নয়া উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism)-এর বৈশিষ্ট্য লেখাে।

সূচনা: 'নয়া উপনিবেশবাদ'— এই কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ফরাসি ইতিহাসবিদগণ এবং মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকগণ।


নয়া উপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

[1] উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ: অনেকে নয়া উপনিবেশবাদকে উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ আখ্যা দিয়ে থাকেন। যদিও অতীত উপনিবেশগুলির অর্থনীতি-সহ নানা ক্ষেত্রগুলির ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাইরে থেকে তার নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখে কিন্তু অতীত উপনিবেশগুলি আপাতভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকে।


[2] বাজার অর্থনীতি: নয়া উপনিবেশবাদের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল বাজার অর্থনীতি (Market Economy)। বাজারি অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে পুঁজিবাদ বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে উদ্যত। রাশিয়া ও চিন এই দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের হাত ধরে বাজারি অর্থনীতি প্রবর্তিত হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজারি অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে।


[3] আনুষ্ঠানিকতাহীন সাম্রাজ্যবাদ: অনেকের ধারণায় নয়া উপনিবেশবাদ আনুষ্ঠানিকতাহীন সাম্রাজ্যবাদ (Informal Imperial ism) ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এই ব্যবস্থায় সরাসরি সাম্রাজ্য স্থাপন না করে বাইরে থেকে সুকৌশলে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও দুর্বল দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে সুকৌশল বলতে বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক অনুদান, আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাহায্যদানকে বােঝানাে হয়েছে।


[4] অর্থনৈতিক অধীনতা: নয়া উপনিবেশবাদের আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল অর্থনৈতিক অধীনতা (Economical Dependency)। ধনী বিশ্বের বহুজাতিক সংস্থাগুলি অতীত দিনের উপনিবেশগুলির আর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এগিয়ে আসে। বহুজাতিক সংস্থাগুলি মূলত তিনটি উপায়ে বহির্বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, যথা- [i] মূলধনের লগ্নি। [ii] প্রযুক্তিগত কলাকৌশল সরবরাহ। [iii] পরিচালনা দক্ষতার ধারণাদান। কোনাে দেশের শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য এই তিনটি উপাদান অপরিহার্য।


[5] সামরিক নিয়ন্ত্রণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ন্যাটো, সিয়াটো, সেন্টো বা বাগদাদ চুক্তি, অ্যানজাস চুক্তি প্রভৃতি গঠনের মাধ্যমে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি দুর্বল দেশগুলির ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, পশ্চিম জার্মানি, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশগুলি নিজেদের সমরকৌশলের অঙ্গরূপে নিরাপত্তার নামে অনুন্নত দেশগুলিতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে।


[6] রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে অনেক সময় দুর্বল দেশগুলিকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সে দেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সরকারকে শেষপর্যন্ত পুতুল সরকারে পরিণত করে।