স্বত্ববিলােপ নীতির পরিচয় ও প্রয়ােগ লেখাে | ডালহৌসি আর কোন্ কোন্ উপায়ে দেশীয় রাজ্য দখল করেন?

স্বত্ববিলােপ নীতি

পরিচয়: ভারতের ব্রিটিশ বড়ােলাট লর্ড ডালহৌসি যেসব নীতি অবলম্বন করে এদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটান সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য হল স্বত্ববিলােপ নীতি। এই নীতি অনুসারে তিনি ব্রিটিশ কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যগুলির অপুত্রক রাজাদের দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকার নাকচ করেন। তাই সেই রাজার মৃত্যুর পর তার সিংহাসনে উত্তরাধিকারীর স্বত্ব বা অধিকার বিলুপ্ত হত। ফলে সেই রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হত।


স্বত্ববিলােপ নীতির শর্তাবলি: লর্ড ডালহৌসি প্রবর্তিত স্বত্ববিলােপ নীতির প্রধান শর্তাবলি অনুসারে


  • দেশীয় রাজ্যগুলির শ্রেণিবিভাগ: ডালহৌসি ভারতের দেশীয় হিন্দু রাজ্যগুলিকে প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত করেন, যথা

    • [a] কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য। 

    • [b] কোম্পানির আশ্রিত বা অধীনস্থ করদ রাজ্য এবং 

    • [c] স্বাধীন দেশীয় রাজ্য।


  • কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট কোনাে দেশীয় রাজ্যের রাজার পুত্রসন্তান না থাকলে সেই রাজা কোনাে উত্তরাধিকারী বা দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবেন না। ফলে রাজার মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারীর অভাবে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে।


  • কোম্পানির আশ্রিত করদ রাজ্য: কোম্পানির আশ্রিত করদ রাজ্যের রাজারা কোম্পানির অনুমতি নিয়ে দত্তক সন্তান গ্রহণ করতে পারবে। তবে কোম্পানি সেই দেশীয় রাজাকে দত্তক গ্রহণের অনুমতি না দিলে রাজার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীহীন রাজ্যটি কোম্পানির অধিকারে চলে যাবে।


  • স্বাধীন দেশীয় রাজ্য: স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলির উত্তরাধিকার সম্পর্কে সরকার কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।


স্বত্ববিলােপ নীতির প্রয়োগ


লর্ড ডালহৌসির আগে মণ্ডাভি (১৮৩৯ খ্রি.), কোলাবা ও জলায়ুন (১৮৪০ খ্রি.) এবং সুরাটে (১৮৪২ খ্রি.) স্বত্ববিলােপ নীতির প্রয়ােগ ঘটানাে হয়। তবে ভারতে সর্বপ্রথম ডালহৌসিই এই নীতি কঠোরভাবে প্রয়ােগ করে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং কয়েকজন দেশীয় রাজার পদমর্যাদা বাতিল করেন, যেমন


[1] রাজ্য অধিকার: ডালহৌসি স্বত্ববিলােপ নীতির মাধ্যমে সাতারা (১৮৪৮ খ্রি.), জয়েৎপুর, সম্বলপুর, বাঘাট ও ভগৎ (১৮৫০ খ্রি.), উদয়পুর (১৮৫২ খ্রি.), করৌলি, ঝাসি ও নাগপুর (১৮৫৪ খ্রি.) প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।


[2] রাজার পদমর্যাদা বাতিল: স্বত্ববিলােপ নীতি প্রয়ােগ করে ডালহৌসি কয়েকজন দেশীয় রাজার পদমর্যাদা ও ভাতা বাতিল করেন। পেশােয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর মৃত্যুর (১৮৫১ খ্রি.) পর তার দত্তক পুত্র নানাসাহেবের বৃত্তি ও পেশােয়া উপাধি বাতিল করা হয়। কর্নাটকেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় (১৮৫৩ খ্রি.)।


দেশীয় রাজ্য দখলের অন্যান্য উপায়


ডালহৌসি স্বত্ববিলােপ নীতির প্রয়ােগ ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি উপায়ে ভারতের বেশ কয়েকটি দেশীয় রাজ্যকে দখল করেন এবং সেখানে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই উপায় বা পন্থাগুলি হল—


[1] যুদ্ধের দ্বারা রাজ্যজয়: ডালহৌসি দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে জয়লাভ করে পাঞ্জাব (১৮৪৯ খ্রি.), দ্বিতীয় ইঙ্গ ব্রয় যুদ্ধে জয়লাভ করে দক্ষিণ ব্রহ্ম, আরাকান ও তেনাসেরিম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।


[2] কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য গ্রাস: কুশাসনের অজুহাতে ডালহৌসি অযােধ্যা রাজ্যটি দখল করে নেন।


এ ছাড়াও লর্ড ডালহৌসি অন্যান্য কিছু অজুহাতে সিকিমের একাংশ ও হায়দ্রাবাদের বেরার প্রদেশটি দখল করেন।


ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশদের সম্পর্ক কীরূপ ছিল তা আলােচনা করাে।


অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি বলতে কী বােঝ? অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্তগুলি কী ছিল? কোথায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়ােগ করা হয়?