"ফসিল” গল্পে মি. মুখার্জী এক বিধ্বস্ত মানবাত্মা-আলোচনা করো।

‘আমিই রাষ্ট্র’ এই অহমিকার লুই রাজতন্ত্র যখন পতনের দিকে এগোচ্ছিল, তখন টুর্গো হাল ধরার চেষ্টা করেন ও ব্যর্থ হন। অঞ্জনগড়ের রাজতন্ত্রে সেই প্রচেষ্টা ছিল ল এজেন্ট মি. মুখার্জীর। সংস্কারক শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলে আত্মসমপর্ণে—বাস্তবিক এ গল্পে সে এ বিড়ম্বিত পৃথিবীর নায়ক। সে এমন এক দেবশিশু—যে স্বর্গে থেকে বিতাড়িত, মর্ত্যেও তার ঠাঁই নেই।


নেটিভ স্টেট অঞ্জন গড়। সেখানে রাজার দাপটে অর্ধেক প্রজা ঘরছাড়া, যারা আছে তারাও ‘আছে’ ওই পর্যন্তই। রাজার উপাধি আছে বিস্তর—তবে রাজতন্ত্র তার কামানের মতোই মরচে ধরা। আর্থিক অনটন আর অত্যাচারে রাজতন্ত্রর সমাধি ঘটত নিশ্চিত, একদিন সেখানে এলেন মি. মুখার্জী । গণতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী শান্তবুদ্ধি মুখার্জী। তার বিশ্বাস,—“যে সৎ সাহসী যে কখনও পরাজিত হয় না, যে কল্যাণকৃৎ তার কখনও দুর্গতি হতে পারে না। রাজতন্ত্রকে ঢেলে সাজাল সে, এবার আনল ধনতন্ত্রকে মাইনিং সিন্ডিকেটের টাকায় ঝাঁ চকচকে হল অঞ্জনগড়, সেই টাকায় কৃষিতে—শিল্পে-শিক্ষায় নতুন অঞ্জনগড় গড়ার স্বপ্ন দেখে মি. মুখার্জী।—“শিল্পীর তুলির এক একটা পরিকল্পনায় সে অঞ্জনগড়ের রূপ ফিরিয়ে দেবে। সে দেখিয়ে দেবে শাসন লাঠিবাজি নয়, এ ও একটা আর্ট। তার স্বপ্নের সমাধি রচনার শুরু এখানে থেকে। সিন্ডিকেট বনাম স্টেট দ্বন্দ্বের জাঁতাকলে পড়ে সে। দুলাল মাহাতোকে শিখণ্ডী সাজিয়ে রাজতন্ত্রকে শক্তিহীন করতে থাকে গিবসন। কুর্ম্মিরা রাজার আনুগত্য ত্যাগ করে, রাজার বেগার খাটতে অস্বীকার করে, উল্টে চাঁদা চায়। মাহাতোকে বোঝানোর চেষ্টা করে মুখার্জী—ব্যর্থ হয়। গিবসনের হাতে কার্যত অপমানিত হয়। অবশেষে দিল্লির পলিটিক্যাল এজেন্টের চিঠির জন্য রাজার আস্থাও প্রায় হারিয়ে বসে, মি. মুখার্জী। না, এখানে শেষ নয়, শুরু। কুৰ্ম্মি হত্যাকারী একদা প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শত্রুপক্ষ হাত মিলিয়ে নেয় যখন, তখন শ্যাম্পেনের নেশায় দূর কালকে প্রত্যক্ষ করে সে। সব শুভবুদ্ধিই ফসিল হয়ে যায়। ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে বলেছেন—“বিপরীত তরঙ্গের মধ্যে মুখার্জীর আদর্শবাদ ও উদারনীতির বানচাল”—তাই চরিত্রটিকে মর্মান্তিক করে তুলেছে।