নাই কিনারা নাই তরণী পারে | হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে | সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে | তবু লক্ষ যােজন ফাক রে

"নাই কিনারা নাই তরণী পারে"- মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করাে। সেখানে যাওয়ার অন্য কোন্ পথের কথা কবি উল্লেখ করেছেন?

বাউল সাধকের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল আত্মরূপের সন্ধান। দেহপিঞ্জরের ভেতর যে মনের মানুষ বা পড়শি আছে, তাকে খুঁজে পাওয়াই হল বাউল সাধকের একমাত্র সাধনা। কিন্তু নিরাকার পরমাত্মাকে খুঁজে পাওয়া সাধকের পক্ষে খুব সহজসাধ্য নয়। কারণ, মনকে ঘিরে আছে অগাধ পানি', অর্থাৎ বিষয়বাসনা এবং জাগতিক নানা আশা-আকাঙ্ক্ষা। কোনাে 'তরণী অর্থাৎ মন্ত্রতন্ত্র, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি নেই যা সাধককে তার কাঙ্ক্ষিত মনের মানুষ-এর কাছে পৌছিয়ে দেয়। কিনারাহীন অগাধ পানির রূপক-এ সাধক আসলে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছােনাের প্রবল বাধাকে বােঝাতে চেয়েছেন। মনের মানুষ বা পড়শি অথবা ঈশ্বরের সঙ্গ লাভের জন্য সাধকের সাধনার কঠিন প্রতিবন্ধকতার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে প্রশ্নোধৃত অংশে।


বাউল সাধনার মনের মানুষ’ই হলেন কবিতায় উল্লিখিত কবির পড়শী। কবির কাছে ঈশ্বরতত্ত্ব আসলে আত্মতত্ত্ব। নিজের ভেতরে থাকা এই নিরাকার পরমের সন্ধানই বাউল সাধনার মূল কথা। কিন্তু এর জন্য সব কিছুর আগে প্রয়ােজন বিষয়বাসনা ও ইন্দ্রিয় সুখকে দূরে সরানাে। তার ওপর দরকার আত্মানুসন্ধানের একাগ্রতা। নিরন্তর এই অনুশীলনই চিত্তমুক্তি বা মনের শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে সাধককে পৌঁছিয়ে দেয় ঈশ্বরের কাছে। একমাত্র এই পথের মাধ্যমেই সাধক পেতে পারেন তার মনের মানুষ’-এর সান্নিধ্য।


"হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে"- মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। এরকম পড়শী কবিকে স্পর্শ করলে কী হত?

বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে লালন সাঁই পরমাত্মা বা মনের মানুষ’-এর সন্ধান করেছেন। বিষয়বাসনার মধ্যে ডুবে থাকা মানুষের পক্ষে তার সন্ধান পাওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। এই মনের মানুষ' বা ঈশ্বর, আসলে নিরাকার পরম তাঁর হাত-পা- কাঁধ-মাথা কিছুই নেই, অর্থাৎ তার কোনাে আকার কবি বা বাউল সাধকের চোখে ধরা পরে না। এই মনের মানুষ অবস্থান করেন সর্বত্র, কখনও তিনি শূন্যকে আশ্রয় করে থাকেন, আবার কখনও তার বস্তুগত প্রকাশও ঘটে। এই নিরাকারের সন্ধান পাওয়া যায়, আত্মশুদ্ধি বা মনকে শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে।


লালনের মতে আরশীনগর অর্থাৎ মনের ভিতরেই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অবস্থান। এই পরম নিরাকার সৃষ্টিকর্তাই বাউল সাধকদের কাছে কখনও 'মনের মানুষ', আবার কখনও-বা অধর মানুষ। কেবলমাত্র আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমেই তাকে জানা সম্ভব হয়। এই আত্মানুসন্ধানের অর্থ নিজের ভিতরে যে ঈশ্বর আছেন তার সন্ধান করা। তাঁর সান্নিধ্যই মানুষকে এমনভাবে শুদ্ধ করে তােলে যে মানুষের মন সকল জাগতিক চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠে যায়। তাই কবি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন যে, আরশিনগরে থাকা সেই পড়শী অর্থাৎ মনের মানুষ’-এর সন্ধান যদি পাওয়া যেত, তা হলে অন্তত পার্থিব সকল চাওয়া-পাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হত।



“সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”— একখানে থাকার তাৎপর্য কী?

বাড়ির কাছে আরশীনগর’ লালনের এই গানের প্রশ্নোষ্ধৃত অংশে লালন তার আরশিনগরের পড়শির কথা, অর্থাৎ নিরাকার ঈশ্বরের কথা বলেছেন। গানে লালন যে আরশিনগরের ‘পড়শী’র কথা বলেছেন তা আসলে তার মনের মানুষ বা ঈশ্বর, মানুষের মনের মধ্যেই যাঁর অবস্থান। এই মনের মানুষ একদিকে যেমন নিজের ভেতরের শুদ্ধরূপ, অন্যদিকে আবার তিনিই পরম নিরাকার—“যাঁরে আকাশ পাতাল খোঁজ এই দেহে তিনি রয়।” যেহেতু বাইরের পৃথিবীতে নয়, পরম ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া যায় মনের মধ্যেই, তাই লালন সাধক ও ঈশ্বরের একত্রে থাকার কথা বলেছেন। আসলে বাউল সাধকরা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের দেহই হল এই বিশ্বব্ৰত্মাণ্ডের ক্ষুদ্র রূপ এবং এই দেহ-আধারেই ঈশ্বরের প্রকৃত অধিষ্ঠান। আত্মারূপী ঈশ্বর তাে মানবদেহেই বিরাজ করেন। তাই লালন বলেছেন, তার এবং তাঁর মনের মানুষ বা পড়শি আদতে একখানে রয়। একসঙ্গে থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কখনােই সাক্ষাৎ হয় না। মানুষের বিষয়চেতনা বা লাভ- লালসা প্রায় চিরকালই তাদের মধ্যে লক্ষ যােজন দূরত্ব তৈরি করে।



"তবু লক্ষ যােজন ফাক রে" -লক্ষ যােজন ফাক বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতা অনুযায়ী মনের ভিতরে যে ঈশ্বরের অবস্থান, তাঁকে খুঁজে পাওয়াই হল আত্মতত্ত্ব। এই আত্মতত্ত্বের সন্ধান পাওয়া বা আত্মদর্শন হওয়া খুব সহজসাধ্য নয়, কেবল মনে নিষ্ঠা হলে মিলবে তারি ঠিকানা। কিন্তু মানুষ ধর্মগ্রন্থের মধ্যেই কেবল ঈশ্বরকে খোঁজে, নিজেকে যথার্থরূপে চেনা তার হয়ে ওঠে না। আপন ঘর না বুঝে বাইরে খুঁজে তারা আসলে ধাঁধায় পড়ে যায়, তাদের সত্যদৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সম্পদবাসনা বা স্বার্থপরতা ত্যাগ না করলে 'মনের মানুষ বা পরমপুরুষের সন্ধান পাওয়া যায় না। আত্মনিবেদন আর আত্মানুসম্ধানের ব্যর্থতায় মনের মানুষ'-এর খোঁজ পাওয়া হয়ে ওঠে না জীবনে। কবির কথায়, মন রূপ ‘গ্রাম’কে বেষ্টন করে আছে বিষয়বাসনারূপ অগাধ পানি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে সাধকের মিলনের পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও, মানুষের মনের অজ্ঞানতাকেও অগাধ পানি কথাটির দ্বারা বােঝানাে হয়েছে। এই অজ্ঞানতা ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয় না। আর এই ব্যর্থতাই পড়শি বা ঈশ্বরের সঙ্গে সাধকের লক্ষ যােজন ফাঁক’ বা বিরাট দূরত্ব তৈরি করে দেয়।


লালন আর তার পড়শী’র মধ্যে তৈরি হয় লক্ষ যােজন’ দূরত্ব। ঈশ্বর চিরকাল ধরেই বিশ্বব্যাপী, আমাদের অত্যন্ত নিকটে, আমাদের হৃদয়েই তাঁর অবস্থান, তা সত্ত্বেও তিনি বিষয়ী মানুষের পার্থিববাসনার পর্দার আড়ালেই চিরকাল ঢাকা পড়ে যান। তাই একই জায়গায় বসবাস করলেও উভয়ের মধ্যে রয়ে যায় লক্ষ যােজন দূরত্ব।


"এই তাে সাজে তােমারে, ক্ষত্রমণি তুমি," -বক্তার এই মন্তব্য কি যথার্থ ছিল?

"ভুলিব এ জ্বালা,/এ বিষম জ্বালা, দেব, ভুলিব সত্বরে। বক্তা এখানে কোন জ্বালা ভুলতে চেয়েছেন? শেষপর্যন্ত কীভাবে এই জ্বালা থেকে তিনি মুক্তি খুঁজেছেন?

“কি লজ্জা! দুঃখের কথা, হায়, কব কারে?" -বক্তা কোন্ দুঃখ এবং লজ্জার কথা বলতে চেয়েছেন?

"মিথ্যা কথা, নাথ। বিবেচনা কর," -এক্ষেত্রে বক্তা কীভাবে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন?


"মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?”— বক্তার এই ধরনের মন্তব্যের যৌক্তিকতা আলােচনা করাে।

"কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা। গুরুজন তুমি; / পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তােমারে।" -বক্তার এই আক্ষেপ কেন? এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

"ক্ষত্রধর্ম, ক্ষত্রকম্ম সাধ ভুজবলে" -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করে তার পরিণতি বিশ্লেষণ করে দেখাও।

“হায়, ভােজবালা কুন্তী-কে না জানে তারে, স্বৈরিণী?" -বক্তার এই মন্তব্যের যথার্থতা আলােচনা করাে।


"দহিল খাণ্ডব দুষ্ট কৃয়ের সহায়ে।/ শিখণ্ডীর সহকারে কুরুক্ষেত্রে রণে"- ‘খাণ্ডব' দহন ও 'শিখণ্ডী' সম্বন্ধে পৌরাণিক সত্য লেখাে।

“চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে?/ কুরঙ্গীর অশ্রুবারি নিবায় কি কভু/ দাবানলে? কোকিলের কাকলি-লহরী/ উচ্চনাদী প্রভঞ্জনে নীরবয়ে কবে?”— উদ্ধৃতিটির পশ্চাৎপট আলােচনা করাে।

“কি কুছলে নরাধম বধিল তাঁহারে" -মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।


“ক্ষত্ৰ-কুলবালা আমি; ক্ষত্র কুল-বধু/ কেমনে এ অপমান সব ধৈর্য্য ধরি?"- বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা। করাে।

জনা কি প্রকৃতই বীরাঙ্গনা? যুক্তিসহ লেখাে।

“ছদ্মবেশে লক্ষরাজে ছলিলা দুর্মতি স্বয়ম্বরে”—আলােচ্য অংশে কোন্ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে?

“হা পুত্র সাধিলি কীরে তুই এই রূপে মাতৃধার" -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

জনার পত্রে তাঁর ক্রব্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে?


মাতৃত্বের বিচারে জনা চরিত্র কতটা সার্থক?

“এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি বিজন জনার পক্ষে" -জানা কে? তার কাছে ভবস্থল বিজন কেন?

“লােকমাতা রমা কি হে এ ভ্রষ্টা রমণী?" -'অষ্টা রমণী' বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে? বক্তার এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা কর।


'বাড়ির কাছে আরশীনগর’—লালনের এই গানটির মূল বক্তব্য ও তার রূপক অর্থ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’-এই রচনাটিতে লালনের কবিপ্রতিভার যে পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন করাে।

"আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে" -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে, কবির সঙ্গে তাঁর পড়শির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও 'লক্ষ যােজন ফাক'-এর কারণ বিশ্লেষণ করাে।


“গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি / ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে" -মন্তব্যটির তাৎপর্যের আলােকে এই অগাধ পানি’কে কীভাবে অতিক্রম করা সম্ভব তা আলােচনা করাে।

"বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে" -আরশিনগরে থাকা পড়শির পরিচয় দাও। কবির সঙ্গে এই পড়শির সম্পর্ক আলােচনা করাে।

"..ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/ ক্ষণেক ভাসে নীরে।" -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের আলােকে কবির মানসিকতা বিশ্লেষণ করাে।

"পড়শী যদি আমায় ছুঁত / আমার যম-যাতনা সকল যেত দূরে।" -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।