আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কারণগুলি কী?

সূচনা: বিভিন্ন কারণে আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। এর পরিণতি হিসেবে শুরু হয়েছিল একাধিক আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ।


আরব জাতীয়তাবাদ উন্মেষের কারণ

[1] ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন: কয়েকজন আরব নেতা সমস্ত রকম কলুষতা থেকে ইসলামকে মুক্ত করে তাকে আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে একটি সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন, যা আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছিল।


[2] অতীত ঐতিহ্যের চর্চা: আল-বেরুনি, শেখ শাদি, ওমর খৈয়াম, আমামুদি,ইবন সিনা প্রমুখ বিদগ্ধ ব্যক্তি আরববাসীকে অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব মনে করিয়ে দেয়। সিরিয়াতে আরবি ভাষা ও সাহিত্যচর্চা আরবদের মধ্যে জাতীয়তাবােধের উন্মেষ ঘটায়।


[3] ব্রিটিশ নীতি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিদেশ-সচিব আর্থার ব্যালফুর এক ঘােষণাপত্র জারি করে বলেন—ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় বাসভূমি গড়ে তােলার পক্ষে। এজন্য ব্রিটেন তার সাধ্যমতাে চেষ্টা চালাবে। ব্রিটিশের এই ঘােষণাপত্র আরবদের ঐতিহ্যে আঘাত দেয়।


[4] ভার্সাই সন্ধির দায়িত্ব: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ভার্সাই সন্ধিতে (১৯১৯ খ্রি.) মিত্রশক্তি আরব জাতীয়তাবাদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল। ঔপনিবেশিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বা লিগের নির্দেশে ইরাক ও প্যালেস্টাইন যায় ব্রিটেনের এবং সিরিয়া ও লেবানন যায় ফ্রান্সের রক্ষণাধীনে।


[5] জিওনবাদী আন্দোলন: উনবিংশ শতকের শেষদিকে প্যালেস্টাইনে স্বাধীন ইহুদি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, যা জিওনিস্ট আন্দোলন (জিওনবাদী) নামে পরিচিত। এর ফলে আরব জাতীয়তাবাদী ও জিওনবাদী আন্দোলনের ঘাতপ্রতিঘাত সৃষ্টি হয়।


প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পরিচয়


[1] যুদ্ধের বর্ণনা: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে ইজরায়েল রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি আরব রাষ্ট্র (মিশর, জর্ডন, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাক) ইজরায়েলের ওপর আক্রমণ হানলে সূচনা ঘটে প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের। জনসংখ্যা ও সামরিক শক্তির দিক থেকে আরবরা অনেক এগিয়ে থাকলেও ইজরায়েল শেষপর্যন্ত যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রজোটকে পরাজিত করে জয়ী হয়। সুযােগ বুঝে বিজয়ী ইজরায়েল জাতিপুঞ্জ-নির্ধারিত সীমানার বাইরে অনেক বেশি এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে এ শান্তি ছিল নিতান্ত সাময়িক।


[2] যুদ্ধের ফলাফল: প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েল জয়লাভ করে। ইজরায়েলের এই সাফল্য ছিল চমকপ্রদ।


  • ইজরায়েলের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি: আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে জয়ের ফলে ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল দখল করে এবং লােহিত সাগরে অবস্থিত মিশরের এইলাট বন্দরের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে জেরুজালেমকে দু-ভাগে বিভক্ত করে একটি ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অপরটি জর্ডনের অধীনস্থ করা হয়।


  • ফিলিস্তিনিরা দেশচ্যুত: এই যুদ্ধের ফলে প্রায় ২০ লক্ষ নিরীহ ফিলিস্তিনি গৃহহারা ও দেশছাড়া হয়। তারা জর্ডন, লেবানন, মিশর ও সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে চরম দুর্দশার মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।


  • আরবে উদ্বাস্তু সমস্যা: আরব দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমন তাদের মধ্যে ইজরায়েলের প্রতি বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়।


  • আরব রাজনীতিতে পরিবর্তন: যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আরব রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হয়। মিশরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সঞ্চারিত হতে থাকে; ফলাফলস্বরূপ সিরিয়াতে সরকার-বিরােধী অভ্যুত্থান শুরু হয়।


  • ইজরায়েলকে বৃহৎ শক্তিবর্গের সমর্থন: আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে সমর্থন করে এবং তার নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেয়।


[3] আরবদের ব্যর্থতার কারণ


  • পুরােনাে অস্ত্রশস্ত্র: যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকতার বিচারে আরবরা ইজরায়েলের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল।


  • অনৈক্য: আরব রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐক্যের প্রবল অভাব ছিল। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন ইহুদি সংস্থার কাছ থেকে ইজরায়েল পূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছিল।


বেলগ্রেড সম্মেলন (১৯৮৯ খ্রি.) থেকে পরবর্তী শারম-এল-শেখ পর্যন্ত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনগুলির প্রসার আলােচনা করাে।


বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা কতখানি তা আলােচনা করাে।


নির্জোট আন্দোলনের অবদান সংক্ষেপে লেখাে। জোটনিরপেক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের সম্পর্ক সংক্ষেপে লেখাে।