“বালিকার চিরনীরব হৃদয়ের মধ্যে একটা অসীম ক্রন্দন বাজিতে লাগিল—অন্তর্যামী ছাড়া আর-কেহ তাহা শুনিতে পাইল না”—উৎস নির্দেশ করে ব্যাখ্যা করো।

“তাহার মা তাহাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন”–উৎস নির্দেশ করো। কার মা কাকে ও কেন ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন?

আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সুভা' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

সুভা ওরফে সুভাষিণীর মা সুভাকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন। এই দেখার মধ্যে সুভার কোনো ত্রুটি ছিল না। সুভা ছিল মূক। এবং পরিবারস্থ অন্যান্যদের আচরণে বা অকারণ করুণায় সে বুঝেছিল যে, সে বিধাতার অভিশাপস্বরূপ পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাই নিজেকে সে সাধারণের চোখের আড়ালে রাখতেই বিশেষ যত্নবান ছিল। সুভার এই অপূর্ণতা তার মাকে বিশেষ করে আঘাত করতো। কেননা, প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী মা নিজের পুত্র অপেক্ষা কন্যাকে নিজের অংশরূপে দেখেন। তাই সুভার অসম্পূর্ণতাকে তিনি নিজের লজ্জার কারণ বলে মনে করতেন। সেই জন্যেই সুভাকে তাঁর নিজের গর্ভের ত্রুটি রূপে দেখতেন।



“সে অসময়ে তাহার এই মূক বন্ধুটির কাছে আসিত"—উৎস নির্দেশ করো। এখানে কার কথা বলা হয়েছে? সে কেন কোন বন্ধুর কাছে আসত?

আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সুভা' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে সুভার কথা বলা হয়েছে।

সুভা দিনে নিয়মিত তিনবার করে গোয়াল ঘরে সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামক দুটি গোরুর কাছে আসত। এই দুটি গোরু ছিল তার বন্ধুর মতো। তাই বাড়িতে যখন কোনো কঠিন কথা শুনতো তখনই সে এই দুই বন্ধুর কাছে এসে জানাতো। সুভা মুক, তার বন্ধু দুটিও তদ্রূপ। কিন্তু শুভা তাদের গলা জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষে যখন তার মনবেদনার কথা অভিব্যক্ত করতো, তখন এই দুই বন্ধুও সহিষ্ণুতাপূর্ণ বিষাদশাস্ত দৃষ্টি দিয়ে সুভার মনে বেদনার কথা অনুমান করতে পারতো এবং সুভার বাহুতে শিং ঘষে ঘষে নির্বাক ব্যাকুলতার সঙ্গে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করতো। বেদনা বিধুর মনে সান্ত্বনা লাভের আশায় এবং দুঃখী-মনের ভার অপনোদনের জন্যে সুভা তার এই বন্ধুর কাছে অসময়ে আসতো।



“বালিকার চিরনীরব হৃদয়ের মধ্যে একটা অসীম ক্রন্দন বাজিতে লাগিল—অন্তর্যামী ছাড়া আর-কেহ তাহা শুনিতে পাইল না”—উৎস নির্দেশ করে ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সুভা' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

মূক বালিকা সুভা মানুষের মতো কথা বলতে পারে না। কিন্তু অন্যান্য মানুষের কথা বা অভিপ্রায় সে সহজেই বুঝিতে পারে। তাই তার অপূর্ণতার বেদনা অব্যক্ত থাকে সাধারণ মানুষের কাছে। সে কথা বলতে পারে না বলেই নিজের অপূর্ণতার কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। সে ঠক প্রবঞ্জক নয়। তাকে যখন বিবাহের জন্যে দেখতে এসেছিল, তখন তার অপূর্ণতার কথা সে মুখে বলতে না পারলেও চোখের জলের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাসর্বস্ব সাধারণরা মূক বালিকার সেই কথা বুঝতে পারেনি। অবশেষে বিবাহের পর বোবা বউকে ত্যাগ করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু সুভা যে কাউকেই প্রবঞ্চনা করেনি সে কথা কাউকে বোঝাতে পারল না। সকলেই তার অসম্পূর্ণতার জন্যে প্রকারান্তরে তাকেই দায়ী করতে লাগল।