কথাসাহিত্য : উপন্যাস ও ছোটগল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮ খ্রীঃ-১৯৭১ খ্ৰীঃ)

উপন্যাস ও ছোটগল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম:

সমাপ্তি আর সূচনার যুগসন্ধিতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। ১৮৯৮ খ্রীস্টাব্দের ২৩শে জুলাই (১৩০৫ বঙ্গাব্দ, তারাশঙ্করের ভাষায় ‘শাস্ত্রমতে ৭ই শ্রাবণ’) শুক্রবার ব্রাহ্মমুহূর্তে তার জন্ম। আর ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর (১৩৭৮ বঙ্গাব্দের ২৭শে ভাদ্র) মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের পর তাঁর মৃত্যু (সুনীতিকুমারের লিখিত তথ্য অনুযায়ী জন্ম ৮ই শ্রাবণ, মৃত্যু ২৮শে ভাদ্র)। তাঁর সাহিত্যচর্চার কাল ১৯২৬ ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সুদীর্ঘ সময়কালে যুগসন্ধির অস্থিরতার সঙ্গে আছে ভারতবর্ষের স্বদেশী আন্দোলনের সূচনাকাল : বয়কট-বঙ্গভঙ্গ অসহযোগ এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড, কম্যুনিস্ট ভাবধারায় প্রকাশ, আইন অমান্য আগস্ট বিপ্লব, স্বাধীনতা ও দেশবিভাগ, পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তান বিভাগ ও বাংলাদেশের উদ্ভব, ভারতবর্ষে আদিবাসীদের জঙ্গলে পুনর্বাসনের দাবী, পশ্চিমবঙ্গে কম্যুনিস্টদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আত্মঘাতী আচরণ ইত্যাদি ঘটনাসমূহের প্রকাশ। তারাশঙ্করের সাহিত্যকর্ম এই সময় পরিবেশের আবহে রচিত হয়। তার সাহিত্যে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় তিনটি ধারা—

  • (ক) ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারের আভিজাত্যের সঙ্গে উঠতি ব্যবসায়ী পরিবারের মর্যাদালাভের দ্বন্দ্ব।
  • (খ) রাঢ় অঞ্চলের অপরিচিত অস্ত্যজ মানুষের জীবনচিত্র।
  • (গ) গান্ধীবাদ ও বিপ্লববাদের আদর্শে পরিচালিত দেশসেবার পথনির্দেশ।

এছাড়া যন্ত্রসভ্যতা ও কৃষিসভ্যতার মধ্যে দ্বন্দ্ব, গ্রামীণ সমাজের বর্ণ ও বৃত্তিগত ব্যবস্থায় শহুরে জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির প্রভাবে পরিবর্তন, পঞ্চায়েতের শাসন, সংস্কার ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ব্যক্তির বিদ্রোহ, যুদ্ধের প্রয়োজনে গাছপালা দেব-দেউল উচ্ছেদ করে কৌম সমাজের অধ্যাত্ম-বিশ্বাসে আঘাতদান ইত্যাদি বিচিত্র ঘটনাসমূহের বিবরণে তার গল্প-উপন্যাসের জগৎ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।


তারাশঙ্করের শিল্পী-মানস বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হয়


(ক) প্রথম পর্যায়ে দেখা যায় আদিম প্রকৃতিরূপের অন্বেষণ আর বিত্তহীন আভিজাত্যের নৈরাজ্যময় ভগ্নচিত্র।


(খ) দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে রাজনীতির সংস্পর্শে স্বদেশী ভাবনা, ঐতিহ্য ও আদর্শের প্রতি আনুগত্য, অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় : “রুদ্র প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা আর অস্তগামী আভিজাত্যের নৈরাজ্যে তারাশঙ্করের শিল্পী-চেতনা প্রথম পর্যায়ে দ্বিমুখী। বাজে পোড়া তালগাছ কিংবা পত্রহীন কণ্টকময় বাবলা গাছের মতো কতগুলি মানুষ তাঁর সহানুভূতি আকর্ষণ করেছে, আর একদিকে মৃত্যুযাত্রী অতীত তাঁর মমতার অভিসেচন লাভ করেছে। জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে তাঁর কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ফুটে ওঠেনি, কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যে পরিচয় তার ঘটেছিল—তার ফলে তার মনে একটা আদর্শ রূপ নিতে আরম্ভ করেছে”।


(গ) তৃতীয় পর্যায়ের প্রকাশ হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিতে— মন্বন্তরের অবর্ণনীয় বীভৎসতায়। ফ্যাসীবিরোধী লেখক ও শিল্পীসংঘে যোগদান, ‘মন্বন্তর’, ১৩৫০ প্রভৃতি উপন্যাস রচনার প্রেরণা অর্জন।


(ঘ) চতুর্থ পর্যায়ে আছে রহস্যময় অধ্যাত্ম-চেতনায় উত্তরণ। নবীন ও প্রবীণের দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক সমস্যা আর জান্তব-জীবনের উন্মত্ত-প্রবৃত্তি সব কিছু এখানে যেন এক পরম সমাধানের আশ্রয়ে স্থিত হয়েছে। সমালোচকের উপলব্ধিতে, “হিউম্যানিজমের সঙ্গে আস্তিক্যবুদ্ধির মিলনে তারাশঙ্করের ভাবলোক সম্পূর্ণতা লাভ করেছে” (‘সাহিত্য ও সাহিত্যিক’, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৬৭)।


খুব সম্ভবত এই ভাবটিকেই লেখক বলেছেন “জীবন মুক্তির সাধনা।” তাঁর ভাষায় : “রাজনৈতিক বন্ধনমুক্তির আকাঙক্ষার যে দুর্নিবার আবেগ আমি জাতীয় জীবনের স্তরে স্তরে বিভিন্ন সঙ্গীতে প্রকাশিত হতে দেখেছিলাম, তারই মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছিলাম, মানুষের সনাতন জীবন-মুক্তির সাধনা। জীবন মুক্তি বলতে ভয়ের বন্ধন, ক্ষুদ্রতার গণ্ডী, অভাবের পীড়ন, জীবনে জোর করে চাপানো সকল প্রকার প্রভাবের বিরুদ্ধে মানুষ সংগ্রাম করে চলেছে। সেই তার অভিযান” (“বীরভূম সাহিত্য সম্মেলনে অভিভাষণ’, ১৯৪২)। বলা বাহুল্য, এই সংগ্রামের অভিযানের মধ্যেই আছে তার মানুষের প্রতি আস্থা তথা আস্তিক্যবুদ্ধির পরিচয়।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য চর্চা:

সাহিত্যিক রূপে তারাশঙ্করের আত্মপ্রকাশ ১৩৩৪-এ। 'পূর্ণিমা' পত্রিকায় প্রকাশিত ‘স্রোতের কুটো’ (আষাঢ় ১৩৩৪) ও 'উল্কা' (আশ্বিন ১৩৩৪) এবং ‘কল্লোলে’ ‘রসকলি’ (ফাল্গুন ১৩৩৪) গল্প তিনটির মধ্যে তার সাহিত্যানুশীলনের প্রথম পর্ব রচিত। অবশ্য লেখকের স্বীকারোক্তি অন্যরকম : “১৩৩৫ সালের বৈশাখ থেকেই আমার সাহিত্য জীবনের কালগণনা শুরু” (‘আমার সাহিত্য জীবন', ১ম, পৃষ্ঠা ৯)। ‘কালি-কলম’ পত্রিকার দুটি সংখ্যায় (১৩৩৩ বঙ্গাব্দ, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা) প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘পোনাঘাট পেরিয়ে' এবং শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের 'জোহানের বিয়া’ গল্প পড়ে তার 'স্রোতের কুটো' গল্প লেখার প্রাথমিক প্রেরণা লাভের কথা এই বইতেই আছে। প্রথম উপন্যাস 'চৈতালী ঘূর্ণি’র প্রকাশকাল ১৯৩১। তারপর আইন অমান্য আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরূপে কারাবাস ১৯২৮ থেকে ১৯৩১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৩ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালটি তার লেখকরূপে প্রস্তুতির সময়। এই সময়ের উল্লেখ করে অধ্যাপক অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন : “এই পাঁচ বছর লেখক হিসেবে তাঁর প্রস্তুতির কাল। কংগ্রেস কর্মীরূপে দেশকে খুব কাছের থেকে জেনেছেন, জমিদার বংশের জামাতারূপে ধনতান্ত্রিক দাম্ভিকতার আঁচ পেয়েছেন, গ্রামের সন্তানরূপে মাটি ও মানুষকে ভালবেসেছেন, শাক্ত-বৈষ্ণবের ক্ষেত্র রুক্ষ উদাস লালমাটির দেশকে জেনেছেন, ঠ্যাঙাড়ে-ডাকাত-বৈষ্ণব ও বৈরাগীদের চিনেছেন, বেদে-পটুয়া-মালাকার-লাঠিয়াল চৌকিদার-ডাকহরকরা-কবিয়াল-সাপুড়ে-দরবেশ কত বিচিত্র মানুষকে জেনেছেন। সেই সঙ্গে যুক্ত হল কারাজীবনের অভিজ্ঞতা। সাহিত্যেক্ষেত্রে পাঁচ বছর (১৯২৮-৩৩) বাদে যখন তারাশঙ্কর দেখা দিলেন, তখন তিনি প্রস্তুত হয়েই এসেছেন।” (“তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়”, “কালের প্রতিমা’, ‘দ্বিতীয় সংস্করণ এপ্রিল ১৯৯১, পৃষ্ঠা ১৫)। এরপর তার একটানা লিখে যাওয়ার ইতিহাস। গল্প-উপন্যাস প্রবন্ধ স্মৃতিকথা মিলিয়ে তার গ্রন্থসংখ্যা অজস্র।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাসমূহ:

(ক) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ (১৯২৮), ‘পাষাণপুরী’ (১৯৩৩), ‘নীলকণ্ঠ’ (১৩৩৩), 'রাইকমল’ (১৩৩৪), 'প্রেম' প্রয়োজন' (১৯৩৫), 'আগুন' (১৯৩৭), ‘ধাত্রীদেবতা' (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৪০), ‘গণদেবতা’ (১৯৪২), ‘কবি’ (১৯৪২), ‘মন্বস্তর’ (১৯৪৪), ‘পঞ্চগ্রাম' (১৯৪৪), 'সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬), 'সন্দীপন পাঠশালা’ (কিশোর সংস্করণ, ১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’ (১৯৪৬), 'অভিযান' (১৯৪৬), 'হাঁসুলীবাঁকের উপকথা' (১৯৪৭), ‘পদ চিহ্ন' (১৯৫০), ‘উত্তরায়ণ' (১৯৫০), 'তামস তপস্যা' (১৯৫২), 'নাগিনী কন্যার কাহিনী’ (১৯৫২, মতান্তরে ১৯৫৫), 'বিচিত্র’ (১৯৫৩), 'আরোগ্য নিকেতন' (১৯৫৩), ‘টাপাডাঙার বৌ' (১৯৫৪), 'স্বর্গমর্ত্য' (১৯৫৪), 'পঞ্চপুত্তলী' (১৯৫৬), ‘বিচারক’ (১৯৫৭), 'সপ্তপদী' (১৯৫৭), '‘বিপাশা' (১৯৫৮), 'রাধা' (১৯৫৮), ‘ডাকহরকরা' (১৯৫৮), ‘মহাশ্বেতা’ (১৯৬০), ‘যোগভ্ৰষ্ট' (১৯৬০, পত্রিকায় প্রকাশিত নাম ‘যবনিকা’), ‘না’ (১৯৬০), ‘নাগরিক' (১৯৬০), 'নিশিপদ্ম' (১৯৬২), 'যতিভঙ্গ’ (১৯৬২), 'কান্না' (১৯৬২), 'কালবৈশাখী' (১৯৬৩), 'একটি চড়ুই পাখী ও কালো মেয়ে’ (১৯৬৩), 'জঙ্গলগড়' (১৯৬৪), 'মঞ্জরী অপেরা' (১৯৬৪), 'সংকেত' (১৯৬৪), ‘ভুবনপুরের হাট' (১৯৬৪), 'বসন্ত-রাগ' (১৯৬৪), ‘গন্না বেগম’ (১৯৬৫), 'অরণ্য বহ্নি' (১৯৬৬), 'হীরা পান্না' (১৯৬৬), 'মহানগরী' (১৯৬৬), ‘গুরুদক্ষিণা’ (১৯৬৬), ‘শুকসারী-কথা' (১৯৬৭), 'কীর্তিহাটের কড়চা' (১৯৬৭), ‘মণি বউদি’ (১৯৬৭), 'শঙ্করবাঈ' (১৯৬৭), ‘স্বর্গমর্ত্য' (১৯৬৮), 'ছায়াপথ' (১৯৬৯) 'কালরাত্রি’ (১৯৭০), 'অভিনেত্রী' (১৯৭০), 'কালান্তর' (১৯৭০), 'ফরিয়াদ' (১৯৭১), ‘নবদিগন্ত' (১৯৭১), সুতপার তপস্যা' (১৯৭১)।


(খ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ও গ্রন্থসমূহ : ‘ছলনাময়ী' (১৯৩৬), 'জলসাঘর’ (১৩৪৪ বঙ্গাব্দ), ‘তিনশূন্য’ (১৯৪১), ‘প্রতিধ্বনি' (১৯৪৩), 'বেদেনী' (১৩৪৭ বঙ্গাব্দ), ‘দিল্লীকা লাড্ডু’ (১৯৪৩), ‘যাদুকরী' (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), 'স্থলপদ্ম' (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), ‘প্রসাদমালা’ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), 'হারানো সুর' (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), 'ইমার' (১৯৪৬), 'রামধনু' (১৯৪৭), 'কামধেনু' (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), 'মাটি' (১৯৫০), 'তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), 'প্রিয়গল্প' (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত 'গল্প' (১৩৬১), 'শ্রী পঞ্চমী' (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), 'শিলাসন' (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প সঞ্চয়ন' (১৯৫৪), 'বিস্ফোরণ’ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৯৬৫), 'বিষপাথর' (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), 'মানুষের মন’ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), 'রবিবারের আসর' (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), ‘প্রেমের গল্প’ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), ‘পৌষলক্ষ্মী’ (১৯৬০), 'চিরন্তনী' (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), 'অ্যাকসিডেন্ট’ (১৩৬৯ বঙ্গাব্দ), ‘ছোটদের ভাল ভাল গল্প’ (১৩৬৯ বঙ্গাব্দ), ‘তমসা’ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ), ‘আয়না’ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ), 'গল্প-পঞ্চাশৎ' (১৯৬৪), 'চিন্ময়ী’ (১৩৭২ বঙ্গাব্দ), ‘একটি প্রেমের গল্প’ (১৩৭১ বঙ্গাব্দ), 'কিশোর সঞ্চয়ন' (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ), 'তপোভঙ্গ’ (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ), 'দীপার প্রেম' (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ), ‘পঞ্চকন্যা’ (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ), ‘রহস্যময়ী’ (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ), ‘শিবানীর অদৃষ্ট’ (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ), ‘ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প’ (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ), ‘মিছিল’ (১৩৭৫৪), ‘এক পশলা বৃষ্টি' (১৯৪৩), ‘পবিত্র সিংয়ের ঘোড়া’, ‘জায়া’ (১৯৪৪)।


(গ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথা : ‘আমার কালের কথা' (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), ‘বিচিত্র’ (১৯৫৩), ‘কৈশোর স্মৃতি' (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), ‘মস্কোতে কয়েক দিন’ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), ‘আমার সাহিত্য-জীবন’ (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ)।


(ঘ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ : ‘সাহিত্যের সত্য' (১৯৬০), 'ভারতবর্ষ ও চীন’ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ)। বহু ঘটনার অনুপুঙ্খ বিবরণ, অসংখ্য চরিত্রের উপস্থিতি, রাঢ় অঞ্চলের প্রাকৃতিক পটভূমি এবং সেই অঞ্চলের মানুষজনের বাক্রীতির নিখুঁত প্রয়োগ, উপন্যাসের আয়তনগত বিশালতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে তারাশঙ্করের রচনাসমূহ স্বাতন্ত্র্য-চিহ্নিত। তাঁর অনেক উপন্যাসেই মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি দেখা যায়। একালের সমালোচকের চোখে, ‘বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের যোগ্য উত্তরসূরী তারাশঙ্কর আধুনিক ভারতীয় জীবনের রূপকার ও ক্রণিক্লার ইতিহাস লেখক) এই অর্থে যে তিনি গ্রামীণ ভারতবর্ষের জীবনকে খুব বনিষ্ঠভাবে দেখেছেন এবং ঐতিহ্যবাদী শুভবাদী অধ্যাত্মবিশ্বাসী ভারতীয় লেখকরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন”।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজভাবনা:

তারাশঙ্কর সমাজসচেতন লেখক। রাজনীতি ও দেশসেবার মধ্য দিয়ে পল্লীসংগঠন ও উন্নয়নের চিন্তাভাবনা তার অনেক উপন্যাসেই লক্ষ্য করা যায়। তিনি মার্কসবাদে আস্থাশীল নন। কিন্তু শ্রমিক জীবনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় অনুভব করা যায় উপন্যাসে ও গল্পে। প্রথম উপন্যাস 'চৈতালী ঘূর্ণি’তে আছে মাটি ও মানুষের প্রতি মমতা এবং জমিদার ও ব্যবসায়ীর মধ্যে সংঘর্ষচিত্র। তবে এর কাহিনী 'শ্মশানের পথে' গল্পের অংশ থেকে পরিবর্ধিত। এখানে জমিদারের অত্যাচারে কৃষক গ্রাম ত্যাগ করে শহরে এসে এক কারখানার শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়। অনেক দুঃখভোগের পর সে মৃত্যুবরণ করে। উপন্যাসে ধর্মঘটী শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় লেখকের মক্তব্য ইঙ্গিতময় : “চৈতালীর ক্ষীণ ঘূর্ণি, অগ্রদূত কাল-বৈশাখীর।” তাঁর ‘ধাত্রীদেবতা’, ‘কালিন্দী’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রামে’ সমাজ-রূপাত্তরের ভাবনা সুস্পষ্ট। ধাত্রীদেবতা’র নায়ক শিবনাথ জমিদার-সস্তান। কিন্তু পিসীমার আভিজাত্যের দর্প নয় (“মাটি বাপের না, মাটি দাপের”), Joseph Prodhane-এর বইয়ের শিক্ষা ("Property is theft"), মায়ের দেশপ্রেম আর বিপ্লবীর নেতার উপদেশ স্মরণ করে ব্রাত্যজনের উন্নয়নের ব্রত নেয়—“বশিষ্ঠের মত আত্মাহুতি দিয়াও বিশ্বামিত্রের গলায় উপবীত দিবার সংকল্প” করে।


অন্যদিকে ‘গণদেবতা’য় দেখা যায় ভাঙনের চিত্র“সমাজ-শৃঙ্খলার সবই তো ভাঙিয়া গিয়াছে। গ্রামের সনাতন ব্যবস্থা নাপিত, কামার, কুমোর, তাতি আজ স্বকর্মত্যাগী, স্বকর্মহীন। এক গ্রাম হইতে পঞ্চ গ্রামের বন্ধন, পঞ্চ গ্রাম হইতে সপ্ত গ্রাম, নব গ্রাম, দশ গ্রাম, বিংশতি গ্রাম। শত গ্রাম সহস্র গ্রামের বন্ধন-রজ্জু গ্রন্থি গ্রন্থিতে এলাইয়া গিয়াছে।”


‘পঞ্চগ্রাম' উপন্যাসে আছে ১৯৩০ এ আইন অমান্য আন্দোলনের উত্তেজনা, নায়ক দেবু ঘোষের কারাবাস, আর শেষে এক শোষকহীন সমাজের স্বপ্ন : “পঞ্চগ্রামের প্রতিটি সংসার ন্যায়ের সংসার; সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা, অভাব নাই, অন্যায় নাই, অন্ন-বস্ত্র, ঔষধ-পথ্য, আরোগ্য, স্বাস্থ্য, শক্তি, সাহস, অভয় দিয়া পরিপূর্ণ উজ্জ্বল। আনন্দে মুখর, শান্তিতে স্নিগ্ধ।” কিন্তু এই স্বপ্ন কিভাবে কোন্ পথে বাস্তবায়িত হবে তার কোন পথ-নির্দেশ এখানে নেই।


'কালিন্দী’তে দেখা যায়, জমিদার-সন্তান অহীন্দ্র মার্কসীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। সে বঞ্চিত সাঁওতালদের অবস্থা দেখে মাকে বোঝায় অত্যাচার আর শোষণ দূর করার পথে “বাধার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিদার আর ধনীর দল।” প্রণয়িনী উমাকেও সে বলে—“এ-পাপ আমাদের পাপ। পুরুষ পুরুষ ধরে এই পাপ আমাদের জমা হয়ে আসছে, কলের মালিক এর জন্য একা দায়ী নয়। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতে হবে।” উপন্যাসের অস্তিম অংশে আছে সে “রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং রাজকর্মচারী হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে” গ্রেপ্তার হয়েছে। এখানে আছে রাশিয়ার সুস্পষ্ট উল্লেখ : “বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের মহাযুদ্ধের পর তখন ভারতের গণআন্দোলনের প্রথম অধ্যায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। নূতন অধ্যায়ের সূচনায় রাশিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত সমাজতন্ত্রবাদী যুবক সম্প্রদায়ের এক ষড়যন্ত্র আবিষ্কৃত হইয়া পড়িল।” তবে তারাশঙ্কর কখনই মার্কসবাদে আচ্ছন্ন হননি।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকায়ত-ভাবনা:

তারাশঙ্করের কতকগুলি উপন্যাসে লোকায়ত-ভাবনা সুস্পষ্ট। বলা বাহুল্য, এই উপন্যাসগুলি প্রকৃতিতে আঞ্চলিক। রাঢ় অঞ্চলের বন্য প্রকৃতি আর জীবনোপ্লাস এর মধ্যে মূর্ত। এই পর্যায়ে আছে 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' ও 'নাগিনী কন্যার কাহিনী’। প্রথমটি কাহার সমাজের কাহিনী। মাতব্বর বনোয়ারীর নেতৃত্বে কালারুদ্র আর বাবাঠাকুরকে অবলম্বন করে ছিল বাঁশবাদী গ্রামের কাহারদের সংস্কারাচ্ছন্ন জীবনযাপন। চন্দনপুরের রেলশ্রমিক করালীর প্ররোচনায় আর বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে সেই পুরানো বিশ্বাস ও সংস্কারের প্রাচীর ভেঙে পড়ল। বনওয়ারীর মৃত্যুর পর “হাঁসুলী বাঁকে করালী ফিরছে। সবল হাতে গাঁইতি চালাচ্ছে, বালি কাটছে, বালি কাটছে, আর মাটি খুঁড়ছে। উপকথার কোপাইকে ইতিহাসের গঙ্গায় মিশিয়ে দেবার পথ কাটছে। নতুন হাঁসুলী বাঁক।” ‘কোপাই'-এর গঙ্গায় মিশে যাওয়ার সম্ভাবনাময় আঞ্চলিক বদ্ধতা কাটিয়ে বৃহত্তর জীবনভাবনার মধ্যে বিলীন হওয়ার যেন ইঙ্গিত আছে। পরবর্তী ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী' রাঢ়ের হিজল বিল অঞ্চলের বিষবেদে দলের দুঃখ-আনন্দ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত-জনিত উপাখ্যান। লেখকের নিজের ভাষায়, “নাগিনী কন্যার কাহিনী’তে দুটি ভাগ—দুটি নাগিনী কন্যার কাহিনী আছে—তবে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। প্রথম কন্যার নাম শবলা, দ্বিতীয়ার নাম পিঙ্গলা।” প্রথম পর্বটি শবলার হাতে শিরবেদে মহাদেবের মৃত্যুতে সমাপ্ত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব পিঙলা বা পিঙ্গলার সঙ্গে শিরবেদে গঙ্গারামের সম্পর্ক, গঙ্গারামের প্রতারণার জ্বালায় ঝাপি খুলে শঙ্খচূড়ের ছোবল খেয়ে পিঙ্গলার মৃত্যুবরণ, পিঙ্গলার প্রণয়ী নাগু ঠাকুরের দ্বারা গঙ্গারামের মৃত্যুবরণ, নিরুদ্দিষ্টা শবলার প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি নানাবিধ ঘটনাসমূহের বর্ণনায় পরিপূর্ণ হয়েছে। উপন্যাসের শেষে আছে লোকায়ত ঢঙে পাঠকের সহানুভূতি আকর্ষণের চেষ্টা : “সাঁতালীর কথা শেষ, নাগিনী কন্যার কাহিনী শেষ। — যে শুনিবা সি যেন দু ফোঁটা চোখের জল ফেলিও।”


প্রেম-পরিবার ও দার্শনিকতা : তারাশঙ্করের অনেক উপন্যাসে প্রেম ও পারিবারিক জীবনের সুখ-দুখেঃর বিচিত্র কাহিনী উপস্থিত। এখানে কোথাও দেখা যায় অন্ত্যজ কবিয়ালের সঙ্গে ঝুমুর গানের নর্তকীর হৃদয়-বিনিময়ের কাহিনী ; যেমন ‘কবি’ নিতাই কবিয়ালের গান—“এই খেদ মোর মনে,/ ভালবেসে মিটল না আশ/ কুলাল না এ জীবনে” এই গানটি উপন্যাসের অন্যতম সম্পদ। “সপ্তপদী’তে আছে প্রেম ও সত্যসন্ধানের মধ্যে সমন্বয়। এর নায়ক কালাচঁাদ গুপ্ত, যিনি যৌবনে কৃষ্ণেন্দু এবং পরবর্তী জীবনে পাগল পাদরী কৃষ্ণস্বামী নামে পরিচিত হন। তার পরিচয় দানে লেখকের মন্তব্য: “তখন কালাচঁাদ ঠিক ঈশ্বর মানত না। এবং কালাচঁাদ নাম পালটে সদ্য তখন সে কৃষ্ণ ইন্দু কৃষ্ণেন্দু হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ছাত্র।” সেই কৃষ্ণেন্দু নানা দ্বন্দ্ব-বিপর্যয়ের পর রিনা ব্রাউনের সঙ্গে হল পরিচিত। রিনা ব্রাউনের পিতার শর্তানুযায়ী ধর্মান্তরিত হল। কিন্তু তাদের বিয়ে হল না। রিনা যুদ্ধে গিয়ে আমেরিকান মিলিটারী অফিসারদের সঙ্গে যাযাবরী উদ্দামতায় ডুবে গিয়ে ভুলতে চাইল জ্বালা। আর কৃষ্ণেন্দু নানা জায়গা ঘুরে শেষে মাদ্রাজের কুম্ভকোনম কুন্ঠাশ্রমে রোগীদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হল। একদিন দেখা হল দুজনের“মনে পড়ল রিনা ব্রাউনকে। স্ফটিকে গড়া মূর্তির মতো পবিত্র কুমারী রিনা ব্রাউন, আসানসোলের চার্চ ইয়ার্ডে তাকে প্রত্যাখ্যান করার সময়, যে ঈশ্বর বিশ্বাসী, তার বীভৎস রূপান্তর যেমন অভাবনীয়, তেমনি বেদনাদায়ক। আবার সেই নরকের এক বিস্ময়ঃ জন ক্লেটনের পাশে রিনা! রিনা ক্লেটনের স্ত্রী!” প্রেমে প্রত্যাঘাত পেয়েও শেষে তার জীবনপাত্র প্রেমের মাধুরীতে পরিপূর্ণ হয়েছে। তাই বিস্মিতা রিনাকে তিনি সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “লুক ইন মাই ফেস। দেখো, আনন্দ ছাড়া আর কিছু আছে? গুড বাঈ! গুড বাঈ! গুড বাঈ!” দীর্ঘ হাতখানি তুলে দীর্ঘকায় পুরুষটি পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলেন।


তারাশঙ্করের মৃত্যু-দর্শনের এক আশ্চর্য পরিচয় আরোগ্য নিকেতন' উপন্যাস। অনেকের মতে, এটি তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। উপন্যাসটির কাহিনী কবিরাজ জীবনমশায় বা জীবন দত্তের স্মৃতিচারণা সূত্রে আবর্তিত। রোগীর জীবনের অস্তিম সময় ('নিদান-হাঁকা') নির্ধারণে তিনি পারঙ্গম। এইভাবে নিদান হেঁকেই তিনি মতি কামারের মা, বিপিনবাবু, দাঁতু ঘোষাল, শশাঙ্ক এমন কি নিজের ছেলে বনবিহারীর পর্যন্ত মৃত্যু সময় জানিয়ে দিয়েছেন। এই নিদান-হাঁকার নিষ্ঠুরতা নিয়েই হাসপাতালের নতুন ডাক্তার-যুবক প্রদ্যোতের আপত্তি “পেনিসিলিন, স্টেপ্টোমাইসিন, এক্সরে—এসবের যুগে ওভাবে নিদান হাঁকবেন না”। অথচ পরে এই প্রদ্যোৎ ডাক্তার নিজের স্ত্রী মঞ্জুর রোগ নির্ণয়ের জন্য জীবনমশায়ের শরণাপন্ন হন“ডায়োগনসিস আপনার অদ্ভুত। আপনি শুধু বলে দেবেন টাইফয়েড কিনা।” বস্তুত, এই অর্থে উপন্যাসটি কবিরাজী এবং এ্যালোপাথি চিকিৎসার মধ্যে দ্বন্দ্বময় ঘটনাবহুল কাহিনীও বটে। তবে শেষ পর্যন্ত “জীবনের মধ্যে মৃত্যুকে অনুভব করতে” পারার সিদ্ধিতেই ঘটে জীবন মশায়ের অসাধারণ চরিত্রটির রূপায়ণ। নিজের অস্তিম অবস্থায় নাড়ীর স্পন্দনে মৃত্যুর পদসঞ্চার তিনি শুনেছেন। লেখকের ভাষায় : “তার রূপ থাকলে তাকে তিনি দেখবেন, তার স্বর থাকলে সে কণ্ঠস্বর শুনবেন, তার স্পর্শ থাকলে সে স্পর্শ তিনি অনুভব করবেন। মধ্যে মধ্যে ঘন কুয়াশায় যেন সব ঢেকে যাচ্ছে। সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অতীত, বর্তমান, স্মৃতি, আত্মপরিচয়, স্থান, কাল সব। আবার ফিরে আসছেন। চোখ চাইছেন। সে এল কি? এরা কারা? বহুদূরের অস্পষ্ট ছায়াছবির মত এরা কারা?” জীবনমশায় এখানে যেন মৃত্যুর ধ্যানে মগ্ন এক সাধক। তাই প্রদ্যোৎ ডাক্তারের দৃষ্টিতে “প্রগাঢ় এক শান্তির ছায়া শীর্ণ মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে।” সমালোচকের উপলব্ধিতে, “সমগ্র উপন্যাসখানি তারাশঙ্করের মৃত্যু দর্শনের এক আশ্চর্য দলিল”।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের পটভূমি:

তারাশঙ্করের অধিকাংশ গল্পের পটভূমি তার স্বগ্রাম। দক্ষিণ-পূর্ব বীরভূম এবং তার চারপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূমিলগ্ন তার গল্পের কাহিনীপট। চরিত্রদের ভূমিকা এই ভূমিতেই—বেহিসেবী বেপরোয়া অছন্দে তাদের চলা। গাঙ্গেয় অববাহিকার নাব্য পলিমাটি নয়, অজয় ও ময়ূরাক্ষীর তীর ঘেঁষা রাঢ়ের রাঙা অথচ কাকরজাগা কঠিন মাটি আর সেইসঙ্গে যুগ-যুগান্ত কাল ধরে তন্ত্রসাধনা এবং অনার্য-জীবন সংস্কৃতির বহুমিশ্র পঞ্চশস্যে সমৃদ্ধ তার গল্পের আবহ ও অনুষঙ্গ। এখানে অভিজাত ক্ষয়িষ্ণু তবু, দর্পিত পরিবার আছে, আছে তার পাশে অপজাত জনজীবন—ডোম, বাউরী, বীরবংশী, সাঁওতাল, সাপুড়ে, বেদে শ্রেণীর মানুষ। বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও পালাবদলে যাদের জীবন-সংগ্রামে, সংস্কারে ও বিশ্বাসের ধারাবদল কিছুই প্রায় হয় না। হাজার হাজার বছর আগেকার সেই আদিম মানুষের উত্তরসূরীরূপে বেঁচে থাকার সহজ আকাঙক্ষায় প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে এরা শুরু করে কজির লড়াই। দেখা যায় মাঠের সঙ্গে মুঠির, শস্যের সঙ্গে মানবশিশুর সংযোগ। প্রকৃতির খেয়ালী চরিত্রকে বুঝতে চিনতে শাস্ত করতে তাদের নিজেদের দেহে-মনে চিন্তা-চেতনায় সঞ্চারিত হয় রূঢ় বাস্তবের তাপ ও ভাপ। তাই নিষ্ঠাবান প্রৌঢ় বৈষ্ণব বাউল হঠাৎ নিজের মধ্যে খুঁজে পায় কামনার উত্তাপ। তারাশঙ্করের গল্পের এই কাহিনীতে রাঢ় অঞ্চলের প্রকৃতি, মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি তাদের সমস্ত রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর গল্পের কাহিনী বর্ণনার মানচিত্র একান্তভাবেই এই জীবন ও প্রকৃতির মানসচিত্রের সীমানা সম্বলিত। সমগ্র গল্পের রসাবেদনের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে তারা সম্পৃক্ত। পল্লীজীবনাশ্রয়ী আঞ্চলিক চেতনাপুষ্ট বাস্তব বিচিত্র স্বভাবের পরিচয় দিয়ে এরা বাংলা কথাসাহিত্যের আসরে প্রবেশ করে।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জৈব প্রবৃত্তির প্রকাশ:

তারাশঙ্করের চিত্রিত চরিত্রেরা যেহেতু আদিম সমাজের প্রতিবেশী, তাই কাম্ভ-কোমল কোন ধর্মের সংস্কার বা পরিশীলন তাদের মধ্যে নেই। তারা একাক্তভাবেই আদিম, ‘এলিমেন্টাল'। তাদের স্বভাব যে সংস্কারের দ্বারা আচ্ছন্ন, তা মূলতঃ এক প্রবল জৈব সংস্কার। বেঁচে থাকার উদ্দাম তাগিদ, আর সেই সঙ্গে বিচিত্র অন্ধ প্রবৃত্তির তাড়না, যা প্রায় নিয়তিরই প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে। সমাজ বা নীতির মূল্য সেখানে অবাত্তর। অথচ অভিজ্ঞতায় পোড়খাওয়া, জীবন সংগ্রামের রুক্ষ শ্রমে কড়া-পড়া তাদের দেহ-মন। আর সেখানে জৈবচেতনা প্রবল প্রবৃত্তিরূপে তাদের জীবনের অন্তর্নিহিত দুর্মর প্রাণশক্তি বা 'Life Force' হয়ে উঠেছে। এই প্রবৃত্তির কাছে ভালোমন্দ, পাপপুণ্যের সীমারেখা পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়েছে। বেঁচে থাকার জাস্তব প্রয়োজনের মুহূর্তে বিবেক ও নীতিকথার সীমান্ত কোনখানে এবং কতটুকু— তারাশঙ্করের শিল্পী-মানসের সেই তীক্ষ্ণ অথচ কৌতুহলী জিজ্ঞাসা যেন ফুটে উঠেছে ‘তারিণী মাঝি’ গল্পে। গল্পকার আগে দেখিয়েছেন নিঃসন্তান তারিণী তার বউ সুখীকে কিভাবে ভালবাসে। সে বলে “উ না থাকলে আমার হাড়ির ললাট, ডোমের দুর্গতি হয় ভাই।” তারপর এল বন্যা—দেশ ডুবল, ঘর ভাঙল, সুখীকে পিঠে করে তারিণী ভাসল জলে। জীবিকায় সে মাঝি, জলের সঙ্গে তার নিত্যযোগ। তাই স্বভাবতই সে সুদক্ষ সাহসী সাঁতারু। কিন্তু তবু যেন তার শ্বাসরোধ হয়ে আসে সুখীর প্রাণপণ কণ্ঠ-আকর্ষণে। তার “বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ড যেন ফাটিয়া গেল। তারিণী সুখীর দৃঢ় বন্ধন শিথিল করিবার চেষ্টা করিল। কিন্তু সে আরো জোরে জড়াইয়া ধরিল। বাতাস—বাতাস! যন্ত্রণায় তারিণী জল খামচাইয়া ধরিতে লাগিল।” নিরুপায় তারিণীর “পরমুহূর্তেই হাত পড়িল সুখীর গলায়। দুই হাতে প্রবল উন্মত্ত ভীষণ আক্রোশ! হাতের মুঠিতেই তাহার সমস্ত শক্তি পুঞ্জিত হইয়া উঠিয়াছে।” অবশেষে পাথরের মতো বিপুল ভারের পিছুটান মুছে ফেলে সে জলের উপর ভেসে উঠলো, আর “আঃ আঃ বুক ভরিয়া বাতাস টানিয়া লইয়া আকুলভাবে সে কামনা করিল, আলো ও মাটি।”


এই কাহিনী যতই বীভৎস হোক, রুচিবান সভ্য অনভিজ্ঞ পাঠকের চেতনায় এর আবেদন যতই অতর্কিত হোক, এই ‘জৈবিক বেগে’র লীলারহস্য উন্মোচনেই যে তারাশঙ্করের গাল্পিক-সত্তার অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্য, একথা অনস্বীকার্য। 'কল্লোল’ গোষ্ঠীর মতো জীবনদৃষ্টিতে অবিশ্বাস ও দ্বিধা নয়—মানব-স্বভাব সম্বন্ধে অচঞ্চল প্রত্যয়, অভিজ্ঞতার ছায়া ছায়া কাহিনী নয়, জনমনের বারোয়ারীতলা থেকেই চিন্তার সম্পদ কুড়িয়ে নিয়েছেন তারাশঙ্কর। সেখানে মননে শহুরে আভিজাত্য হয়ত নেই, কিন্তু কল্পদৃষ্টির অভাব নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তার কল্পনা কর্ণের রথের মতোই মাটি-ঘেঁষা, অন্ততঃ জীবনের প্রথম পর্ব পর্যন্ত তা না-ছুঁই-মাটি হয়ে চলতে শেখেনি। জৈব পশুসত্তার অন্তরালে দুঃখ-ত্যাগ ও অশ্রুবেদনায় পরিশুদ্ধ মানবচেতনা তাঁর সেই পথচলতি দৃষ্টির সম্মুখে স্বাভাবিকভাবেই উদ্ভাসিত হয়েছে।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে বিশালতা:

তারাশঙ্করের অনেক গল্পেই চরিত্রেরা দেহে ও মনে বিশাল। যেমন ‘জলসাঘরে’র বিশ্বম্ভর রায়, তারিণী মাঝি, ‘পৌষলক্ষ্মী' গল্পের মুকুন্দ পাল, শম্ভু বাজীকর, কিষ্টো বেদে ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, শরীরের এই বিশিষ্ট আকৃতির সঙ্গে বাড়তি জীবনীশক্তির সংযোগে ভাগ্যের বিরুদ্ধে, শত্রুর বিপক্ষে তাদের সংগ্রাম হয়েছে তীব্রতর। তাই দেখা যায়, রায়বংশের জমিদারী ঐশ্বর্য নিঃশেষিত, শেষ উত্তরপুরুষ বিশ্বম্ভর রায়ের দীপ্র যৌবন অস্তমিত, তবু “অতীতের স্মৃতি তারকারাজির মত বুকের আকাশে রায়বংশের মর্যাদার ভাস্কর প্রভায়”। তিনি প্রতিবেশী প্রজাদের চোখে এখনও জাজুল্যমান। এক চরম দুর্বল মুহূর্তে প্রাচীন রীতির প্রতি “মমতার ছায়ায় সে ভাস্করে অকস্মাৎ সর্বগ্রাসী গ্রহণ” লাগে। শোনা যায় “চকমিলানো বাড়ির সুপরিসর সুদীর্ঘ বারান্দায় রায়ের বলিষ্ঠ পদের খড়মের শব্দে” মুখরিত হয়ে ওঠার ধ্বনি। এই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় অতীতের গৃহপ্রাকারে, ‘জলসাঘরে'। আবার সেই বলিষ্ঠ মানুষটির মন সর্বরিক্ত হয়েও সুর ও নৃত্যের ধ্বনিতে দুলে উঠতে চায় : “গানের দীর্ঘমন্থর গতির সময় বিশাল দেহ তঁাহার দুলিতেছে... সঙ্গীতমুগ্ধ অজগরের মত। দেহের মধ্যে শোণিতের ধারা—রায়বংশের শোণিতের অভ্যস্ত উগ্রতায় বেগবতী হইয়া উঠিয়াছে।”


এই যদি হয় বিগত-বিত্ত জমিদারের তৈলচিত্র, তবে মনে হয় গল্পকার যেন দেখে মেপে তারপর কুঁদে তৈরি করে তুলেছেন তারিণী মাঝি, চাষী রঙলাল, মুকুন্দ পাল, শম্ভু বাজীকর, কিষ্টো বেদের মত মানুষদের পেটানো শরীর এবং প্রবৃত্তি-তাড়িত চিত্তকে ; যেমন তারিণী মাঝি এত দীর্ঘ যে তার “অভ্যাস মাথা হেঁট করিয়া চলা। অস্বাভাবিক তারিণী ঘরের দরজায়, গাছের ডালে, সাধারণ চালা ঘরে বহুবার মাথায় বহু ঘা খাইয়া ঠেকিয়া শিখিয়াছে।” এই দীর্ঘায়ত আকার দেখা গেছে কিষ্টো বেদের বর্ণনাতেও। তার শরীর “ছয় ফিটের অধিক লম্বা, শরীরের প্রতিটি অবয়ব সবল এবং দৃঢ়, কিন্তু তবুও দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়।” এই দীর্ঘতা আছে শম্ভুর চেহারাতেও—“আকৃতি দীর্ঘ, সর্বাঙ্গে একটা শ্রীহীন কঠোরতা।” বিপরীতভাবে রঙলাল বা মুকুন্দ পালের মতো প্রাচীন বয়স্ক চাষীদের চেহারা ‘মোটা’ রকমের। তাই চাষী রঙলালের “বলশালী ও প্রকাণ্ড যেমন তাহার দেহ, চাষের কাজে খাটেও সে তেমনি অসুরের মতো।” আবার ‘গাঁদা’, ‘ভীম’, ‘মোটা মোড়ল’ ইত্যাদি নামে ভূষিত মুকুন্দ পাল “এককালে জোয়ানও ছিল খুব ভারি।” শুধু তাই নয়, তাদের চাষের কাজের অংশী ও সঙ্গী যথাক্রমে কালাপাহাড়-কুম্ভকর্ণ নামে দুটি মোষ এবং কেলে বলদ। প্রকৃতপক্ষে, পুরুষের পৌরুষ রূপায়ণে বাংলা গল্প-উপন্যাসে অসংখ্য লেখকদের মধ্যে তারাশঙ্কর অবশ্যই কিছু অতিরিক্ত স্বাতন্ত্র্যের দাবি করতে পারেন।


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে মানুষ ও পশুজীবনের অন্তরঙ্গতা:

চাষী-জীবনের একটি অন্তরঙ্গ পরিচয় তারাশঙ্করের অনেকগুলি গল্পে দেখা গেছে ; যেমন ‘কালাপাহাড়’, ‘পৌষলক্ষ্মী’ ইত্যাদি। কিন্তু চাষী-সমাজের দুরবস্থা বা দুঃখ-দুর্দশায় ভরা জীবনচিত্র অঙ্কনে তিনি তত উৎসাহী নন, যতটা একটি ব্যক্তি চরিত্রের ভুমিকায় সম্পন্ন কৃষিকার্যের সমৃদ্ধতর দৃশ্য দেখাতে উৎসাহী। সেইসঙ্গে আছে মানুষ ও পশুর মধ্যে একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রূপায়ণ।


‘কালাপাহাড়’ গল্পে রঙলাল ছিল সম্পন্ন চাষী। সর্বাঙ্গসুন্দর গোরু ছিল তার আকাঙিক্ষত, এমন গোরু, যেন “এ চাকলার মধ্যে তাহার গোরুর মতো গোরু যেন আর কাহারও না থাকে।” কিন্তু পাঁচুন্দির হাটে মনোমত গোরু না পেয়ে কিনে আনল এক জোড়া মোষ। নিকষের মত কালো, একই ছাঁচে ঢালা, যেন যমজ শিশু! নাম রাখল কালাপাহাড় আর কুম্ভকর্ণ। এদেরই সাহায্যে সে পেল চাষীর চিরকাম্য ধন ধান। যা ছিল স্বপ্ন “মাটির নীরন্ধ্র আস্তরণ লাঙলের টানে চৌচির করিয়া দিলেই মা ঝাপিখানি কাখে করিয়া পৃথিবী আলো করিয়া আসন পাতিয়া বসিবেন।” তাই হল বাস্তব“প্রকাণ্ড বড় গাড়িটায় একতলা ঘরের সমান উঁচু করিয়া ধানের বোঝা চাপাইয়া দেয়—লোকে সবিস্ময়ে দেখে, রঙলাল হাসে।” এই জন্তু দুটির প্রতি গড়ে ওঠে রঙলালের স্বাভাবিক মমতা। তাদের চরাতে নিয়ে যায় নদীর ধারে। তারা ঘাস খেতে খেতে দূরে চলে গেলে সে ডাকে “আঁ— আঁ! অবিকল মহিষের ডাক। দূর হইতে সে শব্দ শুনিয়া কালাপাহাড় ও কুম্ভকর্ণ ঘাস খাওয়া ছাড়িয়া মুখ উঁচু করিয়া শোনে, তারপর উহারাও ওই আঁ আঁ শব্দে সাড়া দিতে দিতে দ্রুতবেগে হেলিয়া দুলিয়া চলিয়া আসে।” মানুষ ও পশুর এই অস্তরঙ্গতা, একাত্ম অভ্যাস অভিনব। তবু স্থায়ী হয় না বেশিদিন এই সম্পর্ক। বাঘের গ্রাস থেকে রঙলালকে বাঁচাতে গিয়ে মারা পড়ে কুম্ভকর্ণ। অদ্ভুত দক্ষতায় গল্পকার তুলে ধরেছেন মোষ-বাঘ মানুষের সেই ভীষণ যুদ্ধচিত্র, আর তারপরেই একটি চিরক্তন করুণ মুহূর্ত : “কুম্ভকর্ণ পড়িয়া শুধু হাঁফাইতেছিল, তাহার দৃষ্টি রঙলালের দিকে। চোখ হইতে দরদর ধারে জল গড়াইতেছে। রঙলাল বালকের মত কাদিতে আরম্ভ করিল।” রঙলাল থেকে এই কান্না যেন পাঠকের চোখে গিয়ে পৌঁছায়।


আবার এই কান্না ভুলে গিয়ে শুধু এক নির্বাক বেদনায় স্তব্ধ হতে হয়, ‘পৌষলক্ষ্মী’ গল্পে মুকুন্দ পালের পরিণতি দর্শনে। কালো কন্ঠিপাথরে খোদাই করা ভৈরব মূর্তির মত ছিল অতীতের দশাসই চেহারা, মুকুন্দ পালের। কিন্তু বর্তমানে ম্যালেরিয়ার আক্রমণে “ধোপার পাটায় আছাড় খাওয়া পুরনো কাপড়ের মত এত বড় দেহখানা জ্যালজ্যাল করছে।” ধরেছে জরা, সেইসঙ্গে নব্য জোয়ান চেকা বা শ্রীকৃষ্ণের ব্যঙ্গের আঘাত। একদিকে শারীরিক যন্ত্রণা, শিরাগুলো “হাড়ের গাঁটে গাঁটে জ’মে গেছে বালিতে মাটিতে জমাট বাঁধা পাথরের চাঁইয়ের মত”। অন্যদিকে মহাজন চেকার বিদ্রুপ এবং শক্তিপরীক্ষার উপযুক্ত জবাব দিতে না পারার অপমানে ক্ষোভে “চোখ দিয়ে এবার তার জল গড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করল।” জরা-বিজয়ের জন্য সে ধরেছে মদ, করেছে শারীরিক কসরৎ, বলে উঠেছে অজান্তে ঊনত্রিশ বছর আগেকার ছড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই হয়েছে তার বিধিলিপি।


বাংলা কথাসাহিত্যে এই বিশাল মাপের চরিত্রসৃষ্টিতে তারাশঙ্করের অবদান তাই কোনমতেই বিস্মৃত হবার নয়।