'পুতুল নাচের ইতিকথা' উপন্যাসের বিষয়বস্তু।

গাওদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হারু ঘোষ মেয়ে মতির জন্য পাত্র দেখতে গিয়েছিল পাশের গ্রামে বাজিতপুরে। ফেরার পথে বাজ পড়ে হারু ঘোষ মারা যায়। এই গ্রামেরই ছেলে শশী ডাক্তারি পড়ে ফেরার সময় পথে হারুর মৃতদেহটা দেখতে পায় শেওড়া গাছের তলায়। সে মড়াটাকে উদ্ধার করে এবং সৎকারের ব্যবস্থা করে।


গোপাল দাস শশীর বাবা। তার কারবার দালালি ও মহাজানি। দালালগিরি করে বৃদ্ধ যামিনী কবিরাজের যুবতী বউ জোগাড় করে দেয়। তার এই দালালগিরি ও মহাজনী কারবারের জন্য শশীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। যামিনী কবিরাজের বউ শশী যাকে সেনদিদি বলে ডাকে সেই দিদি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে শশীই পথ্যি-সেবা-যত্ন করে সারিয়ে তোলে বটে, কিন্তু সেনদিদির সেরূপ আর রইল না। মতির মনে শশীর জন্য একটা আলাদা অনুভূতি ছিল। কুসুম, পরাণের বউ-এর সঙ্গে শশীর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।


কার্তিক মাসে বাজিতপুর গ্রামে পুজো উপলক্ষ্যে যাত্রা, পুতুলনাচ, বাজি পোড়ানো হয়। বিনোদিনী অপেরা পার্টির প্রবীরের ভূমিকায় অভিনয় করে শশীর কোলকাতার বন্ধু কুমুদ। কুমুদের সঙ্গে মতির প্রণয় হয় এবং শশীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মতির সঙ্গে কুমুদের বিয়ে হয়। শশী তার বোন বিন্দুকে নন্দলালের নরক থেকে নিয়ে আসে। বিন্দু গ্রামে থাকতে না পেরে পুনরায় কলকাতায় ফিরে যায়। যাদবপণ্ডিত শশীকে বলে সস্ত্রীক তারা রথের দিন মারা যাবে। ‘শশী’, কুসুমকে কথাটা বললে সে সারা গ্রামে প্রচার করে দেয়, বহু লোক তাদের দেখতে আসে। যাদবপণ্ডিত তার কথা মত স্বেচ্ছামৃত্যুর উপকরণ হিসাবে আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করে। তবে মারা যাবার আগে গ্রামে হাসপাতাল তৈরির জন্য সমস্ত সম্পত্তি শশীকে উইল করে দেয়।


অন্যদিকে কুমুদ নতুন বউ নিয়ে একটা হোটেলে ওঠে, টাকা বাকি হয়ে যাওয়ায় হোটেল মালিককে বোকা বানিয়ে তার বন্ধু বনবিহারীর বাড়িতে ওঠে। সব কিছু দেখে মতি অবাক হয়ে যায়। বিয়ের আগে বিনোদিনী অপেরা পার্টির কাছ থেকে কুমুদ দুশো টাকা আগাম নিয়ে দল ছেড়েছিল, আবার সেই বিনোদিনী অপেরায় যোগ দেয় কুমুদ। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মতি তার যাত্রাপথের সঙ্গিনী হয়।


সেনদিদির সঙ্গে গোপালের অবৈধ প্রেমের হিসাবে একটা ছেলে হয়। বেশি বয়সে সন্তানের জন্মদেবার সময় সেনদিদি মারা যায়। গোপাল ছেলেটার দায়িত্ব নিলে শশীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব আরম্ভ হয়। কুসুম বাপের বাড়ি চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় শশী তার ডাকে সাড়া না দেবার জন্য। শেষে শশী যখন তাকে ডেকে পাঠায় তখন সে বলে—“উত্তপ্ত লোহা ঠান্ডা হয়ে গেছে।” কুসুমের বাপের বাড়ি চলে যাওয়া শশীর মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। সেনদিদির ছেলেকে কেন্দ্র করে পিতা পুত্রের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। শশী ঠিক করে সে কোলকাতায় চলে যাবে। শশীকে কোনোভাবে আটকাতে না পেরে তার যাবার দুদিন আগে গোপাল শশীকে বলে সে কাশী বিশ্বনাথ দর্শনের জন্য যাবে এবং যায়ও। কিন্তু সেনদিদির ছেলে নিয়ে গোপাল আর ফিরে আসে না। ফলে শশীকে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে গ্রামে থেকে যেতে হয়।