দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়ায় ইউরােপীয় উপনিবেশ বিস্তারের বর্ণনা দাও।

ইন্দোনেশিয়ায় ইউরােপীয় উপনিবেশের পরিবর্তিত প্রাথমিক পরিস্থিতি

সূচনা: জাভা, সুমাত্রা, দক্ষিণ বাের্নিয়াে, সেলিবিস, বালি, লম্বাক, ফ্লোরেস, মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম ইরিয়ন এবং তিমাের দ্বীপের অংশবিশেষ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গঠিত। বাণিজ্যের লক্ষ্যে এখানে একের পর এক ইউরােপীয় শক্তির আগমন ঘটে।


ইন্দোনেশিয়ার ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি


[1] পাের্তুগিজ শক্তি


  • অনুপ্রবেশ: ষােড়শ শতক থেকে ইউরােপীয় অর্থনীতিতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ইউরােপীয় বণিক গােষ্ঠীগুলির সমুদ্র বাণিজ্যের প্রধান গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। মূলত মশলা বাণিজ্যের তাগিদেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়ায় একাধিক ইউরােপীয় শক্তি আসে। এক্ষেত্রে সবার আগে পাের্তুগিজদের অনুপ্রবেশ ঘটে।


  • মালাক্কা অধিগ্রহণ: মশলা বাণিজ্যের লক্ষ্যে পাের্তুগিজরা ইন্দোনেশিয়াতে আসে। সমকালীন বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র মালাক্কা দ্বীপ তারা অধিগ্রহণ করে (১৫১১ খ্রি.)।


  • স্থানীয় পৃষ্ঠপােষকতা লাভ: ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাজ্যের অধিকাংশে মুসলিম শাসকদের আধিপত্য বজায় ছিল। আচে (Acheh) রাজ্যের সুলতান পর্তুগিজদের বিরােধিতা করলেও টারনেট (Ternate) ও টিডাের (Tidore)-সহ একাধিক দ্বীপরাজ্যের সুলতানগণ পাের্তুগিজদের সাহায্য করেন।


  • আধিপত্যের অবস্থান: পাের্তুগিজদের তরফে ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসীদের ওপর জোর করে খ্রিস্টধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা মুসলিম শাসক ও প্রজাদের মনে সন্দেহ তৈরি করে। সুলতান বাবুল্লাহর নেতৃত্বে পাের্তুগিজ বিরােধিতা চরমে পৌঁছােয়। শেষপর্যন্ত পাে্তুগিজদের প্রভাব কমতে থাকে এবং পাের্তুগিজ আধিপত্যের অবসান ঘটে।


[2] ওলন্দাজ বা ডাচ শক্তি


  • অনুপ্রবেশ: সপ্তদশ শতকের শেষদিকে পাের্তুগিজ ও ইংরেজদের বিতাড়িত করে ওলন্দাজ বা ডাচরা এককভাবে ইন্দোনেশিয়াতে অবিসংবাদিত ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।


  • কোম্পানি প্রতিষ্ঠা: পাের্তুগিজদের সঙ্গে দ্বন্দ্বকালে ওলন্দাজ বাণিজ্য ব্যাহত হতে থাকে। তা ছাড়া যুদ্ধকালে মূল্যবৃদ্ধিও চরমে পৌছােয়। এই পরিস্থিতিতে ওলন্দাজরা গঠন করে ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা VOC (Vereenigde Oostindische Compagnie)


  • কোম্পানি শাসনের অবসান: ইউরােপীয় রাজনীতিতে ডাচরা ব্রিটিশের কাছে পর্যুদস্ত হয়। এর জেরে ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যে ডাচদের একাধিপত্যের অবসান ঘটে (১৭৮৪ খ্রি.)।


ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদ


[1] উন্মেষ: ইন্দোনেশিয়ায় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম জাতীয়তাবাদী জাগরণ ঘটে 'বুদি উতােমা' নামে এক সংস্কারধর্মী ও শিক্ষামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে (১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ)। একই সময়ে স্থানীয় শাসকগােষ্ঠী বা বৃূপতি (ভূপতি)-দের উদ্যোগে গড়ে ওঠে শশাঙ্ক পূর্নামা’ (একটি সূচনা) নামে আর একটি সংগঠন। এই দুই সংগঠন মিলে ইন্দোনেশিয়াতে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়।


[2] প্রসার: পূর্ব জাভার অধিবাসী জওয়েস ডেকার নামে এক সাংবাদিক এক ডাচ বিরােধী সংঘবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তােলেন। তিনি ডেকার 'ইন্ডিজ পার্টি (ইন্দিশে পারতিজ) নামে এক দল গঠন করেন। এই দলের লক্ষ্য ছিল—


  • [a] আইনের চোখে সমস্ত জাতির সমতার স্বীকৃতি, 

  • [b] সমান শ্রমের ক্ষেত্রে সমান বেতন দান, 

  • [c] হল্যান্ডের হাত থেকে মুক্তিলাভ।


উপসংহার: পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জাভা থেকে ধীরে ধীরে ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। মাতৃভাষায় মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রচলন, বেতার ব্যবস্থার প্রবর্তন, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানিদের অগ্রগতি পর্যালােচনা করাে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে জাপানিদের সংযােগজনিত ধারা বিশ্লেষণ করাে।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনে ইউরােপীয় উপনিবেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি আলােচনা করাে।