'ভবিতব্য কে খণ্ডাইতে পারে? যা ঘটিবার তাহা অবশ্য ঘটিবে।' বক্তা কে? কী প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে? ভবিতব্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে? অবশ্যই কী ঘটিবে?
উক্তিটি ব্রষ্মচারী রূপী চন্দ্রশেখরের। উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয় পরিচ্ছেদে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
নবাবের সঙ্গে ইংরাজদের আসন্ন যুদ্ধকে থামিয়ে দিতে নবাবের অগোচরে রাতের অন্ধকারে দলনী বেগম ও কুলসম অন্তপুর থেকে এসেছিলেন সেনাপতি গুরুগন খাঁর ঘরে। কিন্তু নিরাশ হয়ে তিনি ফিরেছিলেন। তবে বিপদের দিনে ভাই হয়ে গুরগন খাঁ না এগিয়ে আসায় দলনী তাঁকে শত্রুরূপে প্রতিপন্ন করেছিলেন। নিজের শয়তানী মতলব ধরা পড়ার ভয়ে তিনি দলনীকে পুরীমধ্যে অনুপ্রবেশে বাধা দিতে লোক মারফৎ পূর্বেই নির্বাসিতা হলেন। কাঁদতে থাকলেন আপন আপন ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই অসহায় অবস্থায় তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন ব্রহ্মচারীরূপী চন্দ্রশেখর। তিনি সে রাত্রে দুজনকে নিয়ে নিকটস্থ প্রতাপের গৃহে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেন এবং দলনীর মুখে তাঁদের যাবতীয় দুর্ঘটনার কথা শুনে চন্দ্রশেখর এমন মন্তব্য করেছিলেন নিছক সান্ত্বনা দানের জন্য।
ভবিতব্য বলতে এখানে ভবিষ্যতের ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়েছে। তবে আক্ষরিকভাবে এই ভবিতব্যকে দলনীর ভাগ্যরূপে চিহ্নিত করাই শ্রেয়। তিনি নবাবের মঙ্গলকামনায় অন্তঃপুর ছেড়ে নবাবের অজান্তেই রাতের অন্ধকারে পথে পা বাড়িয়েছিলেন। দৈবের নির্দেশে তাঁর স্বগৃহে ফেরা হয়নি। ক্রমিক পরম্পরায় দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে তিনি যন্ত্রচালিতের মতো ধীরে ধীরে এগিয়ে যান দুভার্গের অন্ধকারে, অপাপবিদ্ধা হয়েও রাজকর্মচারীর হঠকারিতায় নবাবের নিকট কলঙ্কিতা রূপে চিহ্নিত হন। নবাব তাঁকে ভুল বুঝলেন। বিচারের অবকাশ না রেখে ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রিয়তমা পত্নীকে তিনি মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞা দিলেন। দলনীও তাঁর অপরাধের সত্যমিথ্যা যাচাই না করে প্রভুর আজ্ঞা মাথা পেতে নিলেন। এটাই তো ছিল দলনীর ভবিতব্য। এ ভবিতব্য তো নিয়তি নির্দেশিত। একে খণ্ডাবার অধিকার মানুষেরও নেই। চন্দ্রশেখর হয়তো তাঁর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতাপ-শৈবালিনী এবং তাঁর নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের উত্থান পতনকে ঈষত ইঙ্গিতে ব্যক্ত করে থাকবেন।