১৯২০-র দশকে গুজরাটের কৃষকদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ আন্দোলন সম্পর্কে আলােচনা | এই আন্দোলনের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

১৯২০-র দশকে কৃষক আন্দোলন

[1] অসহযােগ আন্দোলনের প্রভাব: গান্ধিজি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযােগ আন্দোলন শুরু করলে গুজরাটে এই আন্দোলনের যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। এখানকার বারদৌলি তালুকে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। কল্যাণজি মেহতা, কুনবেরজি মেহতা, দয়ালজি দেশাই প্রমুখ নেতা বারদৌলির জনসাধারণকে গুজরাটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং সত্যাগ্রহের আদর্শ প্রচার করে জনগণকে সচেতন করে তুলতে থাকেন। গান্ধিজির উদ্যোগে এখানকার বিভিন্ন স্থানে সত্যাগ্রহ শিবির স্থাপন করে হরিজনদের মধ্যে সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সুরাপান, পণপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে হরিজন সমাজে প্রচার চালানাে হয়।


[2] করবৃদ্ধি: কৃষকদের আর্থিক দুর্দশা সত্ত্বেও সরকার ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঘােষণা করে যে, বারদৌলি অঞ্চলে রাজস্ব ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে। এর ফলে সবকর ৩০ শতাংশের পরিবর্তে রাজস্ব ২১.৯৭ শতাংশ বাড়ানাে হবে বলে ঘােষণা করে।


[3] খাজনা বন্ধ: কৃষকদের ওপর রাজস্ব বৃদ্ধি করা হলে গান্ধিজির অনুগামীরা কৃষকদের পুরােনাে রাজস্ব প্রদানও বন্ধ করতে বলেন। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল, সম্পূর্ণ রাজস্ব প্রদান বন্ধ করলেই সরকার তার রাজস্ব বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। সাধারণ কৃষকরা সম্পূর্ণ রাজস্ব প্রদান বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে গুজরাটের বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে শামিল হয়।


[4] বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগ: বারদৌলির সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে গান্ধিবাদী যুবক সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বারদৌলিতে আসেন। তাঁর নির্দেশে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা প্রদান বন্ধ করার শপথ গ্রহণ করে। প্যাটেল বারদৌলি অঞ্চলকে ১৩টি অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন অংশের আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পৃথক পৃথক নেতাদের হাতে তুলে দেন। ছাত্র যুবসহ। ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বল্লভভাই প্যাটেলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে গান্ধিজি বারদৌলিতে এসে (২ আগস্ট, ১৯২৮ খ্রি.) আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।


[5] আন্দোলনের প্রসার: সত্যাগ্রহ আন্দোলন ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আন্দোলনের খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বােম্বাই আইনসভার সদস্যরা আন্দোলনত কৃষকদের সমর্থন করে। আন্দোলনের সমর্থনে বােম্বাই-এর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কে. এন. মুন্সী ও লালজী নারায়ণজী তাদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। ফলে সরকার আরও বিপাকে পড়ে।


[6] মহিলাদের অংশগ্রহণ: বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে মহিলারাও যথেষ্ট সংখ্যায় যােগদান করে। মিঠুবেন প্যাটেল, ভক্তি বাঈ, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা প্রমুখ নারী বারদৌলি সত্যাগ্রহে যােগ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।


১৯২০-র দশকে কৃষক আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া


[1] তদন্ত কমিশন গঠন: কৃষকদের তীব্র আন্দোলনের চাপে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশন বারদৌলির রাজস্ব বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত ও অন্যায় কাজ বলে ঘােষণা করে।


[2] নতুন রাজস্ব নির্ধারণ: রাজস্ব বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিশন বারদৌলিতে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৬.০৩ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি অনুমােদন করে। কৃষকরা গান্ধিজির পরামর্শে এই নতুন রাজস্ব মেনে নেয়।


[3] কৃষকদের সাফল্য: বারদৌলির কৃষকদের সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সাফল্যের খবর গুজরাট তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।তারাবারদৌলির আন্দোলনের সাফল্যে উৎসাহিত হয় এবং ভবিষ্যতে সরকার-বিরােধী আন্দোলনের বিষয়ে মানসিক শক্তি অর্জন করে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করাে। এ প্রসঙ্গে ব্যাবিংটন স্মিথ কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।


ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী প্রভাব পড়েছিল? যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ভারতের কৃষকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে গুজরাটের কৃষকদের দুরবস্থার পরিচয় দাও। এই সময় সেখানকার কৃষকদের ওপর করের বােঝা বৃদ্ধি প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও তার পরিণতি উল্লেখ করাে।