পাথুরিয়া ঘাটা নাট্যালয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পাথুরিয়াঘাটা রঙ্গনাট্যালয়টি বাবু যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর তাঁর নিজ বাড়িতে ১৮৬৫ খ্রিঃ স্থাপন করেন। ওই বছরেই ৩০ ডিসেম্বর তাঁর নিজের লেখা 'বিদ্যাসুন্দর' নাটকের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাট্যালয়টির দ্বারোদ্ঘাটন হয়। যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত নাট্যালয়ে যে অভিনয় হয়েছিল, সেই বিদ্যাসুন্দর কাহিনির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন রাজা যতীন্দ্রমোহন। এ অভিনয়ের পরই ‘যেমন কর্ম তেমনি ফল' নামে একটি হাস্যরসাত্মক ফার্সের অভিনয় হয়েছিল। ১৮৬৬-র ৬ জানুয়ারি বিদ্যাসুন্দরের দ্বিতীয়বার অভিনয় হয়। তারপর 'বুঝলে কিনা' নামক একটি ফার্সের অভিনয় এখানে হয়েছিল ওই সালেই ১৫ জানুয়ারি।


যতীন্দ্রমোহনের চেষ্টায় অনুষ্ঠিত অভিনয়টিতে প্রায় দুশোর বেশি সম্ভ্রান্ত লোক উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টার অভিনয়টিতে বাদ্য সংগীত খুব আকর্ষণীয় হয়েছিল। অভিনেতাদের অভিনয়ে স্বাভাবিকতা এবং দুজন যুবকের নর্তকীর বেশে নৃত্যও হয়েছিল আনন্দদায়ক বিদূরকের ভূমিকায় যতীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় এবং কুকীর ভূমিকায় ছোটোরাজা শৌরীন্দ্রমোহনের অভিনয়ও প্রশংসনীয় হয়। 'বিদ্যাসুন্দর’ ও ‘যেমন কর্ম তেমনি ফল' ফার্সটি এখানে প্রায় দশ বারো বার অভিনয় হয়েছিল। ঘনশ্যাম বসু ছিলেন এই রঙ্গালয়ের অবৈতনিক সম্পাদক। দ্বিতীয়বারের অভিনয়ের পর ‘বেঙ্গলি’ পত্রিকা স্ত্রীর চরিত্রের ভূমিকায় স্ত্রী অভিনেত্রীর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য যেমন কর্ম তেমনি ফল'-এর নায়ক বৃদ্ধ মুনসেফ প্রতিবেশির স্ত্রীর ওপর লোলুপ দৃষ্টির জন্য হাস্যাস্পদ হন। এখানেই রাম-নারায়ণ অনুবাদিত ‘মালতীমাধব' নাটকের অভিনয় প্রায় দশ বারো বার হয়।


১৮৭০ সালের গোড়ার দিকে এখানে রামনারায়ণের আরও দুটি ফার্স ‘চক্ষুদান’ এবং ‘উভয় সংকট'-এর অভিনয় হয়েছিল। ১৮৭১ সালে এখানে কোনো অভিনয় হয়নি। ১৮৭২-র ১৩ জানুয়ারি রামনারায়ণের পৌরাণিক নাটক ‘রুক্মিণী হরণ’ এবং ‘উভয় সংকট’ অভিনীত হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ও ৫ মার্চ ‘রুক্মিণী হরণ’-এর আরও দুবার অভিনয় হয়। স্বয়ং নাট্যকার জানিয়েছেন যে এ নাটক দশ বারো বার অভিনীত হয়েছিল। এরপর ১৮৭৩-র ২৫শে ফেব্রুয়ারি গভর্নর লর্ড নর্থব্রুক পাথুরিয়াঘাটা রাজবাড়িতে এলে তাঁর সম্মানার্থে ‘রুক্মিণী হরণ’ অভিনয় এখানকার শেষ অভিনয়।


অবদান:

১। সখের নাট্যশালাগুলির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী নাট্যমঞ্চ। 


২। এই নাট্যশালাতেই একমাত্র নিয়মিত ও ধারাবাহিক নাট্যাভিনয় হয়েছে।


৩। নাট্যকার রাম নারায়ণের বেশিরভাগ নাটক ও অনুবাদ এই মঞের জন্য লেখা। 


৪। দেশীয় ঐকতানবাদনের বৈশিষ্ট্য, শৌরীন্দ্রমোহনের কনসার্ট সে সময়ে খুবই বিখ্যাত হয়েছিল। 


৫। ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকা এই রঙ্গলালকে জাতীয় নাট্যশালার মর্যাদা দিতে চেয়েছিল এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ধারাবাহিক অভিনয়ের জন্য। 


৬। নাটকের ক্ষেত্রে কোনো নতুনতর ভাবনা আসতে না পারলেও এই মঞ্চের নাট্যোপস্থাপনার গুণে সব নাটকই চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠেছিল।


৭। রঙ্গালয়ের উদ্যোক্তা যতীন্দ্রমোহন শুধু এই থিয়েটারের জন্য নয়, তখনকার উল্লেখযোগ্য প্রায় সব সখের নাট্যশালাগুলির সঙ্গে উপদেষ্টা ও সাহায্যকারী হিসাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।


৮। এই রঙ্গালয় পাথুরিয়াঘাটার প্রাসাদ ছাড়িয়ে বহু মানুষকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল।