পরমাণু অস্ত্র নিমার্ণে ব্যর্থতার কারণ ও ফলাফল লেখাে।

পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ

[1] ঠান্ডা লড়াই: কোনাে কোনাে দেশ মুখে নিরস্ত্রীকরণের কথা বললেও বাস্তব ক্ষেত্রে সে ভয়ানক আগ্রাসন চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় শক্তি নিরস্ত্রীকরণের কথা বললেও এবিষয়ে তাদের আন্তরিকতা ছিল না। কেননা, নিজেদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পক্ষে অস্ত্র হ্রাস করা সম্ভব ছিল না।


[2] পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব: রাশিয়া ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গােপনে আণবিক বােমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটালে আমেরিকার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়। আবার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে (মে মাসে) আমেরিকা তার U-2 পর্যবেক্ষণ বিমান থেকে রাশিয়ার ওপর গুপ্তচর বৃত্তি চালালে রাশিয়ার অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এই ধরনের অবিশ্বাসের ঘটনা নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে।


[3] অস্ত্রের ধরন নিয়ে সমস্যা: কোন্ দেশের কোন্ অস্ত্র 'আক্রমণাত্মক' এবং কোন অস্ত্র 'রক্ষণাত্মক' তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতবিরােধ থাকে। এক দেশ যে অস্ত্রকে 'আক্রমণাত্মক বলে বিবেচনা করে অন্য দেশ তাকেই 'রক্ষণাত্মক' বলে মনে করতে পারে। এ বিতর্কের ফলে কোনাে মীমাংসায় পৌঁছানাে সম্ভব হয়নি এবং নিরস্ত্রীকরণের বাস্তবায়নও অধরা থেকে যায়।


[4] গুণগত নিরস্ত্রীকরণের সমস্যা: নিরস্ত্রীকরণ বলতে সাধারণত অস্ত্রের পরিমাণ হ্রাস বা অস্ত্রের বিলুপ্তি বােঝানাে হয়। কিন্তু বিভিন্ন দেশের মধ্যে আলােচনার মাধ্যমে পরিমাণগত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব হলেও গুণগত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়। এর কারণ হিসেবে ড.কিসিঞ্জার বলেছেন যে, প্রকৃত অস্ত্র প্রতিযােগিতা চলে গবেষণাগারে। তাই কোনাে দেশের সৈন্য সংখ্যা যতই হ্রাস করা হােক না কেন, এর দ্বারা প্রকৃত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।


[5] চুক্তি লঙ্ঘন: নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময় চুক্তি লঙ্ঘন করার ফলে এবিষয়ে যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই চুক্তিকে বুড়াে আঙুল দেখিয়ে তারা গােপনে অস্ত্র উৎপাদন ও মজুতের কাজ চালিয়ে যায়।


পরমাণু অস্ত্র প্রতিযােগিতার ফলাফল


[1] সভ্যতার বিলুপ্তির আশঙ্কা: পরমাণু অস্ত্র প্রতিযােগিতা পৃথিবীর মানব-সভ্যতার অস্তিত্বকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি ছাড়াও বর্তমানে মাঝারি শক্তিসম্পন্ন বহু দেশের হাতে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে যা সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস করেও শেষ হবে না।


[2] দূষণ: পরমাণু অস্ত্র প্রতিযােগিতা পৃথিবীর পরিবেশদূষণের মাত্রাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে যেখানেই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানাে হােক না কেন পরমাণুর বর্জ্যপদার্থ প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে সীমাহীন দূষণ ছড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, সম্প্রতি জাপানের পরমাণু কেন্দ্র সুনামির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরমাণু বর্জ্য প্রকৃতিতে মিশে জমির ধান, নদীর মাছ সব কিছু প্রবেশ করেছে। মানুষ তার পরােক্ষ প্রভাবে ক্যান্সারসহ নানা রােগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী হচ্ছে বা হবে।


[3] অর্থনৈতিক ক্ষতি: অস্ত্র প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সেসব দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রকৃত উন্নয়ন কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


[4] তৃতীয় বিশ্বের দুর্দশা: বৃহৎ শক্তিগুলি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে সেই ব্যয় আদায় করার জন্য তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশে নানাভাবে শােষণ চালাচ্ছে। ফলে, এসব দেশের মানুষ দিনদিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। এসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে।


[5] শক্তির অপব্যবহার: পরমাণু শক্তির মাত্রা খুবই ব্যাপক। এই শক্তিকে মানবকল্যাণে বহু কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পরমাণু শক্তির গুরুত্ব সীমাহীন। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র প্রতিযােগিতার নেমে বহু দেশ পরমাণু শক্তির শুভ দিকটিকে কাজে না লাগিয়ে এই শক্তির অপব্যবহার করছে।


আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল? ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করাে।


পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযােগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ বর্ণনা করাে।


পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযােগিতা রােধের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে সার্বিক প্রচেষ্টার আলােচনা করাে।