চৈতন্যচরিত সাহিত্য : সনাতন গোস্বামী, শ্রীজীব গোস্বামী

সনাতন গোস্বামী :


সনাতনের স্বীকৃতি প্রধানত শাস্ত্রকার হিসেবে, কিন্তু রূপের প্রতিষ্ঠা মূলতঃ কাব্যকার এবং রসজ্ঞ লেখক রূপে, আর তাঁদেরই ছাত্রশিষ্য শ্রীজীবের মধ্যে লক্ষিত হয় যেন উভয় প্রতিভার দ্বৈত সমন্বয়। সনাতন রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— (১) দু'খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘বৃহভাগবতামৃতম' (২) 'হরিভক্তিবিলাস’ ও তার টীকা ‘দিক্‌প্রদর্শনী’ (৩) ‘লীলাস্তব’ (৪) ‘বৃহৎ বৈষ্ণবতোষণী’। নরহরি চক্রবর্তীর গ্রন্থ সাক্ষ্য অনুযায়ী, ‘লীলাস্তব’ ‘দশমচরিত’ নামেও পরিচিত ছিল।


প্রথম গ্রন্থটি মহাভারতের জৈমিনী-জনমেঞ্জয়ের মতো বক্তা ও শ্রোতার ভূমিকায় উপস্থাপিত। প্রথমাংশে পুরাণোক্ত দেব ও মানব চরিত্র-অবলম্বনে ভক্তিকথা বর্ণনা; দ্বিতীয়াংশে আছে প্রাগজ্যোতিষের অধিবাসী তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ ও মথুরার এক গোপ বালকের কথোপকথনে ধর্মজগতের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার বিবৃতি। কাব্যটির মূল উদ্দেশ্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ব, দর্শন ও আদর্শের ব্যাখ্যা। গ্রন্থটির আর একটি গুরুত্ব মঙ্গলাচরণের প্রথম ও তৃতীয় শ্লোকে শ্রীচৈতন্যকে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে অভেদ রূপে বর্ণনা, টীকায় আছে আবির্ভাবের ব্যাখ্যা— “যদ্যপি শ্রীচৈতন্যদেবো ভগবদবতার এব তথাপি প্রেমভক্তি-বিশেষপ্রকাশনার্থং স্বয়মবতীর্ণত্বাতেন তদর্থতং স্বয়ং গোপী ভাবোঽপি ব্যঞ্জতে।”


গ্রন্থটির দ্বিতীয় গুরুত্ব, রাধাকে গোপীশ্রেষ্ঠা অথবা কৃষ্ণাধিকা রূপে স্বীকৃতিদান সম্পর্কে রচয়িতা আশ্চর্যরূপে নীরব। ‘লীলাস্তবে’র মধ্যে লক্ষ্যণীয় বিষয়, শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীচৈতন্যের এবং জগন্নাথের প্রতি রচয়িতার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তবে কৃষ্ণের সঙ্গে চৈতন্যের অভিন্নত্ব নয়, যতিচূড়ামণি কৃষ্ণচরণপদ্মে বিভোর, প্রেমামৃতের মহাসমুদ্ররূপে মহাপ্রভুর মহিমা বর্ণিত। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় প্রেম-ভক্তি প্রচার করাই শ্রীচৈতন্য অবতারের মুখ্য উদ্দেশ্য – “..প্রেমভক্তি-বিতানার্থং গৌড়েস্ববততার যঃ”। অদ্বৈত ও নিত্যানন্দের সশ্রদ্ধ নামোল্লেখও দেখা যায়।


সনাতন গোস্বামীর নামে প্রচলিত তিনটি গ্রন্থের রচয়িতা সমাচ্ছন্ন। প্রথমত, ‘হরিভক্তি বিলাসে’ গোপাল ভট্টের সঙ্গে যুক্ত তাঁর নাম-সমস্যা; দ্বিতীয়ত, ‘লীলাস্তবের’ মধ্যে শ্রীরূপের তেইশটি কবিতার উপস্থিতি এবং তৃতীয়ত, ‘গীতাবলী’ নামক গ্রন্থে একচল্লিশটি গানে সনাতনের নামোল্লেখ বর্তমান। অথচ শেষোক্ত গ্রন্থটির নাম তার নামে স্বীকৃত গ্রন্থতালিকায় পাওয়া যায় না। তবু বৈষ্ণবশাস্ত্রের গবেষকরা এব্যাপারে একমত নন। তুলনামূলকভাবে রূপ গোস্বামীর গ্রন্থের সংখ্যা অগ্রজের অপেক্ষা অনেক বেশি।


নরহরির মতে, সম্পূর্ণ গ্রন্থসংখ্যা যোল, কিন্তু শ্রীজীবের বিবরণে এই সংখ্যা বারোটি : (১) ‘হংসদূতম্’, (২) 'উদ্ধবসন্দেশ', (৩) '‘স্তবমালা’র অন্তর্ভুক্ত ‘ছন্দোঽষ্টাদশকম্’‌ ‘উৎকল্লিকাবল্লী’, ‘গোবিন্দবিরুদাবলী’ ও ‘প্রেমেন্দু-সাগরাদিস্তব’, (৪) “বিদগ্ধমাধবম্’, (৫) 'ললিতমাধবম্', (৬) 'দানকেলিকৌমুদীভণিকা’, (৭) 'ভক্তিরসামৃতসিন্ধু, (৮) 'উজ্জ্বলনীলমণি', (৯) 'মথুরামহিমা’, (১০) 'পদ্যাবলী', (১১) ‘নাটকচন্দ্রিকা', (১২) সংক্ষিপ্ত ভাগবতামৃত' এবং 'ভক্তিরসামৃতশেষ'।


গ্রন্থরূপ অনুযায়ী এইগুলি— নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, কাব্য ও কাব্যসঙ্কলন, রসতত্ত্ব ও অলঙ্কারশাস্ত্র এবং ধর্মতত্ত্ব। বিষয়— প্রধানতঃ রাধা-কৃষ্ণের লীলাবর্ণনা এবং বৈষ্ণব রসশাস্ত্রের ভাষ্যরচনা।


‘হংসদূত’ এবং ‘উদ্ধবসন্দেশ' দুটিই দূতকাব্য, উভয় ক্ষেত্রেই যাত্রাপথ-মথুরা থেকে বৃন্দাবন। পার্থক্যও আছে। প্রথমটিতে শ্বেত হংস রাধার বার্তাবহ, দ্বিতীয়টিতে উদ্ধব নামক ভক্ত কৃষ্ণের বাণীবহ, একটি শিখরিণী ছন্দে, অপরটি মন্দাক্রাস্তা ছন্দে লেখা। কাব্য দুটি আবেগের ঐকান্তিকতা এবং করুণ বেদনায় শুচিস্নিগ্ধ, ভাষা ও অলঙ্কারের বিস্ময়কর চাতুর্যে পূর্ণ। তার স্তোত্রগুলির প্রথম তিনটি স্তবকে চৈতন্যবন্দনা, অন্যত্র রাধাকৃষ্ণের লীলাবর্ণনা। হৃদয়বেগের চেয়ে বক্তব্যের চারুত্বই এখানে বেশি।


‘দানকেলিকৌমুদী’ আঙ্গিক এক অঙ্কে সমাপ্ত ভাণিকা নাটক। বসুদেবের যজ্ঞে যাত্রিণী রাধা ও সখীদের সঙ্গে কৃষ্ণ ও গোপ-বালকদের প্রেমকলহ ও রঙ্গ-কৌতুক এর মুখ্য বিষয়। সাহিত্যমূল্য অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু 'বিদগ্ধমাধব’ ও ‘ললিতমাধব’ সাত অঙ্কে এবং দশ অঙ্কে সমাপ্ত পূর্ণাঙ্গ নাটক। প্রথম নাটকে রাধা-চন্দ্রাবলী-ললিতা বিশাখার সঙ্গে কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা বর্ণিত। দ্বিতীয়টিতে পূর্বোক্ত পাত্রপাত্রীর সঙ্গে সত্যভামার উপস্থিতি রূপায়িত; দ্বারকা-মথুরা ও বৃন্দাবনের তিনটি লীলার একত্র উপস্থাপনা। এই নাটক দুটিতে লক্ষ্যণীয়, বিষয়-পরিকল্পনার বিস্তৃতি, স্বকীয়া ও পরকীয়া নায়িকা-দ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা এবং নাট্যকার হিসাবে রূপ গোস্বামীর দক্ষতা।


তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’ ও ‘উজ্জ্বলনীলমণি’ নামক রস ও অলঙ্কারশাস্ত্রের গ্রন্থ দুটি। প্রথম গ্রন্থটি ‘বিভাগ’ ও ‘লহরী’তে বিভক্ত। ভক্তিরস (মুখ্য ভক্তিরস ৫টি, গৌণ ভক্তিরস ৭টি) সমস্ত স্থায়ীভাবের মূলমন্ত্র বলে গ্রহণ করে কৃষ্ণরতিকে প্রাধান্য দানের প্রচেষ্টাতেই এ গ্রন্থের মধ্যে দেখা গেছে ভক্তিদর্শনের বহুমিশ্র বর্ণনা। বলা বাহুল্য, এই গ্রন্থের বক্তব্য কেবলমাত্র বৈষ্ণব পদকার এবং ভক্তের কাছেই শিরোধার্য। তবে প্রতিভার সঙ্গে পরিশ্রমের যে অসাধারণ সম্মেলন এখানে বর্তমান, তার গুরুত্বও খুব কম নয়।


‘উজ্জ্বলনীলমণি’ গ্রন্থটিতে দেখা যায় অলঙ্কারশাস্ত্রের অপ্রাকৃত পটভূমিকায় শৃঙ্গাররসের নতুন ব্যাখ্যা। শাক্ত, প্রীতি, প্রেম, বাৎসল্য ও মধুর এই পাঁচটি রসের মধ্যে উজ্জ্বল একমাত্র শৃঙ্গাররস, স্থায়ীভাব যার ‘প্রিয়তা’ বা ‘মধুরারতি'। অনিবার্যভাবেই রাধা-কৃষ্ণ এখানেও আদর্শ নায়ক-নায়িকা। রূপ গোস্বামী প্রমাণ করেছেন ষোলো’শ ব্রজগোপীরা কেউই পরকীয়া নন—“ন জাতু ব্রজদেবীনাং পতিভিঃ সহ সঙ্গমঃ” তারা গান্ধবমতে বিবাহিত কৃষ্ণেরই পত্নী, কৃষ্ণেরই মায়ায় তাঁদের স্বামীর সঙ্গে সহবাস। ‘ধাতুমালিকা’ ও ‘সূত্রমালিকা’ এখনো অনাবিষ্কৃত। প্রাপ্ত গ্রন্থটি খুব সম্ভব বৈষ্ণব বালকের ব্যাকরণ শিক্ষার উদ্দেশ্যে লেখা। কারণ গ্রন্থে উল্লিখিত উদাহরণে রাধাকৃষ্ণ ও তাঁদের ‘গণে’র দৃষ্টাস্তে তার পরিচয় আছে। আলঙ্কারিক আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে ‘রসামৃতাশেষ’ (ভক্তিরসামৃতশেষ) গ্রন্থে। বিশ্বনাথ কবিরাজের আদর্শ এখানে অনুসৃত। তবে প্রাপ্ত গ্রন্থটির প্রামাণিকতা সংশয়াতীত নয়।


শ্রীজীব গোস্বামী :

জীবের পিতার নাম বল্লভ। তিনি গৌড় সুলতানের কর্মচারী ছিলেন এবং গৌড়েশ্বরের কাছে ‘অনুপম মল্লিক’ উপাধি পান, ‘চৈতন্যচরিতামৃতে’ আছে, “অনুপম মল্লিক তার নাম শ্রীবল্লভ”। বল্লভ ১৫১৫ খ্রীস্টাব্দে প্রয়াগে শ্রীচৈতন্যের দর্শন পান, তার অল্পকাল পরে তার মৃত্যু হয়। সুতরাং জীব ১৫১৫ খ্রীস্টাব্দের আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সন্দেহ নেই। ১৫৯২ খ্রীস্টাব্দে তিনি ‘গোপালচম্পু’ সম্পূর্ণ করেন, অতএব অন্তত ঐ বছর পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন।


অষ্টাদশ শতাব্দীর বিভিন্ন উক্তি বিশ্বাস করলে বলতে হয়, শ্রীজীব অন্তত ১০০ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। ‘ভক্তিরত্নাকরে’ আছে চৈতন্যদেব যখন রামকেলিতে আসেন, তখন জীব তার দর্শন পান—“শ্রীজীবাদি সংগোপনে প্রভুৱে দেখিল।” এ ঘটনা ঘটে ১৫১৪ খ্রীস্টাব্দে। ঐ সময় জীবের বয়স চার বছর ছিল ধরলে তার জন্মাব্দ হয় ১৫১০ খ্রীস্টাব্দে আবার বর্ধমান সাহিত্য সভায় রক্ষিত একটি সংস্কৃত পাতড়া থেকে জানা যায় জীব ১৫৩২ শকাব্দে অর্থাৎ ১৬১০-১১ খ্রীস্টাব্দে পরলোকগমন করেন। আরো জানা যায়, শ্রীজীব বিবাহের রাত্রে সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান।


ষড় গোস্বামীর মধ্যে কনিষ্ঠ জীব গোস্বামী। তবু কবি-তাত্ত্বিক-দার্শনিকের ভূমিকা ছাড়া তার অন্যতম পরিচয়, বাংলাদেশে ব্রজমণ্ডলের সিদ্ধান্ত প্রচারের প্রধান উদ্যোক্তা এবং সম্প্রদায়ের তত্ত্ব-ঘটিত সংশয়ের মীমাংসকরূপে। বস্তুতপক্ষে, চৈতন্য-প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্মের চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদানই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। তার প্রতিভা বহুগামী, তবে, শেষ পর্যন্ত দার্শনিকের পরিচয়েই তিনি প্রতিষ্ঠিত। প্রায় সাঁয়ত্রিশ বছর ধরে ১৫৫৫ থেকে ১৫৯২ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি গ্রন্থরচনায় নিযুক্ত ছিলেন। গ্রন্থের ক্রমাগত সংশোধন এবং পরিবর্তন জীব গোস্বামীর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে দেখা যায়। তাঁর কাব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—‘গোপাল চম্পূ', 'সংকল্প কল্পদ্রুম’, ‘মাধবমহোৎসবম', ‘গোপালবিরুদাবলী’।


ব্যাকরণ ও রসশাস্ত্রবিষয়ক গ্রন্থ— 'হরিনামামৃতব্যাকরণ’, ‘সূত্রমালিকা’, ‘রসামৃতশেষ’, ‘দুর্গমসঙ্গমণি’, ‘লোচনরোচনী’।


বৈষ্ণবস্মৃতি ও ধর্মতত্ত্ব— ‘কৃষ্ণচার্যদীপিকা’, ‘গোপালতারিণী’, ‘ব্রহ্মসংহিতা’, ‘ক্রমসন্দর্ভ’, ‘লঘুতোষণী' এবং ‘বৈষ্ণববন্দনা'।


দর্শনগ্রন্থ— 'ভাগবত সন্দর্ভ বা ষটসন্দর্ভ (অর্থাৎ, তত্ত্ব, ভগবৎ, পরমাত্মা, শ্রীকৃষ্ণ, ভক্তি এবং প্রীতি নামে ছ’টি স্বতন্ত্র ‘সন্দৰ্ভ’ গ্রন্থ) এবং ‘সর্বসংবাদিনী'।


সত্তরটি অধ্যায় বিশ্লেষিত দুটি খণ্ডে বিভক্ত ‘গোপালচম্প’তে প্রসঙ্গ পুরোনো, অর্থাৎ সেই গোপীদের স্বকীয়ারূপে প্রমাণের প্রচেষ্টা। স্বভাবতই কাব্যত্ব অপেক্ষা পাণ্ডিত্যের পরিচয়ই এখানে প্রকট। পরবর্তী কাব্যটি পূর্ববর্তী কাব্যে বর্ণিত কৃষ্ণের নিত্যলীলা বিবরণের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। 'মাধবমহোৎসব’ বা ‘বিলাপকুসুমাঞ্জলি’তেও কথাবস্তু নতুন কিছু নয়। রাধাকৃষ্ণের অভিষেক-বর্ণনা, পূর্বাচার্য রঘুনাথ দাস গোস্বামীর অনুসরণে বিস্তৃত আকারে লেখা। শ্রীনিবাস আচার্যকে লেখা তার একটি পত্র থেকে জানা যায়, ৩৭ বছর পরেও তিনি 'মাধবমহোৎসব' সংশোধন করেছেন।


বৈষ্ণবস্মৃতি ও ধর্মতত্ত্ব-বিষয়ক গ্রন্থগুলি, ভাগবত-সংহিতা এবং রূপ গোস্বামীর গ্রন্থের টীকা-রচনা। “বৈষ্ণববন্দনা' পুস্তিকাটির আবিষ্কারক ও উল্লেখকর্তা ড. বিমানবিহারী মজুমদার। বরানগর গ্রন্থমন্দিরে প্রাপ্ত এর পুঁথিতে নিত্যানন্দ ও তাঁর ভক্তদের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।


জীব গোস্বামীর প্রতিভার সর্বশ্রেষ্ঠ স্মারক তার ‘সন্দর্ভ-বিষয়ক’ গ্রন্থগুলি। গৌড়ীয় বৈষ্ণবদর্শনের আদ্যস্ত আলোচনা এখানে আছে। অথচ আবেগের পিছুটান মুছে ফেলে যুক্তিজাগর মনোভঙ্গীতে আশ্চর্য দক্ষতায় দার্শনিক তত্ত্ব ও সিদ্ধান্ত ধাপে ধাপে সুবিন্যস্ত হয়েছে। যেমন ‘তত্ত্বসন্দর্ভে দর্শনের প্রাথমিক কথা—ব্রহ্মের স্বরূপশক্তি, তটস্থা শক্তি ও বহিরঙ্গা শক্তির পরিচয়দান; ‘পরমাত্মা সন্দর্ভে’ জীবন ও প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা, ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভে’ আছে কৃষ্ণ ও গোপীদের তত্ত্বপ্রসঙ্গ, ‘ভক্তিসন্দর্ভে’, জীবের কৃষ্ণভক্তির স্বরূপ আলোচিত, বৈধ ও রাগানুগা ভক্তির বিস্তারিত পরিচয়দান; ‘প্রীতিসন্দর্ভে’ মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ভগবৎপ্রীতি বা প্রেমভক্তি বিষয়ে উপদেশ দান“বৈয়াকরণরূপে শ্রীজীব গোস্বামীর নিপুণতা জানা যায় কেবলমাত্র ‘হরিনামামৃত’ ব্যাকরণ থেকেই। তবু একথা অস্বীকার করা যায় না বৈষ্ণব সমাজ ও ধর্মগোষ্ঠীতে শ্রীজীব গোস্বামী ছিলেন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব।”