বহুবাজার রঙ্গনাট্যালয় সম্পর্কে যা জানো লেখো।

বহুবাজার রঙ্গনাট্যালয়

১৮৫৮ সাল থেকেই প্রকৃতপক্ষে সখের বাংলা নাট্যশালার যুগ শুরু এবং ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত সখের নাট্যশালার পূর্ণবিকাশ ও সমৃদ্ধি পর্ব। এই যুগেরই সখের বড়ো নাট্যশালাগুলির মধ্যে বহুবাজার নাট্যালয়টি চতুর্থ স্থানাধিকারী। গোবিন্দচন্দ্র সরকারের বাড়িতে বিশ্বনাথ মতিলাল লেনে প্রথমে নাট্যশালাটি স্থাপিত হয়েছিল 'বহুবাজার নাট্যসমাজ' নামে চুনীলাল বসু এবং বলদের ধরের প্রচেষ্টায়। ‘পাথুরিয়াঘাটা থিয়েটারে' এরা দুজনেই অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছিলেন, এই থিয়েটারের জন্য নাটক লিখে দিতেন বিখ্যাত নাট্যকার মনোমোহন বসু। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে লেখা 'রামাভিষেক' নাটক এখানে প্রথম অভিনীত হয়। নাটকটির দ্বিতীয় অভিনয় দেখে বরানগরের একজন দর্শক 'ন্যাশানাল পেপারে' একখানি প্রশংসাসূচক পত্রও লিখেছিলেন।


সেই পত্রে পত্রকার যা বলেছিলেন, তাতে জানা যায় যে, প্রথমত মঞ্চ অতি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল, অর্থের দ্বারা যতখানি সুন্দর করা সম্ভব। প্রয়োজনানুযায়ী দৃশ্যগুলিও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, দর্শকদের খুব আপ্যায়িত করা হয়েছিল। তৃতীয়ত, অভিনেতারা উপযুক্ত ও রুচিসম্পন্ন পোষাক-পরিচ্ছদ ধারণ করেছিলেন এবং “Lastly the whole performance was excellent' কারণ বনাত্মক নাটকটির অভিনয় দর্শনে চোখের জলে পোষাক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে সকলেই প্রায় রুমাল বার করতে বাধ্য হন।


এর পাঁচ বছর পর স্থানীয় কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ২৫নং বিশ্বনাথ মল্লিক লেনে বহুবাজার নাট্যগোষ্ঠীর নূতন মঞ্জু “বহুবাজার রঙ্গ নাট্যালয়” নামে নির্মিত হল। এইসব নির্মিত গৃহে ১৮৭৪-র ১৭ জানুয়ারি মনোমোহন বসুর 'সতী' নাটকের অভিনয় হয়। ‘অমৃতবাজার পত্রিকা' এ অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। কয়েকবার এ নাটকের পুনরাভিনয়ও হয়। শেষ অভিনয় হয় ১৮৭৪-র ৪ এপ্রিল। ১৪ মার্চের অভিনয়ে ভিজিয়ানার মহারাজা, নাটোরের রাজা চন্দ্রনাথ রায় এবং ‘পাকুড়ের রাজা প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।


১৮৭৪ সালের ডিসেম্বরে কী ১৮৭৫-র জানুয়ারিতে মনোমোহন বসুর হরিশচন্দ্র নাটকটি এখানে অভিনীত হয়েছিল। 'মধ্যস্থ' পত্রিকায় (১২৮১ মাঘ) বলা হয়েছিল—“আমরা বারদ্বয় দর্শন করিয়া পরম প্রীত হইয়াছি”। বহুবাজার বঙ্গনাট্যালয়ের সম্পাদক ছিলেন প্রতাপচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলকমল মিত্র এবং অন্যান্য কয়েকজন ছিলেন এর স্বত্বাধিকারী।