আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি | পাঠ্য লালন-গীতিতে বাউল সাধনার গুহ্যতত্ত্ব | 'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় বর্ণিত 'পড়শী'-র স্বরূপ

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় বর্ণিত 'পড়শী'-র স্বরূপ বর্ণনা করাে

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতা বা বাউল গানে বাউল সাধক লালন ফকির তাঁর গানের মধ্য দিয়ে উদার ধর্মীয় সাধনার গৃঢ় তত্ত্বকথা প্রকাশ করেছেন। আলােচ্য অংশটিতে লেখক পড়শী বলতে তার আত্মদর্শন বা পরমাত্মার অনুভব বা মনের মানুষ’-এর কথাই বলেছেন। 'মন' রূপ আরশিতে মানুষ নিজেকে দেখতে পায়। এর মধ্য দিয়ে মানুষ আমিত্বকে চিনতে পারে যেটা সে বাস্তবের চোখে দেখতে পায় না। মনের মানুষের বাস এই আরশিনগরে। কিন্তু খালি চোখে তাকে দেখা যায় না, কারণ তাঁর কোনাে নির্দিষ্ট আকার নেই, তিনি নিরাকার। তাঁর বাস কখনও মনের গহনে অতল শূন্যে আবার কখনও চোখের জলে।


লালন তার মনের একান্ত ইচ্ছে সত্ত্বেও কিছুতেই মনের মানুষ বা ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পান না, কারণ এই মনের মানুষের হাত পা-মাথা ধড় কিছুই নেই। এ এক নিরাকার অনুভূতি। তার সন্ধান পেলেই মানুষের জীবন সার্থক হয় বা মানুষ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারে। আর তাহলেই তার সব পাওয়া হয়। তখন আর পার্থিব কোনাে বস্তুর চাহিদা তাকে বাঁধতে পারে না। সব কিছুকে ত্যাগ করে তার মন তখন উদার মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায় এবং তখন জীবিত অবস্থাতেও সে স্বর্গসুখ লাভ করে।



পাঠ্য লালন-গীতিতে বাউল সাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।


পাঠ্য লালন ফকির রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক লালন-গীতিতে তিনি উদারনৈতিক ধর্মসাধনা বা বাউল সাধনার মূল কথা বা গুহ্যতত্ত্বকে প্রকাশ করেছেন। বাউল কথার অর্থ 'বাতুল' বা হাওয়া। অর্থাৎ সাংসারিক সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, যন্ত্রণা সবকিছুকে ভুলে, সব কিছুর উর্ধ্বে নিজের মনকে স্থির করা। বাউলরা মনে করে, বিশেষ কোনাে মূর্তিতে নয়, প্রতিটি মানুষের মনেই ঈশ্বরের বাস। অর্থাৎ, নিজের মনের মানুষকে একান্তভাবে উপলব্ধি করার অর্থই পরম পুরুষ বা ঈশ্বরকে লাভ করা। ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে তাঁরা তাঁদের গানের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক মানবিকতার বাণী প্রচার করেন।


প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে সহজ সরল মনের অধিকারী হয়। কিন্তু জীবনযাপনের সঙ্গে সামাজিক ও পারিবারিক চাপে সেই মনকে জটিল থেকে জটিলতর করে তােলে। বাউল সাধনার মূলতত্ত্ব হল সেই সহজ সরল মানবমনকে উদ্ধার করা। তাই কবি বলেছেন—মনের দুঃখ, যন্ত্রণা, হিংসা, দ্বেষ, অস্থিরতা, বিষয়চিন্তা সব কিছুকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিতে। তবেই আমাদের আরশিনগরের পড়শি ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া যাবে। কারণ, তিনি শূন্যে বাস করেন বলে মনকে শূন্য করতে না পারলে তার অস্তিত্ব অনুভব করা যাবে না। তিনি নিরাকার, তাঁর কোনাে বাহ্যিক রূপ নেই। তার অবস্থান একমাত্র মানব মনের গভীরে যাঁকে কেবল উদারতার মধ্য দিয়ে অনুভব করা যায়। এই ঈশ্বর আমাদের মনকে স্পর্শ করলেই আমাদের বাস্তব দুঃখ-যন্ত্রণা, যম-যাতনা বা মৃত্যু যাতনা দূর হয়ে যাবে এবং মনে অপার আনন্দ বিরাজ করবে।



“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি" -কবি কী বা করছেন এবং কেন?


বাংলা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাউল গান রচয়িতা লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় দেখা যায়, কবি এখানে তার মনের মানুষ বা অধর মানুষ-এর সঙ্গে দেখা হওয়ার বাঞ্ছা বা ইচ্ছা পােষণ করছেন।


বাউল সাধক জানেন, ঈশ্বরের অবস্থান বাইরে কোথাও নেই। তিনি আছেন প্রতিটি মানুষের মনে বা হৃদ মাঝারে। তবু বিষয়ভােগী মানুষ লােভ-লালসা বা প্রবৃত্তির শিকার হয়ে কিছুতেই সেই পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না। তাই তার প্রবল 'বাঞ্ছা' জন্মায় ঈশ্বরকে একবার দেখার। আরশীনগর-এর এই ‘পড়শীবাঈশ্বরের একবার দর্শন পেলেই কবির সকল যম-যাতনা দূরীভূত হয়ে যেত। অর্থাৎ, বাস্তব চিন্তা, দুঃখ যন্ত্রণা, দৈহিক কষ্ট বা সাংসারিক টান তার দূর হয়ে যেত। সাধক কবি তখন অপার আনন্দের সঙ্গে মিলিত হতে পারতেন। জীবিত অবস্থাতেও ঈশ্বরিক সুখ লাভ করতে পারতেন। মৃত্যুকে জয় করতে পারতেন। আর এভাবেই তার জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য চরিতার্থ হতে পারত।



"আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি" -বক্তা কাকে দেখতে চান? কিভাবে তার দর্শন পাওয়া যাবে?


লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় তার মনের মানুষ' অর্থাৎ পড়শীকে দেখতে চেয়েছেন।


কবি একজন বাউল সাধক হিসেবে জানেন ঈশ্বরের অবস্থান মনের ভিতরে। মনের মানুষ হিসেবেই তার উপস্থিতি। কিন্তু বিষয়বাসনায় কাতর মানুষের পক্ষে তার সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ কথা নয়। কোনাে মন্ত্র-তন্ত্র, সাধনপদ্ধতি নয়, শুধু আত্মােপলদ্ধির সাহায্যেই 'মনের মানুষ', যাঁকে কবি পড়শী বলে উল্লেখ করেছেন তার দেখা পাওয়া যেতে পারে বলে কবি মনে করেছেন। তার সাক্ষাৎ পেলে পার্থিব জীবনের সব দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে কবির মুক্তি ঘটত। কিন্তু তার জন্য প্রয়ােজন বিষয় আসক্তিকে সম্পূর্ণ দূর করে শুদ্ধস্বভাবের অধিকারী হওয়া। গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানিএই পানি অর্থাৎ বিষয়বাসনাকে অতিক্রম করলেই মনের মানুষ বা পড়শী'র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। লােভ-মােহ, কামনা-বাসনা আমাদের মনকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে পারলেই চিত্তশুদ্ধি ঘটা সম্ভব। আর চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই মনের ভিতরে থাকা অধর মানুষ বা পড়শির দেখা পাওয়া সম্ভব হয়। নিরাকার পরম ভক্তের কাছে। ধরা দেন শুদ্ধ চৈতন্যের মধ্য দিয়েই।


"দহিল খাণ্ডব দুষ্ট কৃয়ের সহায়ে।/ শিখণ্ডীর সহকারে কুরুক্ষেত্রে রণে"- ‘খাণ্ডব' দহন ও 'শিখণ্ডী' সম্বন্ধে পৌরাণিক সত্য লেখাে।

“চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে?/ কুরঙ্গীর অশ্রুবারি নিবায় কি কভু/ দাবানলে? কোকিলের কাকলি-লহরী/ উচ্চনাদী প্রভঞ্জনে নীরবয়ে কবে?”— উদ্ধৃতিটির পশ্চাৎপট আলােচনা করাে।

“কি কুছলে নরাধম বধিল তাঁহারে" -মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।


“ক্ষত্ৰ-কুলবালা আমি; ক্ষত্র কুল-বধু/ কেমনে এ অপমান সব ধৈর্য্য ধরি?"- বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা। করাে।

জনা কি প্রকৃতই বীরাঙ্গনা? যুক্তিসহ লেখাে।

“ছদ্মবেশে লক্ষরাজে ছলিলা দুর্মতি স্বয়ম্বরে”—আলােচ্য অংশে কোন্ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে?

“হা পুত্র সাধিলি কীরে তুই এই রূপে মাতৃধার" -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

জনার পত্রে তাঁর ক্রব্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে?


মাতৃত্বের বিচারে জনা চরিত্র কতটা সার্থক?

“এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি বিজন জনার পক্ষে" -জানা কে? তার কাছে ভবস্থল বিজন কেন?

“লােকমাতা রমা কি হে এ ভ্রষ্টা রমণী?" -'অষ্টা রমণী' বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে? বক্তার এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা কর।


'বাড়ির কাছে আরশীনগর’—লালনের এই গানটির মূল বক্তব্য ও তার রূপক অর্থ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’-এই রচনাটিতে লালনের কবিপ্রতিভার যে পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন করাে।

"আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে" -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে, কবির সঙ্গে তাঁর পড়শির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও 'লক্ষ যােজন ফাক'-এর কারণ বিশ্লেষণ করাে।


“গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি / ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে" -মন্তব্যটির তাৎপর্যের আলােকে এই অগাধ পানি’কে কীভাবে অতিক্রম করা সম্ভব তা আলােচনা করাে।

"বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে" -আরশিনগরে থাকা পড়শির পরিচয় দাও। কবির সঙ্গে এই পড়শির সম্পর্ক আলােচনা করাে।

"..ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/ ক্ষণেক ভাসে নীরে।" -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের আলােকে কবির মানসিকতা বিশ্লেষণ করাে।

"পড়শী যদি আমায় ছুঁত / আমার যম-যাতনা সকল যেত দূরে।" -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।


"নাই কিনারা নাই তরণী পারে"- মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করাে। সেখানে যাওয়ার অন্য কোন্ পথের কথা কবি উল্লেখ করেছেন?

"হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। এরকম পড়শী কবিকে স্পর্শ করলে কী হত?

“সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”— একখানে থাকার তাৎপর্য কী?

"তবু লক্ষ যােজন ফাক রে" -লক্ষ যােজন ফাক বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?


বাউল তত্ত্ব ভাবনার উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে লেখাে।

বাউল সাধক লালন ফকির কীভাবে চিত্ত পরিশুদ্ধির কথা বলেছেন?

'বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

লালনের মতে যম-যাতনা কীভাবে দূর করা যেতে পারে?