“দেখলাম সে নবাবী মেজাজের ঐতিহ্যটা গুণবান্ মহীয়ান্ অরাতিদমন মহারাজ এখনও বজায় রেখেছেন”–উৎস নির্দেশ করো। নবাবী মেজাজের কী নমুনা গল্পকথক দেখেছেন?

“দেখলাম সে নবাবী মেজাজের ঐতিহ্যটা গুণবান্ মহীয়ান্ অরাতিদমন মহারাজ এখনও বজায় রেখেছেন”– উৎস নির্দেশ করো। নবাবী মেজাজের কী নমুনা গল্পকথক দেখেছেন?


আলোচ্য অংশটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টোপ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

রামগঙ্গা এস্টেটের রাজাবাহাদুর আর. চৌধুরীর এক জন্মবাসরে কল্পকথক ঈশ্বরগুপ্তের অনুপ্রাস চুরি করে প্রশস্তি রচনা করেছিলেন। সেই থেকে রাজাবাহাদুর তাঁকে প্রায়ই চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতেন। আর মাঝে মাঝে কিছু না কিছু উপহার দিতেন। একবার সামান্য উপলক্ষ্যে একটা সোনার হাতঘড়ি দিয়েছিলেন। গল্পকার পড়েছেন—আকবরের সভাসদ আবদুর রহিম খানখানান হিন্দী কবি গঙ্গের চার লাইন কবিতা শুনে চার লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন। আর রামগঙ্গা এস্টেটের রাজাবাহাদুর দিনদুনিয়ার মালিক না হলেও নবাবী মেজাজ তাঁর মধ্যে বিলক্ষণ বিদ্যমান ছিল বলেই গল্পকারের চার লাইনের কবিতা শুনে তাঁকে কারণে অকারণে মূল্যবান দ্রব্যাদি দান করতেন। হঠাৎ হঠাৎ মূল্যবান দ্রব্যাদি সহ যে রকম রাজানুগ্রহ লাভ গল্পকার করেছেন, সেই দান ও দাক্ষিণ্য প্রবণতাকেই তিনি নবাবী মেজাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন।



“বনের রূপ দেখতে দেখতে চলেছি। মাঝে মাঝে ভয়ও যে না করছিল এমন নয়।”—উক্তিটি কার? তাঁর মাঝে মাঝে ভয় করছিল কেন?

আলোচ্য উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টোপ' নামক গল্পের গল্পকথকের।

রামগঙ্গা এস্টেটের রাজাবাহাদুর এন. আর. চৌধুরীর আমন্ত্রণে গল্পকথক তাঁর শিকারের সহযাত্রী হতে রাজাবাহাদুরের ফরেস্ট বাংলোয় যাচ্ছিলেন। সকালবেলা ট্রেন থেকে নেমে, রাজাবাহাদুরের পাঠানো রোলস্ রয়েস্ গাড়িতে চেপে বনের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় সবুজের শালবনের আড়ালে আড়ালে চা বাগানের বিস্তার দেখে তিনি অভিভূত হচ্ছিলেন। কিন্তু ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হবার আশঙ্কায় এবং বুনো জানোয়ারের আবির্ভাব আশঙ্কায় তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। কারণ, গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসা করে তিনি জেনেছিলেন এই জঙ্গলের মধ্যে বাঘ, ভালুক, অজগর প্রভৃতি হিংস্র জন্তু আছে। এই জন্যেই গল্পকথক বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ভয়ও পাচ্ছিলেন।



“একেবারে রাজকীয় কারবার কে বলবে এটা কলকাতার গ্রান্ড হোটেল নয়”–উৎস নির্দেশ করো। কোন প্রসঙ্গে কে এই মন্তব্য করেছিলেন?

আলোচ্য অংশটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টোপ' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

গল্পকথক রামগঙ্গা এস্টেটের রাজাবাহাদুর এন. আর. চৌধুরীর আমন্ত্রণে তাঁর শিকারের সঙ্গী হতে ফরেস্ট বাংলোয় এসে স্নান করবার জন্যে বাথরুমে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সমস্ত রকমের আধুনিক ও বিলাসবহুল ব্যবস্থা দেখেছিলেন। এমনকি জঙ্গলের মধ্যেও সেই বাথরুমে ছিল বেশ বড় একটা বাথটব এবং ঝাঝরি। বাথরুমে লাগানো ছিল তিন চার খানি ব্র্যাকেটে সদ্য-পার্ট-ভাঙা নতুন তোয়ালে, তিনটি সোপ কেসে তিন রকমের নতুন সাবান, র‍্যাকে দামী দামী তেল, লাইম জুস। এমন কি সেই বাথরুমে ধারাস্নানের ব্যবস্থাও ছিল। কলকাতার বিলাসবহুল হোটেলে যেমন ব্যবস্থা থাকে প্রায় সেই ব্যবস্থাই সেখানে করে রেখেছিলেন রাজাবাহাদুর। স্নানের পর ড্রেসিং রুমে গিয়ে দেখলেন, ‘পৃথিবীর যা কিছু প্রসাধনের জিনিস কিছু আর বাকি নেই এখানে।' নির্জন জঙ্গলের মধ্যে অত আয়োজন দেখে গল্পকথক এই মন্তব্য করেছিলেন।



“কিন্তু কী আশ্চর্য-জঙ্গল যেন রসিকতা শুরু করেছে আমাদের সঙ্গে”–উৎস নির্দেশ করো। জঙ্গল কী ভাবে রসিকতা করেছিল?

আলোচ্য অংশটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

গল্পকথক রামগঙ্গা এস্টেটের রাজাবাহাদুর এন. আর. চৌধুরীর আমন্ত্রণে তাঁর শিকারের সঙ্গী হতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন রাজাবাহাদুরের ফরেস্ট বাংলোয়। আসার সময় জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর ভয়ে তিনি উৎকণ্ঠিত ছিলেন। সেই জঙ্গলকে রাজাবাহাদুর— তরাইয়ের সবচেয়ে হিংস্ৰ জঙ্গল—আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজাবাহাদুরের সঙ্গে যেদিন রাত্রে শিকার করতে বেরিয়েছিলেন, সে রাত্রি থেকে কোনো জন্তুরই দেখা পাচ্ছিলেন না। বাঘ ভালুকের তো নয়ই, বুনো শুয়োরের পর্যন্ত দেখা মিলছিল না। এমন কি পরের দিন সকাল থেকে দু চারটে বুনো মুরগী ছাড়া হরিণের পর্যন্ত দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। পর পর তিন দিন এই একই অবস্থা হওয়ায় গল্পকথক এই ঘটনাকে জঙ্গলের রসিকতা আখ্যা দিয়েছিলেন।



“রাজাবাহাদুর কীসের টোপ আপনার! কী দিয়ে আপনি মাছ ধরলেন?”—উক্তিটি কার? রাজাবাহাদুরের টোপটি কি ছিল?

আলোচ্য উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টোপ' নামক গল্পের গল্পকথকের।

সে রাত্রে রাজাবাহাদুর মাছ শিকারের নাম করে মস্ত একটা রয়্যাল বেঙ্গল মেরেছিলেন। কিন্তু শিকার যত বড়োই হোক, সে শিকারের চেয়ে রাজাবাহাদুরের হিংস্রতা অতি ভয়ঙ্কর রূপে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজের কীর্তির ধ্বজা ওড়ানোর জন্য একটা মানব শিশুকে শিকারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলোর কাঁপারের কাছে মানুষ হতে থাকা পিতৃমাতৃহীন যে শিশুটিকে সকালে তিনি আদর করেছেন, পকেট থেকে পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে শিশুদলের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করে পয়সা কুড়ানোর ভঙ্গি দেখে মজা পেয়েছেন, অন্যান্য দিনেও লাউঞ্ঝের উপর থেকে রুটির টুকরো ফেলে দিয়ে যে শিশুর কাড়াকাড়ি করে খাওয়া দেখে তিনি মজা করেছেন, সেই-শিশুটিকেই তিনি মাছ শিকারের অভিধায় বাঘ শিকারের টোপ করেছিলেন।