গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা ও অভিনীত নাটক সম্পর্কে যা জানো লেখো।

ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই মতান্তর, দলাদলি ইত্যাদি নানাকারণে দুভাগ হয়ে শেষে বন্ধ হয়ে যায়। ওদিকে বেঙ্গল থিয়েটারে রমরম করে অভিনয় চলছে— ‘মোহান্তের এই কি কাজ !' নাটক দেখতে ভুবনমোহন নিয়োগী ও কয়েকজন ন্যাশানালের অভিনেতা টিকিট না পেয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন। তখন অমৃতলাল বসু, নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ধর্মদাস সুর প্রভৃতি অভিনেতারা উদ্যোগী হয়ে এবং ধনী ভুবনমোহন নিয়োগীর অর্থে নতুন থিয়েটার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়। কাজেই ন্যাশানা থিয়েটারের ঐতিহ্য ধরে রাখবার জন্য 'ন্যাশানাল' নামটুকু নিয়ে গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হয়। বিডন স্ট্রিটে মহেন্দ্রনাথ দাসের (বর্তমানে মিনার্ভা থিয়েটার) জমি নিয়ে কাঠের থিয়েটার বাড়ি তৈরি করা হয়। তৈরির দায়িত্ব নেন ধর্মদাস সুর।১৮৭৩-এর ২৯সেপ্টেম্বরে নাট্যশালাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তেরো হাজার টাকা খরচ করে তিন মাসের চেষ্টায় এটি গড়ে ওঠে। ওই সালে ৩১ ডিসেম্বর এখানে উদ্বোধন হয় অমৃতলাল বসুর ‘কাম্যকানন'। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম রাত্রেই কিছুক্ষণ অভিনয় চলার পর Star light থেকে আগুন লেগে থিয়েটার বাড়ির ক্ষতি হয়।


দুর্ঘটনার পরদিনই বেলভেডিয়ার বাজারে 'নীলদর্পণের' (০১.১.১৮৭৪) অভিনয় হয় ফ্যান্সী মেলা উপলক্ষ্যে। অতঃপর দন্ধ নাট্যশালাটির দ্রুত সংস্কার করে এই নাট্যসম্প্রদায় ১৮৭৪-র ১০ জানুয়ারি উমেশচন্দ্র মিত্রের ‘বিধবা বিবাহ' মঞ্চস্থ করেন। প্রথম অভিনয় রজনির দুর্ঘটনার জন্যে ১৮ মার্চ বিনামূল্যে দীনবন্ধুর 'নবীন তপস্বিনী' ৭ মার্চ 'বিষবৃক্ষ' ৪ এপ্রিল–কপালকুণ্ডলা, ১৮ মার্চ 'হেমলতা' এবং ৩০ 'কুলীনকন্যা' বা 'কমলিনীর' অভিনয় করলেন 'গ্রেট ন্যাশানাল' দল। এরপর প্রায় চার মাস এঁদের থিয়েটার বন্ধ থাকে। এরপর গ্রেট ন্যাশানাল দল মফঃস্বলে অভিনয় করতে বের হল এবং বরহমপুরে উপস্থিত হয়ে সেখানে সাহেবদের তৈরি ‘স্টেশন থিয়েটারে’ ‘হেমলতার’ (২২.৬.১৮৭৪) প্রথম অভিনয় করেন। যাইহোক, এখান থেকে কলকাতায় ফিরে ‘ন্যাশানাল থিয়েটার' দল তাঁদের অভিনয়কে আদরণীয় করে তোলার জন্যে কয়েকজন অভিনেত্রীকে গ্রহণ করলেন। এঁরা হলেন— কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, যাদুমণি, হরিদাসী ও রাজকুমারী। শুধু তাই নয়, নৃত্যগীত সহযোগে তাঁরা অপেরার অভিনয় করতে চাইলেন। নাচে গানে ও অর্কেস্ট্রার মধুর ধ্বনিতে দর্শকদের আকর্ষণ করবার জন্য 'সতী কি কলঙ্কিনী'র বিজ্ঞাপন বার হল।

"Sati ki Kalankini

Dancing and Singing Throughtout 

(অমৃতবাজার পত্রিকা)।


স্ত্রী অভিনেত্রী গ্রহণে এবং সংগীতাচার্য মদনমোহন বর্মনের সুর সংযোজনায় অপেরাটি সকল শ্রেণির দর্শকদের আকৃষ্ট করে। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৮৭৪ তারিখে খুব সমারোহের সঙ্গে অপেরাটি অনুষ্ঠিত হল। পরের সপ্তাহে নাটকটির পুনরাভিনয় হয়–দর্শকদের মাঝে অনেকখানি আশার সঞ্চার হয়। অক্টোবর মাসের ৩ ও ১০ যথাক্রমে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘পুরুবিক্রম’ নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সতী কি কলঙ্কিনী' ও কিরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভারতে যবন' অভিনয়ের পর পূজাবকাশে কিছুদিনের জন্য থিয়েটার বন্ধ থাকে। পরে ম্যাকবেথ’, ‘আনন্দকানন’ ও ‘কিঞ্চিৎ জলযোগ’ অভিনীত হয়। এই কয়টি অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ‘গ্রেট ন্যাশানাল’ পূর্বের চেয়ে অধিকতর সাফল্য লাভ করল। কিন্তু এ থিয়েটারের ঘন ঘন ম্যানেজার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে আত্মকলহের আভাস ফুটে উঠেছিল তারই পরিণামে দলটি ভেঙে গেল। তবে বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে এই গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটার আপন বৈশিষ্ট্য আজও স্মরণীয়।