ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী প্রভাব পড়েছিল? যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ভারতের কৃষকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ভারতীয় অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব অত্যন্ত প্রকট হয়ে ওঠে।


[1] আর্থিক সংকট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ ব্যয়িত হয়। ফলে যুদ্ধের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকট অত্যন্ত প্রকট হয়ে পড়ে। যুদ্ধকালে কৃষি ও শিল্পোৎপাদন দারুণভাবে কমে যায়। ফলে রপ্তানি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়। এতে ভারতীয়দের দারিদ্র ক্রমশ তীব্রতর হয়। ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের মূল্যসূচক ১০০ ধরা হলে তা ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ১৪৭-এ পৌঁছােয় এবং ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় ২২৫ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮১-তে।


[2] ঋণ সংগ্রহ: তীব্র আর্থিক দুর্দশার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করে। ফলে ভারতের জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনক্ষমতা যখন ব্রিটিশ রাজের কাছে যায় তখন ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ঋণ বেড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৭৪ মিলিয়ন পাউন্ডে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ৮৮৪.২ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছােয়।


[3] মূল্যবৃদ্ধি: যুদ্ধের প্রভাবে কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদন হ্রাস পেলেও পণ্যের চাহিদা মােটেই হ্রাস পায়নি। ফলে এই সময় দ্রব্যমূল্য যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। বস্ত্র, চিনি, লবণ, কেরােসিন প্রভৃতির মূল্য সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।


[4] দরিদ্রদের দুরবস্থা: কৃষি উৎপাদন হ্রাস, রপ্তানি ব্যাহত, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতির ফলে ভারতের দরিদ্র সাধারণ মানুষের দুরবস্থা তীব্রতর হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অনুপাতে কৃষি মজুর এবং শিল্প শ্রমিকদের মজুরি বিশেষ বাড়েনি। বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য বাড়লেও সে তুলনায় কৃষিপণ্যের মূল্য বাড়েনি। ফলে শ্রমিকরা তাদের উপার্জন দিয়ে এবং কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য বিক্রি করে জীবন-জীবিকার ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়। কৃষিপণ্যের মূল্য না বাড়ায় কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[5] কর বৃদ্ধি: দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের এরূপ দুর্দশার পরিস্থিতিতে সরকার আর্থিক সংকট মােচনের উদ্দেশ্যে দরিদ্র কৃষকদের ওপর করের বােঝা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং তা জোরপূর্বক আদায় করতে শুরু করে।


কৃষকদের ওপর অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব


ভারতীয় কৃষকদের ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটের তীব্র ও প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ করা যায়, যেমন一


[1] খাদ্য উৎপাদন হ্রাস: কৃষকের জীবনধারণের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট নিরসনে সরকার রপ্তানিযােগ্য ও অর্থকরী ফসল চাষ করতে কৃষকদের বাধ্য করে। ফলে কৃষকের খাদ্য প্রয়ােজনীয় শস্য উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায়।


[2] খাদ্য সংকট: কৃষক তার জমিতে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল উৎপাদনে বাধ্য হলে কৃষক পরিবারগুলি খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়। খাদ্যের অভাবে কৃষকের গৃহে হা-অন্ন রব ওঠে। দেশের বহু স্থানে শীঘ্রই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়।


[3] উচ্ছেদ ও নির্যাতন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে ব্রিটিশ সরকার অর্থনৈতিক দুর্দশার অবসান ঘটাতে যেসব উপায় বের করেছিল, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। দেশে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার কৃষকের কর মকুব না করে বরং করের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি কর আদায় করতে কৃষকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভূস্বামীরা বিভিন্ন অজুহাতে জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করে নিজেদের আয় বাড়ানাের চেষ্টা শুরু করে। কর বৃদ্ধির ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা সীমাহীন দুর্দশার শিকার হয়।


১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে। এই সময় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের পরিচয় দাও।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করাে। এ প্রসঙ্গে ব্যাবিংটন স্মিথ কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।