তৃতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি লেখাে | চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের (ইয়মকিপুর) বর্ণনা দাও।

তৃতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি

[1] জর্ডন নদীর গতিপথকেন্দ্রিক বিবাদ: ইজরায়েল চেয়েছিল একটি কৃত্রিম খালের দ্বারা জর্ডন নদীর গতিপথকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে। কিন্তু সিরিয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালে শুরু হয় ইজরায়েল-সিরিয়া সংঘর্ষ, যা আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সাহায্য করে।


[2] উদ্বাস্তু সমস্যা: প্যালেস্টাইনের ইজরায়েল অঞ্চল থেকে আরবদের বিতাড়িত করা হয়। এক্ষেত্রে ইজরায়েলের বক্তব্য—আরবরা ইজরায়েলের অস্তিত্ব বিনাশে সচেষ্ট। অপরদিকে আরবদের বক্তব্য হল—প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের সুরক্ষিত করার অজুহাতে আরবদের গৃহচ্যুত করা হচ্ছে।


[3] মার্কিন প্ররােচনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় সােভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রােধের উদ্দেশ্যে ইজরায়েলকে তার প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে প্ররােচনা দেয়।


[4] প্রত্যক্ষ কারণ—নাসেরের দায়িত্ব:


  • [i] মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসের সিনাই অঞ্চলে সেনাবাহিনী মােতায়েন করেন (১৯৬৭ খ্রি., ২০ মে)। 

  • [ii] তিনি ২২ মে টিরান প্রণালী দিয়ে ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন। 

  • [iii] আকাবা উপসাগর অবরােধ করেন তিনি, ফলে ইজরায়েলে এইলাট বন্দর বন্ধ হয়।


[5] যুদ্ধের সূত্রপাত: আরবরা যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ইজরায়েলের বিমানবাহিনী ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আরব প্রজাতন্ত্রের ওপর অতর্কিত আক্রমণশুরু করে। ফলস্বরূপ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়।


[6] গুরুত্ব


  • ইজরায়েলের সাফল্য: এই যুদ্ধে ইজরায়েল সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত বহু স্থান দখল করে।


  • রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা: এই যুদ্ধের পর থেকে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আরব রাষ্ট্রগুলি সােভিয়েত রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়।


চতুর্থ আরব ইজরায়েল যুদ্ধ (ইয়মকিপুর যুদ্ধ)


[1] ইয়মকিপুর যুদ্ধ নামকরণের কারণ: 'ইয়মকিপুর'-এর অর্থ হল ইহুদিদের প্রায়শ্চিত্তের দিন। এই দিনটিতে ইহুদিরা উপবাস ও প্রার্থনার মাধ্যমে শান্তি কামনা করে। এই দিনটিতে অর্থাৎ ৬ অক্টোবরে ইহুদিরা বাৎসরিক উৎসব পালন করে। কিন্তু ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে, এই বিশেষ দিনটিতে (৬ অক্টোবর) মিশর ও সিরিয়ার মিলিত বাহিনী ইজরায়েল অধিকৃত সিনাই উপত্যকা অঞ্চলের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে। ইজরায়েলি সৈন্যরা এই সামরিক অভিযানের প্রতিরােধ করতে গেলে শুরু হয় চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ, যা 'ইয়মকিপুর' যুদ্ধ (৬-২৫ অক্টোবর, ১৯৭৩ খ্রি.) নামে পরিচিত।


[2] ইয়মকিপুর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট


  • আরবদের প্রতিশোধমূলক মনােভাব: আরবরা প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হতে উদগ্রীব ছিল। তৃতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের সময়কার ইজরায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলি। উদ্ধারের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলি সচেষ্ট হয়ে উঠলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়।


  • ইজরায়েলের জঙ্গি আক্রমণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র সাহায্য নিয়ে ইজরায়েল জর্ডন ও ইরাকের ওপর বােমা বর্ষণ করলে মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় সংকট দেখা দেয়। ইজরায়েলের এই পালটা জঙ্গি আক্রমণের মােকাবিলায় আরব দেশগুলি একজোট হলে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়।


  • দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিচারিতা: মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের মৃত্যুর পর নতুন রাষ্ট্রপতি হন মহম্মদ আনােয়ার সাদাত। তিনি একদিকে ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মিশরীয় সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে সাজিয়ে তােলেন, অপরদিকে অধিকৃত আরব ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার জন্য আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইজরায়েলের সঙ্গে এক রাজনৈতিক বােঝাপড়ার উদ্যোগ নেন। আবার ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গােল্ডামেয়ার প্রথমে শান্তির কথা বলেও পরে শান্তির উদ্যোগ থেকে সরে আসেন।


  • প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ: প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দিনের পর দিন তীব্র রূপ নিতে থাকে। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (PFLP) নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি খুনজখম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজ শুরু করে। এ ছাড়াও ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক উগ্রপন্থী সংস্থাটি মিউনিখ অলিম্পিকে যােগদানকারী। (১৯৭২ খ্রি.) ১১ জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে হত্যা করে।


[3] যুদ্ধের সূচনা: ইয়মকিপুর উৎসবের দিনে যুদ্ধের সূচনা ঘটে। অবশেষে রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও সােভিয়েত উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি ঘােষিত হয় (১৯৭৩ খ্রি., ২৪ অক্টোবর)।


[4] ফলাফল:


  • [i] প্যালেস্টাইনের অধিকৃত অঞ্চলগুলি ইজরায়েল নিজের দখলে রাখে। 

  • [ii] জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টায় ইজরায়েল সুয়েজ খাল সংলগ্ন অঞ্চল হতে নিজের সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিলে মিশর সুয়েজ খালের ওপর নিজের কর্তৃত্ব ফিরে পায়। সুয়েজ খাল ধরে জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী মােতায়েন রাখা হয়। 

  • [iii] মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের উদ্যোগে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান আনােয়ার এল সাদাত ও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াজক রাবিন মধ্যে আরব-ইজরায়েল শান্তি চুক্তি (১৯৭৭ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়।


আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কারণগুলি কী?


কীভাবে স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়? ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে কী প্রভাব ফেলেছিল?


১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি আলােচনা করাে। দ্বিতীয় আরবইজরায়েল যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।