কৃত্তিবাসের রামায়ণ : বাঙালী সমাজ সংসারের প্রতিফল

কৃত্তিবাসের রামায়ণ : বাঙালী সমাজ সংসারের প্রতিফল


মানুষের অনুভবে কালের দুই মাত্রা—এক চিরায়ত আর এক, নির্দিষ্ট দেশ এবং পাত্রের প্রসঙ্গে সীমা-চিহ্নিত। এই মাত্রাবোধ যখন হয় সাহিত্য-নির্ভর, তখন প্রথমটির ক্ষেত্রে দেখা যায় ধ্রুপদী বা ক্লাসিক সাহিত্য এবং দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে দেশজ সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। কৃত্তিবাসের ‘শ্রীরামপাঞ্চালী’ সেই দেশজ সাহিত্য, ঘুমস্ত ব্রতকথার মতো শাস্ত পল্লীবাংলার নিরঙ্গ সময় যার মধ্যে রূপমূর্ত। কৃত্তিবাসী রামায়ণের কাহিনী মূলতঃ বাল্মীকি রামায়ণের অনুসরণ। কিন্তু শুধু পৃষ্ঠাসংখ্যায় নয়, জীবনদর্শনের ব্যাপ্তিতেও তা অনেকটা ছোটো। একথাও ঠিক, বাল্মীকি রামায়ণ যে অর্থে নিখিল-পাঠক বা ভারতীয় শ্রোতার চিত্তকে কাব্যের হিরণ্ময় আবরণের আড়ালে গভীরতম অভিজ্ঞতার সন্ধান দেয়, সেই অর্থে কৃত্তিবাসী রামায়ণ কেবলমাত্র বাঙালী-মানসের অন্তরঙ্গতায় সীমাবদ্ধ থাকে। তবু বাংলা সাহিত্যের ঐতিহাসিকের কাছে একটি কারণে কৃত্তিবাসের গুরুত্ব অপরিসীম সে হলো, সনাতনী বিধান অগ্রাহ্য করে ‘লোকত্রাণ’ চিন্তায় তার শিল্পী-চেতনাকে সচেতনভাবে নিয়োগের চেষ্টা

“বিচারিল চারি বেদ আগম পুরাণ। 

যে মন্ত্র হইতে লোকে পাবে পরিত্রাণ।।”


কেননা, রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্য শক্তি দিয়েছিল এই কাজে প্রবল বাধা ও অভিশাপ

“অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চারিতানি। 

ভাষায়াং মানবঃ শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ ॥”


সুতরাং সংস্কৃত ভাষা ও অভিজাত গোষ্ঠীর কাছে বন্ধকী পৌরাণিক সম্পদকে মুক্ত করে তাকে বৃহত্তম জনজীবনের অংশী ও সঙ্গী করে তোলার ক্ষেত্রে ‘ফুলিয়া পণ্ডিত’ কৃত্তিবাসের ভূমিকা নিঃসন্দেহে আধুনিক। কারণ “He was possibly the first, and certainly the most popular poet to adopt the Sanskrit Ramayana into Bengali (C. 1418)" বস্তুতঃপক্ষে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি কোন স্বয়ং-স্বতন্ত্র ব্যাপার নয়। কিন্তু য়ুরোপীয় মানস ও ল্যাটিন ভাষাজাত সংস্কৃতির সঙ্গে ইংরেজ মনের যে ব্যবধান, সংস্কৃতধর্মী মানসিকতার সঙ্গে বাঙালী মনের পার্থক্য বহুলাংশে সেই রকম। চসার ও শেকসপিয়রের রচনায় য়ুরোপীয় কথাকাহিনীগুলি যেমন পরিবর্তিত, ভারতীয় কবির সংস্কৃত-প্রেরিত কথাবস্তুও তেমনি বাঙালী কবির হাতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়, মনীষী সুনীতিকুমারের এ পর্বের সাহিত্য-প্রসঙ্গে মন্তব্য: “... a sort of veritable matter of Bengal' as differentiated from what may be described as the matter of Sanskrit (or Ancient Hindu) world' in the Ramayanas and the Mahabharatas and the Puranas. সুতরাং এই প্রেক্ষিতে বলা যায় কৃত্তিবাস বাল্মীকির বাংলা অনুবাদক নন, তিনি হয়ে উঠেছেন রামায়ণের বাংলা রূপকার। বাল্মীকি রামায়ণের অনুসরণ তাঁর কাব্যে কতদূর লক্ষণীয় আপাততঃ সেটি বিচার্য।


মৌলিকতা : আদিকবির অনুসরণ প্রসঙ্গে কবির নিজস্ব উক্তি : “বাল্মীকি বন্দিয়া কৃত্তিবাস বিচক্ষণ। পাঁচালী প্রবন্ধে রচে বেদ রামায়ণ॥” আবার যেখানে অন্য কোন উৎস থেকে গল্পের আখ্যান বা চরিত্র-চয়ন, সেখানেও দেখা যায় ভণিতায় তাঁর নির্দেশ স্পষ্টরেখ্। লঙ্কাকাণ্ডে মেঘনাদের সঙ্গে যুদ্ধে রাম লক্ষ্মণের মূৰ্চ্ছিত হবার পর হনুমানের ঔষুধ আনার ঘটনা-বিবরণে কবির স্বীকারোক্তি : “নাহিক এসব কথা বাল্মীকি রচনে। বিস্তরিয়া লিখিত অদ্ভুত রামায়ণে।।” উত্তরাকাণ্ডে লবকুশের হাতে ভরত, শত্রুঘ্ন, লক্ষ্মণের পরাজয়-মৃত্যু এবং বাল্মীকির প্রসাদে পুনর্জীবনলাভের প্রসঙ্গটি-যোজনার ক্ষেত্রেও তার মন্তব্য: “এসব গাহিল গীত জৈমিনি ভারতে”। কৃত্তিবাস বাল্মীকি রামায়ণের যে সমস্ত অংশগুলি বাদ দিয়েছেন, তার মধ্যে প্রধান যথা— কার্তিকের জন্ম, বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্র বিরোধ, বিশ্বামিত্র কথা, অম্বরীশ যজ্ঞ, রামচন্দ্রের আদিত্য-হৃদয় স্তবপাঠ ইত্যাদি। এছাড়াও আছে বনবাসের যাত্রার সময় দশরথের প্রতি লক্ষ্মণের রূঢ় ব্যবহার, বনবাসের উদ্যোগে ভরতের সম্পর্কে সীতার কাছে রামের উষ্ণ মন্তব্য, লঙ্কাকাণ্ডে যুদ্ধের পর রাম ও সীতার পারস্পরিক তিক্ত বাক্য বিনিময় প্রভৃতি ছোটোখাটো রুক্ষ ঘটনাকে পুত্রত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সতীত্বের আদর্শরক্ষার খাতিরে ত্যাগ করার বা রূপান্তরিত করার মনোভাব দেখা গেছে।


বাল্মীকি রামায়ণের অনুক্ত অংশগুলি হলো : রত্নাকর পালা, সৌদাস-দিলীপ-রঘুর কাহিনী, দশরথের রাজ্যে শনির দৃষ্টি, গণেশের জন্ম, সম্বরাসুর বধ, কৈকেয়ীর বরলাভ, গুহকের সঙ্গে মিতালি, হনুমানের সূর্যকে ধারণ, অহিরাবণ-মহীরাবণ-তরণীসেন-বীরবাহু বৃত্তাত্ত, অকালবোধন, গণকের ছদ্মবেশে হনুমানের রাবণের মৃত্যুবাণ হরণ, মুমূর্ষ রাবণের কাছে রামের রাজনীতি শিক্ষা, খড়ি দিয়ে রাবণের মূর্তি আঁকার জন্য সীতার প্রতি রামের মনে সন্দেহ জাগরণ ও নির্বাসন দান ইত্যাদি ঘটনাসমূহ। বাল্মীকির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব অনুভব করা যায় প্রথম প্রসঙ্গটিতেই, রামকথা লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রহ্মার বাল্মীকির প্রতি নির্দেশ ছিল এইরকম

“কুরু রামকথাং পুণ্যাং শ্লোকবদ্ধাং মনোরমাম্।

যাবৎ স্থাস্যক্তি গিরয়ঃ সবিতশ্চ মহীতলে ৷৷

তাবদ্রামায়ণ কথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি। 

যাব দ্রামস্য চ কথা ত্ত্বকৃতা প্রচরিষ্যতি ॥

তাবদূর্ধ্বমধমশ্চ ত্বং মল্লোকেষু বিবৎস্যসি। 

ইত্যুক্তা ভগবান্ ব্রহ্মা তত্তৈবাস্তরধীয়ত !”


অধ্যাত্ম-রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডের অনুসরণে কৃত্তিবাস সেই বাল্মীকির মধ্যে দেখেছেন দস্যু রত্নাকরের প্রায়শ্চিত্ত :

“নিকটে আসিয়া ব্রহ্মা বলে তার কানে। 

একবার রাম-নাম বল রে বদনে ৷৷ 

মরা মরা বলিতে আইল রাম নাম। 

পাইল সকল পাপে দস্যু-পরিত্রাণ ।। 

নামের মহিমা দেখি ব্রহ্মার তরাস। 

আদিকাণ্ড গাইল পণ্ডিত কৃত্তিবাস ।”


ভক্তিবাদ: কবি-শিল্পীর সমগ্র দৃষ্টির অভাব ও ভক্তিবোধের অতিভাবে ভগবান ব্রহ্মা ও বাল্মীকির মহিমা অনেকখানি নষ্ট হয়েছে। তবু এখানেই শেষ নয়, সূচনামাত্র। সারা কাব্যে দেখা যায় ভক্তির অসম্ভব ক্ষমতায় ভক্তির ভারসাম্য যেন কেঁপে গেছে— রামভক্তের সাজ পরে তরণীর কাটামুণ্ড ‘রামনাম' উচ্চারণে, পিতা বিভীষণের রামচন্দ্রকে পুত্রের বধোপায়-নির্দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাবণের স্তুতিতে রামের ব্যাকুলতা— “কেমনে এমন ভক্তে করিব সংহার। বিশ্বে কেহ রাম নাম না লইবে আর।” কৃত্তিবাসের কাব্যে ভক্তিবাদ ব্যক্তিগত এবং যুগগত প্রয়োজনবোধে উদ্ভূত নিশ্চয়ই, অধ্যাত্ম-রামায়ণ, অদ্ভুত রামায়ণের প্রেরণাও হয়ত ছিল, তবু মনে হয় কবিমনের আবেগবাদিতায় অনেক সময় রসানৌচিত্যদোষ ঘটেছে।


এই কাব্যের মধ্য দিয়ে ভক্তিভাবনার যে প্রচ্ছন্নধারা প্রবাহিত তা শাক্ত-বৈষ্ণবের যুগল-সম্মিলনে অভিষিক্ত। বাল্মীকির রামায়ণে শক্তি-ভক্তি অনুপস্থিত। সেখানে বৈষ্ণবভক্তির প্রতি প্রবণতাই যেন অধিক বলে অনুভূত। কৃত্তিবাসী রামায়ণে একদিকে নামাশ্রয়ী ভক্তিবাদ, অপরদিকে পরাৎপরা আদ্যাশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। ‘রাম-শ্যামার মায়ামন্ত্রে’ যেন পুলকিত এ কাব্যের বীণাযন্ত্র। এ নামের এমনই মহিমা

“রামে মার শব্দ করে মরেছে রাক্ষস। 

রাম নাম করে মরে গেছে স্বর্গবাস ৷”

তাই, “ভবসিন্ধু তরিবারে রামনাম ভেলায়” আশ্রয় নেবার জন্য কবি পাঠককে উপদেশ দিয়েছেন। এই নামতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল হনুমানের দাস্যভক্তি।


প্রকৃতিচিত্র : সীতা উদ্ধারের উদ্যোগের আগে বাল্মীকি রামায়ণে কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে বর্ষা ও শরৎ ঋতুর বর্ণনায় ঋতু-প্রকৃতি ও মানবমনের একাত্মতাবোধের গভীরতম প্রকাশ অনুভব করা যায় :

“ক্বচিৎ প্ৰগীতা ইব ষট্‌পদৌঘৈ

ক্বচিৎ প্ৰনৃত্তা ইব নীলকণ্ঠৈঃ

ক্বচিৎ প্রমত্তা ইব বারণেন্দ্রৈঃ...”


কৃত্তিবাস কিন্তু তাকে বেমালুম বাদ দিয়েছেন। অথচ কাব্যের দিক দিয়ে এর যে কি গভীর প্রয়োজন ছিল, তা তুলে ধরেছেন কবি-সমালোচক বুদ্ধদেব বসু“ঘনজটিল বনের মধ্যে চলতে চলতে হঠাৎ যেন একটি স্বচ্ছ নীল হ্রদের ধারে এলুম, সেখানে নৌকা আমাদের তুলে নিয়ে জলের গান শোনাতে লাগলো; ওপারে জটিলতর পথ, কুটিলতম কাঁটা— কিন্তু এই অবসরটুকু এমন মনোহরণ তো সেইজন্যই বনবাসের দুঃখ, সীতা হারানোর দুঃখ, বালীবধের উত্তেজনা ও অবসাদ-সমস্ত শেষ হয়েছে, সামনে পড়ে আছে মহাযুদ্ধের বীভৎসতাদুই ব্যস্ততার মাঝখানে একটু শান্তি, সৌন্দর্য-সম্ভোগের বিশুদ্ধ একটু আনন্দ। এই বিরতির প্রয়োজন ছিলো সকলেরই— কাব্যের, কবির এবং পাঠকের, আর সবচেয়ে বেশি রামের। পঞ্চবটীতে নিসর্গবর্ণনা যেটুকু পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় কৃত্তিবাসের বর্ণনায় চিত্রকূট” পর্বত আমাদের ধানক্ষেতের পাশে অবস্থিত, কল্লোলিত সমুদ্র বাংলা দেশের খাল-বিল-জলাধারে রূপান্তরিত হয়েছে।


দুই কবির মধ্যে পার্থক্য : বাল্মীকি ও কৃত্তিবাসের মধ্যে দৃষ্টি ও সৃষ্টির পার্থক্য চূড়ান্তভাবে দেখা গেছে চরিত্র সৃষ্টিতে ও বাস্তবতাবোধে। বাল্মীকি রামায়ণে দশরথের সত্যাশ্রয়ী বিষণ্ণতা এবং স্নেহব্যাকুলতা, কৈকেয়ীর স্বার্থান্ধতার সঙ্গে ঈর্ষাকাতরতা, সীতার ব্যক্তিত্বে ধৈর্য ও দীপ্তির বিচ্ছুরণ, ভরতের শুচি-স্নিগ্ধ ত্যাগ, লক্ষ্মণের বলিষ্ঠ পৌরুষ এবং সর্বোপরি সুখে-দুঃখে, কূটনীতিতে-হৃদয়হীন আচরণে সম্পূর্ণ রাম-চরিত বা রাবণের বর্বর দম্ভ প্রকাশে মহাকাব্যের যোগ্য জটিলতা ও মহিমা বর্তমান।


একজন সমালোচকের মতে "One of the objects of a kavya is popular instruction, and Vālmīki successfully achieves it by placing before his readers the personalities of his characters conceived as concrete instances of the principles he had in mind... the readers know that whatever is taught here was actually practised by persons and is not a mere precept."


বিপরীতভাবে, কৃত্তিবাসের রামচন্দ্র প্রেমের দেবতা ভক্তপ্রাণ, লক্ষ্মণ অপরিণামদর্শী উদ্ধত, ভরত আদর্শ পালনে নিষ্প্রাণ, সীতা বঙ্গবধূর কোমল সংস্করণ, দশরথ স্ত্রৈণ অসহায় ক্লীবমাত্র। অর্থাৎ কোনো চরিত্রই মনুষ্যত্বের দোষে-গুণে সম্পূর্ণ মানুষ’ হয়ে ওঠেনি, অনেক রঙের আভাস সত্ত্বেও ‘রাউন্ড’ হতে পারেনি।


কৃত্তিবাসী রামায়ণ গৃহচারী জীবনের যূথবদ্ধ আদর্শনীতির তথা গার্হস্থ্যধর্মের ধারাপাত। বাল্মীকি রামায়ণে গার্হস্থ্য আবেদন, নৈতিক পরিক্রমা, পারিবারিক আদর্শ, অন্তর্নিহিত-ভক্তিবাদ ও মানবিক মহিমা—এই পঞ্চপ্রদীপের আরতিতে দীপ্ত।


কৃত্তিবাসী ‘শ্রীরামপাঞ্চালী' বাল্মীকি রামায়ণের ভাষানুবাদ নয়, ভাবানুবাদ— যাকে অস্কার ওয়াইল্ডের ভাষায় বলা যায় "a creation within creation"। কবির ধ্রুব লক্ষ্য, আর্য রামায়ণকে বাংলা ভাষার মাধ্যমে সর্বজনবোধ্য করে তোলা। তার কাব্যে সংস্কৃত রামায়ণের সঙ্গে আদর্শগত পরিবর্তন দৃশ্যমান। মূল রামায়ণে অতুলনীয় বীরত্বের সঙ্গে অনুপম মনুষ্যত্বের সংমিশ্রণে রাম হয়ে উঠেছেন আদর্শ মনুষ্যত্বের প্রতীক। কিন্তু ভাষা রামায়ণগুলোতে রাম মনুষ্যরূপী দেবতা—মানবজন্ম তার লীলামাত্র।


তুলসীদাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত যে কথা বলেছিলেন, সেকথা মধ্যযুগের অন্যান্য অনুবাদক কবি সম্পর্কেও প্রযোজ্য— “Valmiki's Epic depicted a perfect man who could walk with the Gods. Tulsidas was lost in ecstacy when he thought of benign lord who lived among men and shared there sufferings. In pouring out his love for Sri Ramchandra in verse, Tulsidas gave a new direction to the devotional literature particularly in Hindu.” কৃত্তিবাসী কাব্যেও তাই দেখি, সহজ সরল অনাড়ম্বর ভাষায় রামায়ণের “স্বেমহিন্নি” কথা বাঙালীর ছোট ছোট সুখদুঃখের কথা ও কাহিনীতে পরিণত হয়েছে।


রঙ্গ-রসিকতা : কৃত্তিবাসী রামায়ণ “কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের পালা।” শুধু চোখের জলে নয়, বাঙালীর নির্মল এবং অমার্জিত হাস্যরসও একাব্যে লভ্য; যেমন, জন্মকথা নিয়ে জাম্বুবানের রসিকতার উত্তরে হনুমানের প্রত্যুত্তর

“তুমি বা কাহার পুত্র মন্ত্রী জাম্বুবান। 

সকলের সব বার্তা জানে হনুমান ৷৷

যত যত আসিয়াছে বীর সেনাপতি।

কেবা না জানহ কহ কার মাতা সতী৷৷


তৎকালীন জনসাধারণের স্থূল আদিরসাত্মক হাস্যরস এখানে দেখা যায়। আবার সীতা বিবাহার্থে বিড়ম্বিত রাবণকে নিয়ে কবির রসিকতা

“কাকালেতে হাত দিয়া আকাশ নিরখে।

মনে ভাবি, পাছে আসি ইন্দ্ৰবেটা দেখে ৷”


বাঙালীর পারিবারিক রসিকতার অনশ্বর দৃষ্টান্ত দেবর ও ভ্রাতৃবধূর সাক্ষাৎ“লক্ষ্মণ দেখি পরিহাস করে সীতে।”


উত্তরখণ্ডে গৃধিনী ও পেচকের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নিসর্গ-পরিবেশ উদ্ভাসিত হয়েছে

“সারস-সারসী ডাকে কাক কাদাখোঁচা।

গৃধিনী কোকিল চিল আর কালপেঁচা !! 

সারীশুক কাকাতুয়া চড়া মৎসরঙ্ক।

খঞ্জন খঞ্জনী ফিঙ্গে ধকড়িয়া কঙ্ক ॥”


এছাড়া গঙ্গাবতরণ বর্ণনায় পশ্চিমবঙ্গের তীর্থস্থানগুলিসহ নদীয়া, নবদ্বীপ, সপ্তগ্রাম প্রভৃতি প্রসিদ্ধ গ্রামের জনপদ-জীবন মূর্ত হয়েছে।


ধ্রুবানন্দের ‘মহাবংশাবলীতে' (১৪৮৫ বঙ্গাব্দে) বলা হয়েছে “কৃত্তিবাসো কবিধীমান্ সাম্য শাস্ত জনাপ্রিয়ঃ।” এই জনপ্রিয়তা যে কতদূর বিস্তারিত হয়েছিল জয়ানন্দের উল্লেখে, মধুসূদনের শ্রদ্ধাপ্রকাশে, রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতিতে “কোণ ছেঁড়া মলাটওয়ালা” রামায়ণগ্রন্থটির প্রতি আন্তরিক আকর্ষণ সেই সত্য প্রকাশ করে।