মধ্যযুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত আলজেরিয়ায় কোন কোন বিদেশি শক্তির আগ্রাসন চলেছিল | ফ্রান্স কেন আলজেরিয়া আক্রমণ করেছিল?

আলজেরিয়ায় বিদেশি আগ্রাসন

মধ্যযুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকার আলজেরিয়ায় বিভিন্ন বিদেশি শক্তি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।


[1] আরবের আগ্রাসন: আরবের মুসলিম সেনাবাহিনী খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যভাগে আলজেরিয়া দখল করে এখানে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে এখানে আরবদের আধিপত্যের অবসান ঘটে।


[2] স্পেনের আগ্রাসন: যােড়শ শতকের প্রথম দিকে আলজেরিয়ার কিছু অংশে স্পেনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে স্পেন এখান থেকে পিছিয়ে আসে।


[3] অটোমান আগ্রাসন: ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ায় তুর্কি অটোমান শাসকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা এখানে বেশ কিছুকাল রাজত্ব করে।


[4] ফরাসি আগ্রাসন: ফরাসিরা ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ায় অভিযান চালায় এবং ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়া দখল করে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারা বিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এখানে শােষণ ও অত্যাচার চালায়। দীর্ঘ সংগ্রামের পর আলজেরিয়া ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করে।


আলজেরিয়ায় ফরাসি আক্রমণের কারণ


১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশে অবস্থিত আলজেরিয়ার বিভিন্ন অংশে অটোমান শাসক, আরব যােদ্ধা এবং কিছু উপজাতি নেতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। এদের আধিপত্য চূর্ণ করে ফ্রান্স ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ায় অভিযান চালিয়ে সেখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।


[1] অর্থনৈতিক বিরােধ: ফরাসি প্রজাতান্ত্রিক সরকার তার সেনাদলের জন্য আলজেরিয়া থেকে গম ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের দুজন ইহুদি বণিকের সঙ্গে ১৭৯৫-৯৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে ফরাসি সম্রাট দশম চার্লসের (১৮২৪-১৮৩০ খ্রি.) আমলে আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত বিষয়ে আলজেরিয়ার শাসকদের সঙ্গে ফ্রান্সের বিরােধ বাধে। ফলে ফ্রান্স আলজেরিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।


[2] অবরােধ: আলজেরিয়ার শাসকদের সঙ্গে ফ্রান্সের বিরােধ দেখা দিলে ফরাসি সম্রাট দশম চার্লস-এর নির্দেশে ফরাসি সেনাবাহিনী ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে আলজিয়ার্স অবরােধ করে। টানা তিন বছর ধরে অবরুদ্ধ থাকার পরও আলজেরিয়ার শাসকরা ফ্রান্সের কাছে নতি স্বীকার করেনি। এই পরিস্থিতিতে আলজেরিয়ার শাসকদের উচিত শিক্ষা দিয়ে তাদের দমন করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্স আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।


[3] দূত প্রেরণ: আলজেরিয়ার অটোমান শাসকের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলােচনা ও মীমাংসার উদ্দেশ্যে ফরাসি সম্রাট দশম চার্লস উদ্যোগ নেন। তিনি ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর এক দূতকে আলজিয়ার্সে অটোমান শাসকের কাছে পাঠান। কিন্তু অটোমান শাসক ফরাসি দূতকে অপমান করেন এবং আলজিয়ার্স অবরােধে অংশগ্রহণকারী একটি ফরাসি জাহাজে কামানের দ্বারা আক্রমণ চালান। এতে ফ্রান্স ক্ষোভে ফেটে পড়ে।


[4] ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ: আলজেরিয়ার কঠোর অবস্থানের ফলে ফরাসি দৌত্য ব্যর্থ হলে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পলিগন্যাক মিশরের মহম্মদ আলিকে প্রস্তাব দেন, উত্তর আফ্রিকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দখল করে নেবে। কিন্তু ব্রিটেনের অত্যন্ত অনুগত মহম্মদ আলি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ফ্রান্স এককভাবে আফ্রিকায় সামরিক অভিযান পাঠানাের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।


[5] সম্রাটের জনপ্রিয়তা হ্রাস: ফ্রান্সের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশের সম্রাট দশম চার্লসের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়। তাই বীর নেপােলিয়ান বােনাপার্টের মতাে সফল সাম্রাজ্যবাদী অভিযান চালিয়ে সম্রাট দশম চার্লস ফরাসি জনগণের মধ্যে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা থেকে দশম চার্লস আলজেরিয়ায় সামরিক অভিযান গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় অব-উপনিবেশীকরণের কী প্রভাব লক্ষ করা যায়?


আলজেরিয়ার বর্তমান পরিচয় দাও। আলজেরিয়া অভিযানের ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও।


ঔপনিবেশিক ফরাসিদের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের প্রতিরােধের বিবরণ দাও। আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার এর বিবরণ দাও।