শেষের কবিতা All Short Question Answers here (marks-5)

"শেষের কবিতা"


"সে ঘরে আসবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।”

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

শেষের কবিতায় অমিত রায় অক্সফোর্ডে পড়াকালীন কেতকী মিত্রের হাতে আংটি পরিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। এক সময় অমিত শিলং পাহাড়ে বেড়াতে এলে লাবণ্যর সাথে তার পরিচয় হয়, পরস্পরের গাড়ির আঘাতে। এই লাবণ্য ছিল খুবই সুশ্রী, ভদ্র, নম্র মেধাবী স্বভাবের এবং নির্জন পাহাড়ের সমস্ত স্নিগ্ধতা তার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এই পরিচয়ে অমিত লাবণ্য কিছুদিনের মধ্যে প্রেমে আবদ্ধ হল। এক সময় সেটা প্রেম থেকে প্রণয়ে রূপ নিল। তাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে হঠাৎ একটি চিঠি আসে কেতকী ও তার বােন শিশি আসছে। শিলং পাহাড়ে এসে সমস্ত ঘটনা জানাজানি হলে, লাবণ্য অমিত ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিছুদিন পর যতিশংকর অমিতের কাছে লাবণ্যের কথা জিজ্ঞেস করলে, সে বলে ভালােবাসার শক্তি অসীম। একই শক্তিতে জলে স্থলে উপলব্ধি করব, আবার আকাশেও। আবার বলছে, লাবণ্য আমার দিঘি কেতকী আমার ঘড়ায় তােলা জল। অর্থাৎ সে লাবণ্যকে হারাতে চায় না মনে মনে তাকে ভালােবাসবে।


"তার উপরে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুৎ রেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

অমিত রায় শিলং পাহাড়ের উপর দিয়ে আঁকাবাঁকা সরু পথ বেয়ে যাত্রী সম্ভাবনা নেই বলে আওয়াজ না করে সর্তক বিহীনভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। অমিত কল্পনার ডানা মেলে দিয়ে ভাবতে ভাবতে বাঁকের মুখেই এসে সে দেখছে আর একটি গাড়ি উপরে উঠে আসছে অথচ পাশ কাটাবার জায়গা নেই ব্রেক কষতে গিয়ে পরস্পরকে আঘাত হানল। সেই গাড়ি থেকে লাবণ্য নেমে এলে তার মুখে যেন বিদ্যুৎ রেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি। মন্দার পর্বতের নাড়া খাওয়া সমুদ্র থেকে এই মাত্র উঠে এলাে লক্ষ্মী। তার মধ্যে মৃত্যুর একটুও ভয় বলে, কিছুই নেই। যেন সদ্য প্রস্ফুটিত সকালবেলার পাহাড়ী ফুলের উপর মধু খেতে বসা মৌমাছি।


"কোন প্রচ্ছন্ন বেদীতে শ্রদ্ধাহীন লােকচক্ষুর অগােচরে তার মূতীপূজা প্রচলিত হয়েছে।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

শােভনলাল অবনীশের বাড়ীতে আসত অধ্যয়ন করতে। অবনীশের মেয়ে লাবণ্যকে দেখলে শােভনলাল সংকোচে নত হয়ে যেত। অবনীশের লাইব্রেরির এক কোন থেকে ম্যাগাজিন প্রভৃতি আবর্জনার মধ্যে লাবণ্যর একটি অযত্নস্লান ফোটোগ্রাফ শােভনের হাতে পড়লে, সে কোনও আর্টিস্টকে দিয়ে ছবি করিয়ে ফোটোগ্রাফটি আবার সেখানে রেখে দিয়েছে। গােলাপ ফুলগুলিরও তরুণ মনের সলজ্জ গােপন ভালােবাসার মতাে সহজে ফুটেছিল। তার মধ্যে কোনও অনধিকার ঔদ্ধত্য ছিল না। শােভনলাল যে লাবণ্যকে মনে মনে ভালােবাসতাে সেটা ছিল লােকচক্ষুর অন্তরালে। লাবণ্যের কাছে তা ছিল খাটি হীরের মতাে যা পরিপূর্ণ প্রাণ সরােবরের তরঙ্গ।


"আহা, এতাে আগমন নয়, এযে আর্বিভাব।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

অমিতের সাথে লাবণ্য স্নেহময়ী যােগমায়ার নিকট পরিচয় করার জন্য যখন ঘরে ঢুকলাে অমিত তার আগে মনে মনে ভাবছিল মনের উপর থেকে কত দিনের ধুলােপড়া পর্দা উঠে গেল, সামান্য জিনিসের থেকে ফুটে উঠেছে অসামান্যতা। যখন তাঁকে দেখল অমিত মনে মনে বলছে আহা, এতাে আগমন নয়, এ যে আর্বিভাব। যােগমায়ার দেবীর বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। তাঁর গৌরবর্ণ মুখে একটা গম্ভীর শুদ্ধতা মাতৃস্নেহে পূর্ণ, মােটা থান চাদরে মাথা বেষ্টন করা সমস্ত দেহ সমাবৃত। নির্মল সুন্দর দুটি চরণে প্রণাম করে তার শিরে যেন দেবীর প্রসাদের ধারা বেয়ে গেল।


“আচ্ছা মিতা, তুমি কি মনে কর না যেদিন তাজমহল তৈরি শেষ হল সেদিন মমতাজের মৃত্যুর জন্যে শাজাহান খুশি হয়েছিলেন।”

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

মমতাজের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে শাজাহান তাজমহল তৈরি করেছিল। যেদিন তাঁর তাজমহল তৈরি শেষ হয়েছিল সেদিন শাহাজাহান মমতাজের মৃত্যুর জন্য খুশি হয়েছিল ; তার স্বপ্নকে অমর করবার জন্য মমতাজের মৃত্যুর দরকার ছিল, তাজমহলে শাজাহানের শােক প্রকাশ পায়নি, আনন্দ উচ্ছলতা ধরা পড়েছে। মূলত এখানে অমিতের মনের গড়নটা সাহিত্যিক, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় ফুটিয়ে তুলেছে বােধহয়। ওটাই ওর জীবনের সফলতা তাতেই ও পায় আনন্দ। আর সেই জন্য বােধহয় লাবণ্যকে প্রয়ােজন অমিতের।


“স্মিতহাস্য মিশ্রিত প্রত্যেক কথাটি লাবণ্যর ঠোট দুটির উপর কিরকম একটি চেহারা ধরে উঠছিল।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

শিলং পাহাড়ে অমিত ও লাবণ্যর পরস্পরের গাড়ির আঘাতের পর একদিন দুজনের আলাপের সময় অমিত মনে মনে ভাবছে যে, সে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে, যাদের সৌন্দর্য পূর্ণিমার রাত্রীর মতাে উজ্জ্বল অথচ আচ্ছন্ন কিন্তু লাবণ্যের সৌন্দর্য সকালের মতাে ; তাতে অস্পষ্টতার মােহ নেই সমস্তটাই বুদ্ধিতে পরিব্যাপ্ত। তার মধ্যে কেবল বেদনার শক্তি নয়, আছে মননের অপরিসীম দুর্বার শক্তি। এটাই অমিতকে খুব করে আকর্ষণ করেছে। লাবণ্যের মুখের মধ্যে এমন একটি শান্তির স্বরূপ দেখেছিল যে শান্তি হৃদয়ের তৃপ্তি থেকে নয় যা ওর বিবেচনা শক্তির গভীরতায় অচঞ্চল।


"যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেল তারও আসল মূল্য যে বােঝে সেই জানব জহুরি।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত।

আলােচ্য উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত। অমিত ও লাবণ্যের পরস্পরের ভাবের আদান প্রদানের ফলে প্রেমে সংযুক্ত হয়। তখন অমিত মাসিমা যােগমায়াদেবীর কাছে লাবণ্যকে তার হৃদয়ে পাবার ঘটকালি করতে এসেছে। যােগমায়া দেবী অমিত কে যাচাই করছে যে, লাবণ্যকে তার সত্যিই পছন্দ হয়েছে কিনা, আবার বলছে, লাবণ্য অমিতের হাতে আছে। মূলত এটাই তার পরীক্ষা করা, অমিত এই কথাটাকে ব্যাখ্যা করতে যােগমায়া দেবীকে বললে, ঠিক তখনই যােগমায়া দেবী অমিতকে এই প্রসঙ্গটি উদ্ধৃত করেছিল।


"এই আগুনে পােড়া প্রেমপত্র সুখের দাবি করে না।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত। শেষের কবিতার নায়ক অমিত রায়ের শিলং থেকে কলকাতায় ফেরার আগের দিন সন্ধ্যায় নায়িকা লাবণ্যর কাছে শেষ কথাগুলি একটি কবিতায় মাধ্যমে বলতে বলে। লাবাণ্য একটু খানি ভেবে আবৃত্তি করেছিল। এই আবৃত্তি শুনে অমিত লাবণ্যকে বলেছিল যে, তার কবিতা ফিরিয়ে নেয় যেন এখনই। তখনই লাবণ্য বলেছিল, এই আগুনে পােড়া প্রেম সুখের দাবি করে না। এরা নিজেই মুক্ত বলে অপরকে মুক্তি দেয়। এরা দুঃখ পায়, দুঃখ সয়, সােনা যেমন লােহার মতাে আগুনে পুড়ে চকচকে হয়, ঠিক তেমনই এক হৃদয়ের সাথে অপর হৃদয়ের মিলন, হাসি, সংঘাত কান্নার ফলে যে প্রেম স্বার্থক হয়, সে প্রেম কখনাে সুখের দাবি করে না।


"আজ সকালে এক একবার মেঘরৌদ্রের মধ্যে দিয়ে ভাঙনের মত আকাশ ঝেঁটিয়ে বেড়াচ্ছে।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত। লাবণ্য ও অমিতের প্রেম বিনিময়ের ফলে দুজনের বিয়ের ঠিক হয়ে গেল আগামী আঘ্রান মাসে। অমিতের শিলং পাহাড় থেকে কলকাতায় ফেরার দিনে লাবণ্যের মনের মধ্যে কেবলই আনাগােনা করছে, জীবনের মহােৎসবের দিন যেন তার আগের দিনে শেষ হয়ে গেছে। তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস অমিত চির পলাতক, একবার সে সরে গেলে আর তার কোনও খোজ পাওয়া যাবে না। কখনাে কোনও একদিন রাস্তায় চলতে চলতে গল্প সে শুরু করে তারপরে রাত আসে, পরদিন সকালে দেখা যায়, গল্পের গাঁথন ছিন্ন, পথিক গেছে। চলে। লাবণ্যও তাই ভাবছিল যে, তার গল্পটা এখন থেকে চিরদিনের মতাে বাকি রয়ে গেল। লাবণ্য ভাবছে যে, সেদিনকেই অসমাপ্তির স্নানতা সকালের আলােয় ; অকাল অবসানের অবসাদে আর্দ্র হাওয়ার মধ্যে।


"চলেছি এক জলপ্রপাতের সন্ধানে।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত। কলকাতা থেকে কেটি ওরফে কেতকী মিত্র ও শেষের কবিতার নায়ক অমিতের বােন শিলং পাহাড়ে বেড়াতে এসেছে। তারা আশা করেছিল, স্নিগ্ধ, মনােরম, পাহাড়ী মেয়ে লাবণ্যের কথা অমিত নিজেই তাদেরকে বলবে। একদিন দুদিন, তিনদিন যায় অমিত কিছু বলে না। তারা লক্ষ্য করে ওরা নিজেরা বিছানা থেকে উঠে তৈরি হবার আগে অমিত কোথা থেকে ঘুরে আসে, তার মুখ দেখে মনে হয়, ঝােড়াে হাওয়ায় যেমন কলাগাছের পাতাগুলাে ফালি ফালি হয়ে ঝােলে, অমিতেরই তারই মতাে শতদীর্ণ ভাব। অমিত ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে যায়, বলে ক্ষিদে সংগ্রহ করতে চলেছি। এসব শুনে সিসি হাসে মনে, কেটি মনে মনে জ্বলে। ওরা যখন জিজ্ঞেস করে, সে কোথায় যাচ্ছে, অমিত নিঃসঙ্কোচে বলে, সে চলেছে এক জলপ্রপাতের সন্ধানে।


"ভালােবাসা আজ তার শােধ নিলে, অভিমান হল জালিয়াৎ।"

উদ্ধৃতাংশটি বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাস থেকে গৃহীত। একসময় শােভনলাল ও লাবণ্য দুজনে একসাথে পড়াশুনাে করত। কিন্তু শােভানলালের পিতা ননীগােপালের তাদের দুজনকে নিয়ে সন্দেহ হলে, শােভনলাল লাবণ্যের বাড়ীতে আসা বন্ধ করে দিয়ে ছিল। শােভনাল লাবণ্যকে মনে মনে ভালােবাসতাে কিন্তু বলতে পারতাে না। একদিন লাবণ্যের বাবার আদেশে শােভনলাল তাদের বাড়ীতে এলে লাবণ্য অপমান করেছিলাে তাঁকে, তখন লাবণ্যের মধ্যে ছিল জ্ঞানের গর্ব, বিদ্যার একনিষ্ঠ সাধনা, উদ্ধত স্বাতন্ত্রযবােধ। তখন আপন বাপের মুগ্ধতা দেখে ভােলােবাসাকে দুর্বলতা বলে মনে মনে ধিক্কার করেছিল। সে নিজের অতীতের দিকে তাকিয়ে এগুলি ভাবছে যে অঙ্কুরটা বড়াে হয়ে উঠতে পারত, অথচ সেটাকে চেপে দিয়েছে অবদমিত করেছে, বাড়তে দেয়নি। এতদিনে লাবণ্য শােভনলালের সমস্ত জীবন অধিকার করে তাকে সফল করতে পারত কিন্তু পারেনি। যখন শােভানলাল দীর্ঘকাল পরে লাবণ্যের কাছে চিঠি লিখে জানাতে চেয়েছিল যে, তার অপরাধটা কী ছিল তখনা পর্যন্ত সে জানাতে পারে নি, সেটা সে জানতে চায়। তার আর কোনও প্রার্থনা নেই। তখন লাবণ্য এই কথাগুলি ভাবছিল।