"এখানো যেন সে মাটিতে আঁচল লুটাইয়া উঠানময় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে”–উৎস নির্দেশ করো। কার কথা বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?

'তোমার ছেলের বুদ্ধি শেষ পর্যন্ত বলদ দিয়ে টানতে হবে দেখছি' – কে কাকে এই কথা বলেছিলেন? এ কথা বলার কারণ কী?

আলোচ্য কথাটি জগদীশ গুপ্তের "পয়োমুখম" নামক গল্পের কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত তাঁর স্ত্রী মাতঙ্গিনীকে বলেছিলেন।

কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত সেনশর্মা চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে ভূতনাথকে আয়ুর্বেদ শেখাতে। তাই কলাপের পর সংস্কৃত ব্যাকরণ মুগ্ধবোধ পড়াতে শুরু করেছিলেন। কারণ কৃষ্ণকান্ত জানতেন—আয়ুর্বেদ খাঁটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। সংস্কৃত ব্যাকরণের পর সাহিত্য, কাব্য, অলঙ্কার, ন্যায় প্রভৃতির গণ্ডী পার করে তবে ধরা যায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রকে। পুত্রকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে তাই তিনি ব্যাকরণ দিয়েই শুরু করেছিলেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ পাঠের আগে সংস্কৃত ব্যাকরণ পড়ার আগ্রহ স্থূলমেধী ভূতনাথের ছিল না। তার একটাই কথা এ গাছের পাতা, ও গাছের ফুল, এ-টার ছাল, ও-টার কুঁড়ি এই নিয়েই তো কবরেজের কারবার; তা করতে মুগ্ধবোধ পড়ে কি হবে?? ভূতনাথের এই যুক্তির জন্যে তাচ্ছিল্য করে কৃষ্ণকান্ত ভূতনাথের মা মাতঙ্গিনীকে এই কথাগুলি বলেছিলেন।


“শুধু সনাতন শাস্ত্রীয় প্রথায় নরকনিবারক পুত্র লাভ"- উৎস নির্দেশ করে উদ্ধৃত কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য অংশটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত। 

কবিরাজ কৃষ্ণকান্তের ছেলে ভূতনাথ কবিরাজীর উপক্রমণিকা অধ্যয়ন করতে করতে বিবাহ করে নিল। শাস্ত্রমতে বিবাহের কারণ দেখানো হয়ে থাকে ‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা’। অর্থাৎ কেবলমাত্র পুত্র উৎপাদনের জন্যেই জীবনে বা ঘরে ভার্যাকে আনা হয়। পুত্র উৎপাদনের অন্যতম কারণ হল, পুত্র পুণ্যক নরক থেকে পিতৃপুরুষকে মুক্তি দেয়। তাই পুত্রকে বলা হয় 'নরকনিবারক।' আলোচ্য গল্পে ভূতনাথ একটি নির্বোধ ছেলে বলতে যা বোঝায় তাই। তার মেধা কম। আঠারো-উনিশ বছর বয়সেও সে বিদ্যা শিক্ষা তেমনভাবে আয়ত্ত করতে পারেনি। অর্থসংস্থানের কোনো উপায় নির্ধারণ করতে পারেনি। অথচ বিয়ের বাজারে সে সুপাত্র। বিয়েটা এমন একটা সহজ কাজ যে ভূতনাথের মতো অকর্মণ্য ছেলের পক্ষেও তা এবং তার পরের অধ্যায়গুলি অনায়াস সাধ্য। বস্তুত এটি বিদ্রূপাত্মক কথা বলেছেন।


“যম যে ব্যাধি পাঠায় তাকে আমরা দেখেই চিনি”–কে কাকে এই কথা বলেছিলেন? কখন বলেছিলেন? এ কথা বলার কারণ কী?

আলোচ্য কথাটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্পের কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত তাঁর স্ত্রী মাতঙ্গিনীকে বলেছিলেন।

ভূতনাথের প্রথম স্ত্রী মণি মারা যাবার পর মাতঙ্গিনী স্বামীর কাছে একফোঁটা ওষুধ কেন মণিকে দেওয়া হল না জানতে চাইলে তাঁর স্বামী কৃষ্ণকান্ত এ কথা বলেছিলেন।

সামান্য দু'দিনের জ্বর হয়েছিল, ভূতনাথের স্ত্রী মণির। কৃষ্ণকান্ত নাড়ী দেখে ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে জ্বর ছেড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ শেষরাত্রি থেকে ভেদ শুরু হয়ে বেলা দুটো নাগাদ মণির নাড়ী ছেড়ে গেল। ছোট্ট মণির জন্যে শোকে অভিমানী মাতঙ্গিনী স্বামীর কাছে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ওষুধে যখন মণির জ্বর ছেড়েছিল, তখন ভেদও নিশ্চয়ই থামানো যেতো। কৃষ্ণকান্ত স্ত্রীর মনের ভাব বুঝতে পেরে, নিজের অক্ষম অপরাধকে চাপা দেবার জন্যে, বিজ্ঞের মতো স্ত্রীকে ওই কথাগুলি বলেছিলেন।


"এখানো যেন সে মাটিতে আঁচল লুটাইয়া উঠানময় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে”–উৎস নির্দেশ করো। কার কথা বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?

আলোচ্য অংশটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম" নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত।

এখানে ভূতনাথের প্রথমপক্ষের স্ত্রী মণির কথা বলা হয়েছে।

সামান্য দু'দিনের জ্বর হয়েছিল ভূতনাথের স্ত্রী মণির। কৃষ্ণকান্ত নাড়ী দেখে ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে জ্বর ছেড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ শেষরাত্রি থেকে ভেদ শুরু হয়ে বেলা দুটো নাগাদ মণির নাড়ী ছেড়ে যায়। মণি চলে গেল কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেল সারা বাড়িময়। মাতঙ্গিনী মণিকে পেটের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন। ছেলেমানুষ মণি অনুক্ষণ তাঁর পায় পায় ঘুরতো। কোন কাজের জন্যে তিনি মণিকে ধমক দিলে, মণির মুখ বিষণ্ন হয়ে যেত, পরক্ষণেই আবার ‘মা’ 'মা' বলে ঘেঁসে আসতো। মাতঙ্গিনীর এই স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।


“স্বয়ং শিব দু'বার বিবাহ করিয়াছিলেন”—কে এই কথা বলেছিলেন? এ কথার পশ্চাতে যে পুরাণ প্রসঙ্গ আছে তার উল্লেখ করে আলোচ্য অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য কথাটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্পের কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত বলেছিলেন।

পুরাণে আছে, দেবাদিদেব মহাদেব দক্ষরাজ-কন্যা সতীকে বিবাহ করেছিলেন। তারপর দক্ষরাজের যজ্ঞ সভায় পতি নিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন। শিব ক্রুদ্ধ ও শোকাভিভূত হয়ে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন। সেই প্রলয়কর অবস্থাকে সামাল দিতে তখন কিন্তু অন্যান্য দেবতার অনুরোধ ক্রমে সুদর্শনচক্র দ্বারা সতীর দেহ খন্ড খন্ড করে শিবের কাঁধ থেকে সতীর দেহ সরিয়ে ছিলেন। স্ত্রী বিয়োগের এই শোকের পরে আবার পাওয়া যায় পার্বতীর সঙ্গে শিবের প্রণয় পর্ব ও বিবাহের কাহিনী। আলোচ্য গল্পে ভূতনাথ তার প্রথম পত্নী মণির মৃত্যুর পর যখন সংসার সম্বন্ধে উদাসীন হয়েছিল, সেই সময় পুত্রের বিবাহ দিয়ে ঘরে কিছু নগদ অর্থ ও একটি বধূ আনার প্রয়াসে, এই সূত্র ধরে কৃষ্ণকান্ত তাঁর বিপত্নীক পুত্র ভূতনাথকে পুনরায় বিবাহে রাজি করাতে উদ্যত হয়েছিলেন।


“বৌমা তোমার আর বাপের বাড়ি যাওয়া হবে না বাপু”-কে কাকে এই কথা বলেছিল? এই উত্তির কারণ কী? এর প্রত্যুত্তরে বৌমা কী করেছিল?

আলোচ্য কথাটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্পের মাতঙ্গিনী তার পুত্রবধূ অনুপমাকে বলেছিলেন।

পুত্র ভূতনাথের প্রথম পত্নী মণির মৃত্যুর পর মাতঙ্গিনী নিতান্ত দুঃখে কালযাপন করেছিলেন। মণিকে মাতঙ্গিনী মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন। মণি সবসময় তাঁর পায় পায় ‘মা’ ‘মা’ করে ঘুরতো। বকুনি খেয়ে মুখটা তার বিষণ্ণ হয়ে উঠতো পরক্ষণেই ম্লান মুখ উজ্জ্বল করে সে ‘মা’ বলে কাছে ঘেঁসতো। মাতঙ্গিনীর মন তাই মণির অভাব কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। তারপর ভূতনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী অনুপমা ঘরে এলে মাতঙ্গিনী ঘুরে ফিরে এসে বধূর মুখের ওপর চোখ বুলিয়ে মন ও চোখে শীতাঞ্জন বুলিয়ে যেতেন। তাঁর জননী হৃদয়ে মণির অভাব অনুপমা অনেকটাই পূরণ করেছিল। তাই অনুপমাকে চোখের আড়াল করতে তাঁর মন সরতো না। এই আদরের আহ্লাদ-আবেগ বশত তিনি একদিন বধূকে ওই কথা বলেছিলেন।

বধূ অনুপমা শাশুড়ী মাতঙ্গিনীর কাছে এই কথা শোনার পর দুই চোখ তুলে সোজা শাশুড়ীর দিকে এমনভাবে তাকালো যে মাতঙ্গিনীর আকাঙ্ক্ষা-আহ্লাদ সব ঘূর্ণীবায়ুর মতো আবর্তিত হয়ে মিলিয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে এতটুকু মেয়ের স্নিগ্ধ আবরণ ছাপিয়ে যে উগ্র উত্তাপ বেরিয়ে এল তার তাপের মুখে মাতঙ্গিনী থরথর করে কাঁপতে লাগলো।