারের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। এতদিন এ নিয়ে তার নিজের অভিযোগ কম ছিল না। কর্তার অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তির মালিক সে হবে জেনেও, যৌবনে স্ত্রীর মনোরজুনার্থে স্বেচ্ছায় কিছু খরচ করার অধিকার তার নেই বলে পিতা মনোহরলালের কাছে বহুবার অনুযোগ করেছে। কিন্তু কোনোদিনই তাতে কোনো ফল হয় নি। এবারে তাই সরাসরি বিরুদ্ধাচারে মেতে উঠেছিল। এই ভাবেই হালদার পরিবারে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল।


“ঘড়ি এবং বন্দুকটা যে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয় হইয়াছে তাহা ব্যর্থ হইল না।”-উৎস নির্দেশ করো। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য মন্তব্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হালদারগোষ্ঠী' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

বনোয়ারি সবচেয়ে সুখী হতো যদি স্ত্রীর কাছে নিজের ধনশক্তির নিদর্শন দেখাতে পারত। কিন্তু কর্তার ব্যবস্থাপনায় তা অসম্ভব। যে সম্পত্তি একদিন তার হাতে আসবে, আজ তার থেকে অংশ বিশেষ নিতে হলেও বাড়ির বেতনভুক আমলা নীলকণ্ঠের দাক্ষিণ্যের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এই জন্যে নীলকণ্ঠের ওপর বনোয়ারির আক্লোশ ছিল। তার ওপর কিরণ যখন মধুকৈবর্তের স্ত্রী সুখদার ঋণ মকুবের আর্জির উত্তরে করুণকণ্ঠে তাদের অপারগতার কথা জানালো, তখন বনোয়ারির আর সহ্য হল না। স্ত্রীর কাছে নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দেবার জন্যে বনোয়ারিলাল নিজের বন্দুক ও ঘড়ি কলকাতায় বিক্রি করে এসে, সেই টাকা দিয়ে ভিটে বাড়ির প্রজা মধুকৈবর্তকে ঋণের দায় থেকে উদ্ধার করতে প্রয়াসী হয়েছে। এই প্রয়াসের প্রথম সোপানে তার বিজয় ঘোষিত হয়েছে হালদার বাড়ির আমলা নীলকণ্ঠের ছয়মাসের মেয়াদে হাজত বাসের মধ্যে দিয়ে। কর্তা মনোহরলাল অনেক অর্থ ব্যয় করেও নীলকণ্ঠকে রক্ষা করতে পারেন নি। তাই ঘড়ি বন্দুক বিক্রির টাকাটা যে বিফলে যায়। নি এই কথাই কটাক্ষ করে এখানে বলা হয়েছে।


“যে মানুষ বাড়ির অথচ বাড়ির নহে, তাহার মতো ভাগ্যকর্তৃক পরিহাসিত আর কে আছে। পথের ভিক্ষুকও নহে।”—উৎস নির্দেশ করে মন্তব্যটির কারণ বর্ণনা করো।

আলোচ্য মন্তব্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হালদারগোষ্ঠী' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

আত্মমর্যাদা সম্পন্ন বনোয়ারি, হালদার পরিবারের একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধাচরণ করে সকলের বিরাগভাজন হয়েছিল। বিশেষ করে তার পিতা মনোহরলাল ও স্ত্রী কিরণের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পায় নি। উল্টে সকলের বিরাগভাজন হয়ে সে স্বতন্ত্র হয়ে পড়েছে। সেই অবস্থায় এই পরিবারে তার নিজস্বতা বলে কিছু ছিল না। এই প্রজন্মের বড়োবাবু অর্থাৎ পরিবারের সর্বময় কর্তা হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সেখানে সে বঞ্চিত হয়েছে চিরাচরিত প্রথার বিরুদ্ধাচার করে। মনোহরের মৃত্যুর পর তার কর্তৃত্ব করার সম্ভাবনা মনোহর নিজেই সমূলে বিনাশ করে দিয়ে গেছেন—সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করে। কেবলমাত্র মাসে মাসে দুশো টাকার পেনশন বরাদ্দ করে। সে বাড়ির জ্যেষ্ঠ অথচ তার কোনো মতামত মূল্যহীন। এই অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়েই গল্পকার উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।