ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে গৃহীত যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলােচনা করাে। এই পরিকল্পনা কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ও দেশীয় রাজ্যসমূহ

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সাইমন কমিশন ভারতে আসার পর থেকে ব্রিটিশ ভারত ও ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের জন্য আলােচনা শুরু হয়।


[1] নেহরু রিপোর্ট: ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারতের জন্য একটি সংবিধানের খসড়া রচিত হয় যা নেহরু রিপাের্ট নামে পরিচিত। এই রিপোের্টে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। এই যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্র ও রাজ্যে দায়িত্বশীল সরকার গঠিত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় আইনসভার হাতে। তবে দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষমতা লাভ করবে এবং নিজ নিজ রাজ্যের অভ্যন্তরীণ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারবে।


[2] গােলটেবিল বৈঠক: ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে প্রথম গােলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের আলােচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন। ভারতের বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে যােগ দেয়। তবে এই আলােচনা সফল হয়নি।


[3] দিল্লি চুক্তি: দেশীয় রাজ্যগুলির সংগঠন চেম্বার অব প্রিন্সেস ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের মধ্যে 'দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এর পাশাপাশি প্রস্তাবিত এই যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় রাজ্যগুলির নিজেদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন দাবিও জানানাে হয়, যেমন—তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষে আসন সংরক্ষণ এবং প্রয়ােজনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অধিকার দাবি করা হয়। তাদের অধিকাংশ দাবিদাওয়া ব্রিটিশ সরকার ও ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ খারিজ করে দিলে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।


[4] ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫: ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে বলে যে, ভারতের অন্তত ৫০ শতাংশ দেশীয় রাজ্য ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেশন নামক চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রস্তাবিত এই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিস্তরীয় কেন্দ্রীয় আইনসভার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আসন দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের জন্য রাখা হয়। কিন্তু এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।


[5] নির্বাচন পরবর্তী উদ্যোগ: ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কংগ্রেস ব্যাপক সাফল্য লাভ করার পর লর্ড লিনলিথগাে দেশীয় রাজপুরুষদের কাছে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাের প্রস্তাব দেয় (জানুয়ারি, ১৯৩৯ খ্রি.)। কিন্তু দেশীয় রাজ্যগুলি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ইউরােপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস আপাতত বন্ধ হয়।


যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার ব্যর্থতা


[1] গণতান্ত্রিকতার আশঙ্কা: দেশীয় রাজ্যের শাসকগণ নিজ নিজ রাজ্যে স্বৈরশাসন চালু করেছিলেন। তারা আশঙ্কা করেন যে, প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দিলে ব্রিটিশ ভারতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকদের স্বৈরশাসনের বিরােধিতা করে সেখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মদত দিতে পারেন।


[2] অধিকারহীনতার আশঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলে প্রস্তাবিত এই রাষ্ট্রে দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকার কতটা থাকবে তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন বা এর পূর্ববর্তী আলােচনাগুলিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। তাই দেশীয় রাজ্যগুলি প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দিতে শঙ্কিত ছিল।


[3] ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির আশঙ্কা: স্বাধীনতা লাভের পূর্ববর্তী দুই দশকে ভারতে অসংখ্য ক্ষুদ্র দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তারা আশঙ্কা করে যে, প্রস্তাবিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দিলে এই রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভায় তাদের রাজ্যের প্রতিনিধির সংখ্যা খুব কম হবে। ফলে তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার যথেষ্ট খর্ব হবে।


[4] কংগ্রেসের আশঙ্কা: কংগ্রেস আশঙ্কা করে যে, দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলে সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভায় কংগ্রেস সংখ্যাধিক্য আসন লাভে ব্যর্থ হবে। তাই কংগ্রেস এবিষয়ে উদাসীনতা দেখায়।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশদের সম্পর্ক কীরূপ ছিল তা আলােচনা করাে।


অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি বলতে কী বােঝ? অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্তগুলি কী ছিল? কোথায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়ােগ করা হয়?


স্বত্ববিলােপ নীতির পরিচয় ও প্রয়ােগ লেখাে। ডালহৌসি আর কোন্ কোন্ উপায়ে দেশীয় রাজ্য দখল করেন?