কবিকঙ্কন-চণ্ডী অবলম্বনে নদনদীগণের কালিঙ্গদেশে যত্রার বিবরণ দাও। ‘কলিঙ্গ রাজ কর্তৃক বর্ষার শান্তি’ কেমন করে হয় নির্দেশ করো।

দেবী প্রদত্ত অঙ্গুরী নিয়ে কালকেতু মুরারি শীলের কাছ থেকে সাত কোটি টাকা নিয়ে গুজরাট নগর স্থাপন করল। নগর, মন্দির মসজিদ প্রভৃতির নির্মাণ এবং অসংখ্য পুকুর, কৃপ কাটান হল। বিশ্বকর্মাও হনুমানের সহায়তায় বীরের পুরী এবং চণ্ডীর দেউল নির্মিত হল। কিন্তু কালকেতুর মনে দুঃখ ঘুচল না। নগর পত্তন হল, কিন্তু প্রজাহীন নগর। কালকেতু দেবীর শরণাপন্ন হল। দেবীর পদ্মাবতীর সঙ্গে পরামর্শ করে স্থির করলেন কলিঙ্গে ঝড় বৃষ্টি বন্যা সৃষ্টি করে তথাকার প্রজা গুজরাটে আনয়ন করবেন। এই উদ্দেশ্যে দেবী চণ্ডী গঙ্গার সহায়তা চাইলে গঙ্গা তাকে গালমন্দ করে তাড়িয়ে দিলেন। অবশেষে সমুদ্র ও ইন্দ্রের সহায়তায় কলিঙ্গে প্রবল বর্ষণ, ঝড়-বৃষ্টি দান করলেন।


ইন্দ্রের আদেশে পঞ্চাশ পবনে ভর করে মেঘ সকল কলিঙ্গ ভূমির আকাশ ছেয়ে ফেলবে। শুরু হল কলিতে প্রবল ঝড় বৃষ্টি–

“মেঘ-কৈল অন্ধকার মেঘ কৈল অন্ধকার।

দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।


ঝড় রণমূর্তি ধারণ করে প্রবল বেগে বইতে শুরু করল। সমস্ত পৃথিবী জলময় হয়ে গেল। মেঘের গর্জনে আকাশ বাতাস পাতাল যেন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। গর্ত ছেড়ে ভুজঙ্গগণ বাইরে এসে বাস৷ বাধল অট্টালিকায়, মঠে। প্রাসাদ অট্টালিকা ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হতে লাগল।


দেবীর আজ্ঞায় স্বর্গ থেকে মন্দাকিনী কলিঙ্গদেশ পানে ধেয়ে চলল। ভোগবতী পাতাল ভেদকরে চলল। গঙ্গা, শোন, দামোদর, শিলাই চন্দ্রভাগা শত শত নদনদী ছুটে চলল, প্লাবন মহাপ্লাবন দেখা দিল কলিঙ্গ দেশে। যে গঙ্গা, দেবীকে বলেছিলেন—'দিদি পরপীড়া দেখি লাগে ভয়। সেও ভাসাতে ছুটে এল। চারিদিকে মানুষ, হাতিঘোড়া জলে ভাসতে থাকল। অট্টালিকার ভিতর হু হু করে জল প্রবেশ করতে থাকল। তখন-

“দেখিয়া জলের রীতি   মনে চিন্তে নরপতি

সাজন করিয়া আনে নায়।

পরিবার সনে রাজ্য   করিয়া নায়ের পূজা

আরোহণ কৈলদণ্ড রায়।।”


প্রবল বর্ষণ দেখে, কলিঙ্গ দেশের ধ্বংসপ্রায় অবস্থা দেখে পণ্ডিতগণ বললেন, কোনও কারণে ইন্দ্র রাজার প্রতিক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তাই তাঁর এই অভিযান। অতএব রাজার উচিত ইন্দ্রকে সন্তুষ্টি করা। পণ্ডিতগণের কথামত রাজা জলে কনক অঞ্জলি দান করিলেন। নদনদী তখন যে যার নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রা করল। এই প্লাবনের ফলে কলিঙ্গবাসীর যা ক্ষতি হল তা অপূরণীয়। মহেশ্বর দাস, ভাঁড়ু দত্ত, বুলান মণ্ডলের মতো সম্পন্ন গৃহস্থ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত হয়ে গেল। কিন্তু রাজা তাঁর পাওনা গন্ডার এক পয়সা ছাড়লেন না। প্রজারা দারুণ বিপাকে পড়ে চিন্তা করল—

“কলিঙ্গ রাজার ঠাঁই না পাব নিস্তার।"