'এশীয়দের জন্য এশিয়া'—এই উক্তির আড়ালে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় দাও।

সূচনা: এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে জাপান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। শুধু তাই নয় জাপান চেয়েছিল ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সমকক্ষ হয়ে উঠতে। এই আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে জাপান স্লোগান তুলেছিল এশীয়দের জন্য এশিয়া।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জাপানি সাম্রাজ্যবাদ

[1] সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ গ্রহণ: ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিন জাপান যুদ্ধ শুরু হয়। এশিয়া ভুখণ্ডে জাপান আধিপত্য বিস্তার করতে গেলে চিন ও জাপানের মধ্যে এই বিরােধের সূচনা ঘটে। এশিয়া ভুখণ্ডে রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে জাপান চেয়েছিল কোরিয়াকে পরাজিত করতে। কিন্তু কোরিয়া জাপানের হাতে চলে যাক চিন তা চায়নি। তাই চিন জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। চিন জাপান যুদ্ধে চিনের পরাজয় ও শিমােনােসেকির সন্ধির ফলে চিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[2] জাপানি সাম্রাজ্যবাদের তীব্রতা বৃদ্ধি: রুশ-জাপান যুদ্ধে জেতার পর জাপানের সাম্রাজ্যবাদের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ইতিপূর্বেই শিমােনােসেকির সন্ধি বলে জাপান ফরমােজা দ্বীপের অধিকার লাভ করেছিল। পরে পাের্টসমাউথের সন্ধি বলে জাপান কোরিয়ার ওপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। রুশ জাপান যুদ্ধের পর দক্ষিণ মাঞ্রিয়াতে জাপানের প্রভাব স্বীকৃতি পায়। শিমােনােসেকির সন্ধির পর সুকৌশলে জাপান শান্টুং অঞ্চল নিজের অধিকারে আনে।


[3] একুশ দফা দাবি: শান্টুং প্রদেশে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার পর জাপান চীনের কাছে একুশ দফা দাবি পেশ করে। পরবর্তীকালে ভার্সাই সন্ধিতে জাপানের একুশ দফা দাবিগুলির মধ্যে বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়। দূর প্রাচ্যে জাপান এক প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জাপানি সাম্রাজ্যবাদ


[1] ওয়াশিংটন সম্মেলন: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে ইঙ্গ-জাপান চুক্তি বাতিলের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু জাপান এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তাই মার্কিন উদ্যোগে আয়ােজিত হয় ওয়াশিংটন সম্মেলন (১৯২১ খ্রি.)। এই সম্মেলনের মধ্যে জাপানের সামরিক শক্তি হ্রাস ও সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ওয়াশিংটন সম্মেলনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, হল্যান্ড, পাের্তুগাল, জাপান, চিন যােগদান করেছিল। এই সম্মেলনে তিনটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যথা—


  • [i] চতুঃশক্তি চুক্তি, 

  • [ii] পঞ্চশক্তি চুক্তি, 

  • [iii] নয়শক্তি চুক্তি।


[2] জাপানের মাঞ্চুরিয়া অধিকার: জাপান নিজের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিদর্শন হিসেবে চিনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলটি অধিকার করে নেয় (১৯৩২ খ্রি.)। সােভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি জাপানের সমালােচনা করে। রাষ্ট্রসংঘ ও লিটন কমিশনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাপানের মাঞ্চুরিয়া অধিগ্রহণকে সমালােচনা করেন।


[3] জাপানের মনরাে নীতি: মাঞ্চুরিয়া অধিকার করার পর রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকায় জাপান ক্ষুদ্ধ হয়। প্রতিবাদ হিসেবে জাপান রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। পূর্ব এশিয়াতে জাপান নিজের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে এক নতুন নীতি গ্রহণ করে। এই নীতির নাম 'জাপানি মনরাে ডকট্রিন ফর ইস্ট এশিয়া'। এই নীতি ঘােষণা করে জাপান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ যেন পূর্ব এশিয়াতে কোনাে বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে।


[4] পূর্ব এশিয়ার নতুন বিধান: জাপানের প্রধানমন্ত্রী পূর্ব এশিয়ার নতুন বিধান (New Order of East Asia) ঘােষণা করেন। (১৯৩৬ খ্রি.)। এই ঘােষণার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদ প্রবর্তন করা। জাপানের এই উদ্যোগে শঙ্কিত হয়ে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ চিনের পাশে দাঁড়ায়।


[5] ইন্দোচিন দখল: পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের প্রতিরােধ অগ্রাহ্য করে জাপান ইন্দোচিনের দখল নেয়। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে যাবতীয় রপ্তানি সামগ্রি বন্ধ করে দেয়। ফলে জাপান-মার্কিন সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়।


[6] প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধ: জাপান প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পার্ল হারবারে বােমা নিক্ষেপ করে মার্কিন বিরােধী অক্ষশক্তিজোটে যােগ দেয়। জাপানের সামরিক বাহিনী প্রথম দিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ইন্দো বর্মা সীমান্ত, অ্যালিসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, সােলেমনস, নিউ গিনি প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেয়। পরে অবশ্য জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের মিডওয়ে দ্বীপের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরাজিত হয়।


উপসংহার: শেষপর্যন্ত জাপানের হিরােসিমা ও নাগাসাকি শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বােমা নিক্ষেপ করলে জাপান আত্মসমর্পণ করে।


ক্ষমতা হস্তান্তর ও ভারতীয়দের অংশগ্রহণের ওপর আলােকপাত করাে।


ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রেক্ষাপট রচনায় ওয়াভেল পরিকল্পনা পর্যালােচনা করাে।


এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া নীতি বলতে কী বােঝ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান কেন এই নীতি গ্রহণ করে?