এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া নীতি বলতে কী বােঝ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান কেন এই নীতি গ্রহণ করে?

এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া নীতি

‘এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া’— এই নীতির অর্থ হল এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি নয় এশিয় রাজনৈতিক শক্তিই শাসন করবে। ইতিপূর্বে চিনের কাছে জাপান যে একুশ দফা দাবি করেছিল তাকে এশিয়ার মনরাে নীতি অর্থাৎ এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া বলে অভিহিত করা হয়। এই স্লোগানের আড়ালে জাপানের প্রকৃত বক্তব্য ছিল 'পশ্চিমি শক্তিগুলি নয়, এশিয়ায় কর্তৃত্ব করবে জাপান'।


জাপানের এই নীতি গ্রহণের কারণ / এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া—উদ্দেশ্য বা কারণ


[1] পশ্চিমি শক্তির প্রতিরােধ: জাপান মনে করত এশিয়ার কোনাে অংশে ইউরােপীয় শক্তিগুলির উপনিবেশ স্থাপনের অধিকার নেই। শুধু এশীয়রাই এশিয়া শাসন করার অধিকারী। তাই ইতিপূর্বে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত ইউরােপীয় শক্তিগুলি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল সেগুলির অবসান ঘটানাের লক্ষ্যে জাপান সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির স্থলে জাপান নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।


[2] জাপানি সম্প্রসারণ নীতি: এশীয়দের জন্য এশিয়া এই স্লোগান তুলে জাপান আসলে এশিয়া জুড়ে এক বৃহৎ জাপানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশেষত পূর্ব এশিয়ায় জাপান নিজের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা চারিতার্থ করতে চেয়েছিল। এই লক্ষ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তােজো 'বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া' সম্মেলন (১৯৪৩ খ্রি.)-এ এক বক্তৃতায় বলেন পূর্ব এশিয়ায় 'এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া' নীতির দ্বারা তাদের সম্প্রসারণের আশা পরিচালিত হয়েছে।


[3] এশীয় ঐক্যগঠন: এশীয়দের জন্য এশিয়া এই স্লোগান তুলে জাপান এশীয় শক্তিগুলিকে একজোট করতে চেয়েছিল। জাপান চেয়েছিল এশীয় শক্তিগুলি একজোট হয়ে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলিকে প্রতিরােধ করুক। তাই জাপান পশ্চিমি দেশগুলির বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলির যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাপান এই অঞ্চলের রাজনৈতিক শক্তি ও জাতিগুলিকে মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল করানাের প্রচেষ্টা চালায়।


[4] এশিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাপান মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে অক্ষশক্তি জোটে যােগ দিয়েছিল। জাপান চেয়েছিল মিত্রশক্তি পক্ষ ইউরােপ ও আমেরিকার কর্তৃত্বাধীন এশিয় অঞ্চলগুলিতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। পশ্চিমি শক্তিগুলিকে সরিয়ে বৃহত্তর পূর্ব এশিয়ায় আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপান নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ হয়ে উঠেছিল। জাপান চেয়েছিল এশিয়ার নেতৃত্বভার থাকুক তার হাতে।


[5] প্রাকৃতিক সম্পদ লাভ: আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স-সহ ইউরােপীয় শক্তিগুলি পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে একটানা প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজের দেশে নিয়ে যায়। এইভাবে ইউরােপীয় দেশগুলিতে সহজে শিল্পের বিকাশ ঘটানাে হয়। জাপান এটা মেনে নিতে পারেনি কারণ জাপান মনে করত এশিয়া ভূখণ্ডের যাবতীয় সম্পদ ও কাঁচামালের ওপর অধিকার রয়েছে একমাত্র এশীয়দেরই। ইউরােপীয়দের এই অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলার বিরুদ্ধে জাপান সচেষ্ট হয়ে ওঠে এবং স্লোগান তােলে এশীয়দের জন্য এশিয়া।


মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী? এই পরিকল্পনার মাধ্যমে কীভাবে ভারত বিভাগ করা হয়? মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় ভারতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া।


ক্ষমতা হস্তান্তর ও ভারতীয়দের অংশগ্রহণের ওপর আলােকপাত করাে।


ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রেক্ষাপট রচনায় ওয়াভেল পরিকল্পনা পর্যালােচনা করাে।