বাউলগীতি কবি-পরিচয় : লালন ফকির, ফকির পাঞ্জ শাহ

বাউলগীতি কবি-পরিচয়


বাউল ধর্মে জাতিভেদ নেই। বাউল কবিতা বা সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান বহু বাউল কবি-সাধকের দেখা মেলে। পশ্চিমবঙ্গে বীরভূম জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত বাউলদের পীঠস্থান। অন্যদিকে বাংলাদেশে কুষ্ঠিয়া অঞ্চল মুসলিম বাউলদের সাধনকেন্দ্র। তবে প্রাচীনতম বাউল কবিদের সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। বাউল সাহিত্যের প্রধান রূপটি মৌখিক এবং স্মৃতিবাহিত। সেক্ষেত্রে লিখিত পুঁথি বা জীবনীগ্রন্থ দুর্লভ। আবার বাউল সাধনার পথটি গুরুবাহিত বা গুরু নির্দেশিত হওয়ার ফলে গুপ্ত সাধনতত্ত্বের মত বাউল গানের ভণিতায় কবির নাম ছাড়া আর সব কিছুই প্রচ্ছন্ন রাখা হয়েছে। সংসারজীবনে অনিচ্ছুক, আত্মপ্রচারে বিমুখ বাউল সাধকের পরিচয় কেবল মাত্র শিষ্য পরম্পরায় আর লোকমুখে জানা যায়। এইরকম খ্যাতিমান কয়েকজন বাউল কবি হলেন– লালন ফকির, পাঞ্জ শাহ, দুদ্দু শাহ, মদন বাউল। এছাড়া আছেন— গগন হরকরা, হাসন রজা চৌধুরী, হাউড়ে গোঁসাই, গোঁসাই গোপাল, চণ্ডীদাস গোঁসাই, এরফন শাহ প্রমুখ।


লালন ফকির :

লালন ফকির হলেন বাউল গানের ‘আদি গঙ্গা হরিদ্বার। তার জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে প্রামাণিক তথ্য বিরল। কোনো মতে ১৭৭৪ খ্ৰীঃ–১৮৯০ খ্রীঃ; কোনো মতে ১৭৭২-১৮৮১ খ্রীঃ। তবে তিনি যে শতায়ু ছিলেন এ সম্পর্কে কোন দ্বিমত নেই। অনুমান করা হয় নদীয়ার কুণ্ঠিয়ার কুমারখালির কাছে ভাড় বা ভাণ্ডারহাটি গ্রামে লালনের জন্ম হয় এক কায়স্থ হিন্দু পরিবারে। অন্য মতে, তাঁর জন্ম হয় মুসলমানের ঘরে। তার জন্মস্থান হল যশোহর জেলার ঝিনাইদহের হরিশপুর গ্রাম। বিবাহের পরেই তার জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে। লালন তীর্থযাত্রা করেন। পথে দুরারোগ্য বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। সঙ্গী-সাথীরা পরিত্যাগ করেন। তখন সিরাজ সাঁই নামক এক মুসলিম দরবেশ মুমূর্ষু লালনকে সেবা-শুশ্রুষা করেন। তাঁরই কৃপায় লালনের জীবন রক্ষা পায়। লালন দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু দেশের গোঁড়া হিন্দু সমাজ তাঁকে সমাজে স্থান দিতে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয়, মুসলমানের ঘরে চিকিৎসা এবং খাদ্য পানীয় গ্রহণ করার অপরাধে তাঁর প্রতি নানাবিধ অত্যাচার ও নির্যাতন চলে। লালনের হিন্দু স্ত্রীও তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃত হন। নিরুপায় হয়ে লালন তখন সিরাজের কাছে ফকিরী ধর্মে দীক্ষা নেন এবং এক মুসলিম রমণীকে পুনরায় বিবাহ করেন।


সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নিয়ে লালনের নতুন জীবন শুরু হয়। ইতিপূর্বেই তিনি হিন্দুদের তীর্থস্থানগুলি দর্শন করেছিলেন। তারপর সকল ধর্মের সারতত্ত্ব অনুভব করে গুরু-নির্দেশিত সাধনপথে অগ্রসর হন। গুরুলব্ধ সাধনতত্ত্বকে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করেন। কুষ্টিয়ার কাছে কালীগঙ্গার ধারে সেওরিয়া গ্রামে তাঁর আখড়া স্থাপিত হয়। আবার অনেকে বলেন, গড়াই নদীর ধারে ছেঁউর গ্রামে এক বিধবা রমণীকে বিবাহ করে তাঁরই বাড়িতে আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ও মুসলমান উভয় শ্রেণীর অসংখ্য মানুষ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। লালন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উদার মানবধর্ম, সম্প্রদায় ও সমাজবদ্ধ মানুষের প্রতি সঙ্কীর্ণমনা বামুন ও মোল্লাদের অত্যাচার, ভেদবুদ্ধি ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলি প্রকাশ করেন। হিন্দু সমাজের দ্বারা নিগৃহীত হওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর অনেক গানে ব্যক্ত হয়; যেমন তার রচিত দু-একটি বিখ্যাত পদ— “সব লোকে কয় লালন কি জাত অন্তরে” অথবা জাতিবিচারের নামে ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথে বাধার জন্য তাঁর ক্ষোভ

“জাত না গেলে পাইনে হরি

কি ছার জাতের গৌরব করি

ছুঁসনে বলিয়ে।

লালন কয়, জাত হাতে পেলে পুড়াতাম 

আগুন দিয়ে ৷৷”

জাতি-বর্ণের ভেদসৃষ্টিকারী সমাজনেতাদের মিথ্যা নিয়মের বিরুদ্ধে বাউল কবির এই ক্ষোভক্তি অবিস্মরণীয়।


লালনের স্বহস্ত লিখিত কোন পুঁথি বা গানের খাতা পাওয়া যায়নি। তার শিষ্যরা গুরুর মুখে শুনে গান লিখে রাখতেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে থাকার সময় লালনের গানের কথা শোনেন। তিনি লালনের ১৯৮টি গান সংগ্রহ করে তার মধ্যে ২০টি ১৩২২ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৯২টি গানের সংকলন নিয়ে ‘লালন গীতিকা' নামে প্রকাশ করা হয়। লালনের গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য—মনের বন্ধনমুক্তি, ধর্ম বিষয়ে উদারতা, প্রেম সাধনায় শুদ্ধ অনুরাগ, সহজ সরল প্রকাশরীতি। সীমা-অসীম, জীবাত্মা মানবাত্মা সম্পর্কে তিনি অনেক গভীর কথা বলেছেন। লালন বাউল সাধনার কথা প্রকাশ করার সময় রাধাকৃষ্ণের যুগল রূপ, গোপীপ্রেম, শ্রীচৈতন্যবন্দনা করেছেন। আবার সুফী সম্প্রদায়ের সাধনতত্ত্ব-সংক্রান্ত শব্দ, মুসলিম পারিবারিক শব্দ এবং কোরাণের তত্ত্বকথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করেছেন। অনেক সময় হিন্দুর যোগ-তন্ত্রাদি থেকে সাধন-প্রক্রিয়ার ধারা অনুসরণ করে সঙ্গীত রচনা করেছেন। লালনের গোপীপ্রেমের প্রতি আনুগত্যের একটি নিদর্শন

“যে ভাব গোপীর ভাবনা,

সামান্যের কাজ নয় সে-ভাব জানা ।।

বৈরাগ্য-ভাব বেদের বিধি,

গোপিকা-ভাব প্রেমের নিধি, 

ডুবে থাকে তাহে নিরবধি

রসিক জনা .......…......

যেজন গোপী-অনুগত,

জেনেছে সেই নিগূঢ় তত্ত্ব, 

লালন কয় রসিক মত্ত

পেয়ে সেই রসের ঠিকানা ॥”


মনের মানুষকে জেনে সাধক কিভাবে সাধন-পূজন, দেবদেবী শাস্ত্রগ্রন্থ ছেড়ে আত্মার সন্ধানে রত হন লালন সহজ ভাষায় বলিষ্ঠ সুরে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন

“মানুষ তত্ত্ব যা সত্য হয় মন

সে কি অন্য তত্ত্ব মানে।

মাটির ঢিবি, কাঠের ছবি—

ভূত ভাবি সব দেব আর দেবী

ভোলে না সে এসব রূপে

ও যে মনের রতন চেনে ॥”


লালন বলেন, এই মনের রতনকে চেনাই জীবনের সার কথা। তার মতে, “আপনাকে আপনি চেনা/সেই বটে উপাসনা।” আপনাকে আপনি না চিনলে, “লালন বলে, অভিমকালে নাইরে উপায়।” শোনা যায়, লালন ১১৬ বছর জীবিত থেকে প্রায় ৫০০-র মত বাউল গান রচনা করেছিলেন। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে তাঁর গানগুলি রচিত হয়। আনুমানিক ১৮৯০ খ্রীস্টাব্দে তাঁর তিরোধান হয়। ১৯৬৩ খ্রীস্টাব্দে লালনের সমাধিস্থলে একটি বিশাল স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে একটি লোকসাহিত্য কেন্দ্র স্থাপন করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘লালন একাডেমি।’


ফকির পাঞ্জ শাহ :

লালনের পরে বাউল গানের ও সাধনমার্গের প্রথম সারির‌ রচয়িতা হলেন ফকির পাঞ্জ শাহ। তার জন্ম সন ১২৫৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাস। যশোহর জেলার শৈলকূপা গ্রামে এক প্রসিদ্ধ মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয়। পিতার নাম— খাদেম আলী খোন্দকার। তিনি নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। কোন কারণে বিরোধীদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে গ্রাম ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী গ্রাম হরিশপুরে এসে আশ্রয় নেন। সেখানে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার বসতি স্থাপনে তাঁকে সাহায্য করেন। খোন্দকার শিক্ষিত ছিলেন। পাঞ্জ শাহের আরবী-ফার্সী-উর্দু ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। পাঞ্জ পরে গোপনে বাংলা ভাষাও শিখে নেন। পাঞ্জ তার নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ে ইসলামী শাস্ত্রে সুপণ্ডিত হন। ধর্মপ্রাণতার জন্য তিনি গোপনে তরুণ বয়সেই সাধু-সম্ভ ও ফকিরদের আস্তানায় যাতায়াত শুরু করেন। হরিশপুর গ্রামে বৈদান্তিক পণ্ডিত, বৈষ্ণব সাধক এবং হিন্দু বাউল ও মুসলিম‌ ফকিরদের বসবাস ছিল।


স্বভাবতই পাঞ্জের পক্ষে অধ্যাত্মপথের ঠিকানা খোঁজ করার প্রচেষ্টা এখান থেকেই শুরু হয়।

১৮৭৮ খ্রীস্টাব্দে খাদেম আলীর মৃত্যু হয়। পাঞ্জ সুফী সাধক হেরাজতুল্লা খোন্দকারের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর বৈরাগীর বেশ পরে সাধন-ভজনে রত হন। তাঁর মহৎ চরিত্র ও অধ্যাত্ম-সাধনার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাত্ত্বিকতার গুণে অনেকেই তার গুণমুগ্ধ হয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। মাত্র তেত্রিশ-চৌত্রিশ বছর বয়সেই হিন্দু এবং মুসলিম সমাজে এই ফকির গায়কের অসংখ্য শিষ্য দেখা যায়। অথচ নিছক গুরুগিরি করাই তাঁর কাজ ছিল না। আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সাধন-ভজন, দীন-দরিদ্র ও সাধু-সন্তদের সেবা এবং সঙ্গীতরচনার কাজে এই সাধক-কবি মগ্ন ছিলেন।


পাঞ্জ শাহ বাউল-সাধনার অতি উচ্চমার্গের সাধক ছিলেন। তাঁর গান লালনের সমপর্যায়ভুক্ত, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি লালনকেও অতিক্রম করে গেছেন বলে মনে হয়। তিনি সুফী এবং বাউলতত্ত্ব দুই বিষয়েই উৎকৃষ্ট পদ রচনা করেছেন। তার রচিত পদসঙ্গীতগুলির বিশেষত্ব হল

  • (১) অসাম্প্রদায়িক উদার মানবিক দৃষ্টি ও গীতিমাধুর্য।
  • (২) শাস্ত্রের তত্ত্ব অপেক্ষা হৃদয়ের অনুভূতিলব্ধ সত্যকে বেশি মূল্য দেওয়া।
  • (৩) অধ্যাত্ম-সাধনায় নানাবিধ সঙ্কেতের উল্লেখ।
  • (৪) কাব্যধর্মিতা।

পাঞ্জ শাহের রচিত কয়েকটি পদের দৃষ্টান্ত

“যে জানে ব্রজগোপীর মহাভাব,

ও সে জেত্তে মরে কৃষ্ণপ্রেমের করিছে আলাপ।”


আর একটি পদে আছে মানুষতত্ত্বের কথা

“এই মানুষের রঙ্গ-রসে বিরাজ করে সাঁই আমার ৷৷

পাঞ্জ বলে মানবলীলা করেছেন সাঁই চমৎকার।

মানুষ ভজে, মানুষ ধর, মন, যাবি তুই ভবপার ৷৷”


গুরুবাদের প্রকাশ ঘটেছে একটি পদে

“আমায় দেও চরণ তরী 

তোমার নামের জোরে পাষাণ গলে অপারের কাণ্ডারী ।”


রূপকের ব্যবহার করে বাউল সাধনার নিগূঢ় তত্ত্বের রূপচিত্র এঁকেছেন এই মহান কবিসাধক

“ত্রিবেণীর তীরে তীরে সুধার জোয়ার আসে,

সুখ সাগরে মানুষ খেলে বেহাল বেশে ৷৷

উথলে সুধা সিন্ধু, সুধারে সুধার বিন্দু

সুখময় সিন্ধু জলে ছলে ছলে সাঁতার খেলে। 

জীব নিস্তারিতে জোয়ার এসে অধর মানুষ যায় গো ভেসে ॥”


পাঞ্জ শাহের সাধক জীবন এবং কাব্যসাধনার কথা তার পুত্র রফিউদ্দিন খোন্দকার পিতার জীবনীগ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।


অন্যান্য বাউল কবি :

লালন এবং পাঞ্জ শাহ ছাড়া ঊনবিংশ শতকে আরও বহু হিন্দু ও মুসলিম বাউল কবি-রচিত পদের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আছেন দুদ্দু শাহ, গগন হরকরা, হাসন রজা চৌধুরী, হাউড়ে গোঁসাই, গোঁসাই গোপাল, চণ্ডীদাস গোঁসাই, এরফন শাহ, মদন বাউল প্রমুখ। এছাড়াও আছে কিছু অজ্ঞাতনামা বাউল যাঁরা বেশ কিছু উৎকৃষ্ট পদ রচনা করেছেন। এইসব কবি ও তাঁদের রচিত পদের সংখ্যা খুব নগণ্য নয়। এদের মধ্যে গগন বাউল এবং হাসন রজা চৌধুরী বিশ্বকবির প্রিয় গীতিকার হয়ে উঠেছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারী পর্যটনের সূত্রে গগন হরকরার গানের সঙ্গে পরিচিত হন। গগন ছিলেন লালনের শিষ্য পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত। রবীন্দ্রনাথ গগনের গান সংগ্রহ করে তার হিবার্ট বক্তৃতা 'Religion of Man' গ্রন্থে প্রকাশ করেন। গগন বাউল রচিত যে গানটি রবীন্দ্রনাথকে বিশেষ মুগ্ধ করেছিল তা হল

“আমি কোথায় পাব তারে

আমার মনের মানুষ যে রে। 

আমি হারায়ে সে মানুষে

ঘুরে মরি দেশ-বিদেশে ॥”


শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, এই গানের ব্যবহার করে বাউল সমাজের পরিচয় দিয়ে একালের অন্যতম ঔপন্যাসিক কালকূট (সমরেশ বসু) লিখেছেন উপন্যাস—‘কোথায় পাব তারে”। রবীন্দ্রনাথ গগন ছাড়া হাসন রজা চৌধুরীর (১৮৫৪-১৯২২ খ্রী.) গানের উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করেছিলেন ভারতীয় দর্শন সভার সভাপতির ভাষণে এবং 'Religion of Man' গ্রন্থে। ইনি ছিলেন শ্রীহট্ট অঞ্চলের লোককবি এবং বাউল গান রচয়িতা। রবীন্দ্রনাথ তার হির্বার্ট এবং কমলা বক্তৃতায় তাঁর গানের উল্লেখ করেছিলেন। তার রচিত একটি গানের দৃষ্টান্ত

“আমি হইতে অল্লা রসুল আমি হইতে কুল 

পাগলা হাসন রজায় বলে তাতে নাই ভুল ।

আমা হইতে আসমান জমিন আমা হইতে সব।

আমি হইতে ত্রিজগৎ আমি হইতে রব !!”


রবীন্দ্রনাথের পূর্বে বিহারীলাল চক্রবর্তী বাউল গানের সুরমাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে কুড়িটি বাউল গান রচনা করে 'বাউলবিংশতি' নামে কাব্য প্রকাশ করেন। বাউল গানের ভাবধারায় আকৃষ্ট হয়ে সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান হরিনাথ মজুমদার কাঙাল হরিনাথ বা ফিকিরচাদ বাউল নাম নিয়ে বহু পদ রচনা করেন ও একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। হরিনামের একটি বিখ্যাত গান হল—“হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পার করো আমারে” তার শিষ্যদের অনেকেই শিক্ষিত ছিলেন।


এইভাবে বাউল গানের জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব কালের নিয়মে দেশে ও বিদেশে পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। অষ্টাদশ শতক থেকে এর উদ্ভব বিকাশ ও পরিণতি লাভ। তবু আজও আধুনিক রসিক মন বাউল গানে মানবপ্রীতির নতুনতর মাত্রা খুঁজে পায়।