দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত ইন্দোনেশিয়াতে ইউরােপীয় উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যালােচনা করাে।

সূচনা: প্রাচীন যুগে ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দু রাজারা রাজত্ব করতেন। যােড়শ শতকের শেষ দিকে স্পেনীয়, ইংরেজ এবং ডাচ (ওলন্দাজ) শক্তিবর্গ ইন্দোনেশিয়াতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। শেষপর্যন্ত ডাচ বণিক কোম্পানি (Netherlands United East India Com pany) ইন্দোনেশিয়াতে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলতে সফল হয়।


ইন্দোনেশিয়া: প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতি

[1] ডাচ শাসন: ডাচ কোম্পানির শাসনের অবসানের পর ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ডাচ সরকার প্রত্যক্ষভাবে ইন্দোনেশিয়ার শাসনভার হাতে নেয়। ডাচ শাসনব্যবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বাস্তবে আবিষ্কৃত তৈলখনি থেকে তেল রপ্তানি করে এবং উৎপাদিত রবার বিক্রয় করে ডাচ সরকার ফুলেফেঁপে উঠলেও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলি অবহেলিতই থেকে যায়।


[2] ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদ


  • উন্মেষ: ইন্দোনেশিয়াতেও উপনিবেশবাদ বিরােধিতা শুরু হয়। ডাচ সরকারের সেনাদের সঙ্গে ইন্দোনেশীয়দের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু লড়াই বাধে, যেমন—জাভার যুদ্ধ, সুমাত্রায় সংঘটিত পার্দেরি যুদ্ধ এবং আচে যুদ্ধ প্রভৃতি। এই লড়াইগুলিকে 'Pre-Nationalist Movement' বা প্রাক্‌-জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বলা যায়।


  • রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা: ইতিপূর্বে ইন্দোনেশিয়ায় গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠান, যেমনবুদি উতােমা (বুদ্ধি উত্তম), সারেকত ইসলাম (মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন), কমিউনিস্ট দল PKI (Partai Komunis Indonesia) প্রভৃতি। এই সমস্ত দলগুলির নেতৃত্বে ডাচ সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী লড়াই শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা ড. সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ায় ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন সারেকত ইসলাম ইন্দোনেশিয়ায় স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের দাবি জানায়।


[3] কলােনিয়াল কাউন্সিল গঠন: ইন্দোনেশিয়ার উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনের প্রথম সফলতা ছিল এক কলােনিয়াল কাউন্সিল বা ভােকস্রাদ (Volksraad) গঠন (১৯১৮ খ্রি.)।


[4] উপনিবেশ বিরােধী জাতীয় আন্দোলন: হল্যান্ডে পাঠরত ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসী ছাত্ররা পেরহিম্পানান ইন্দোনেশিয়া বা ইন্দোনেশীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সুকর্ণ ইন্দোনেশীয় ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে গঠন করেন (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ, ৪ জুলাই) ইন্দোনেশীয় জাতীয় দল বা PNI (Partai Nasional Indonesia) এই দল সর্বপ্রথম দেশজুড়ে এক অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেয়। জাতীয় দলের শক্তিবৃদ্ধিতে ভীত হয়ে ডাচ সরকার সুকর্ণ-সহ অন্য তিন নেতাকে কারারুদ্ধ করে। এসময়ে হল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত মহম্মদ হাত্তা PNI দলকে নেতৃত্ব দেন।


[5] জাপানি সাম্রাজ্যবাদ কায়েম: থাইল্যান্ড অধিকার করার পর জাপানি সেনারা ইন্দোনেশিয়ার দখল নেয় (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ)। ফলে ইন্দোনেশিয়ায় জাপানি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ কায়েম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে জাপানের পরাজয় আসন্ন হলে জাপান ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে।


[6] ব্রিটিশ সমরবাহিনীর দখলদারি: জাপান সরে দাঁড়ালে পটসডাম চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনী আপাতভাবে ইন্দোনেশিয়ার দখলদারি নেয়।


[7] ডাচ শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা: ব্রিটিশ মদতে সুমাত্রা ও জাভা ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে ডাচ কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র রূপ নিলে ব্রিটিশের মধ্যস্থতায় ডাচ ইন্দোনেশীয় চুক্তি (লিঙ্গজ্যোতি) স্বাক্ষরিত হয় (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ নভেম্বর)। চুক্তির শেষে ব্রিটিশ সেনাদল ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে।


[8] ডাচ শাসনের অবসান: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (UNO) মধ্যস্থতায় ইংল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া উভয় পক্ষের মধ্যে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ডাচরা ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে। স্বাধীন United States of Indonesia বা USI-এর প্রথম রাষ্ট্রপতি হন সুকর্ণ আর প্রধানমন্ত্রী হন সুতান জাহরির।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে জাপানিদের সংযােগজনিত ধারা বিশ্লেষণ করাে।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনে ইউরােপীয় উপনিবেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি আলােচনা করাে।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়ায় ইউরােপীয় উপনিবেশ বিস্তারের বর্ণনা দাও।