প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে। এই সময় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের পরিচয় দাও।

ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের বৈশিষ্ট্য

বিংশ শতকের প্রথম থেকে ইংরেজ শিল্পপতিদের সঙ্গে ভারতীয় শিল্পপতিরাও সমানতালে শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগ করতে থাকেন।


[1] শিল্পপতি ও শ্রমিকশ্রেণির উদ্ভব: ভারতের শিল্পের বিকাশে এই সময় যথেষ্ট সংখ্যক ভারতীয় শিল্পপতি ও মালিকশ্রেণি যুক্ত হয়। ফলে ভারতীয় সমাজে শিল্পপতিশ্রেণির উদ্ভব ঘটে। পাশাপাশি তাদের শিল্পকারখানায় কাজ করে গড়ে ওঠে শ্রমিকশ্রেণি।


[2] প্রযুক্তি শিক্ষার অভাব: বিংশ শতকের শুরুতে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীরা শিল্পস্থাপন শুরু করলেও ভারতীয়দের মধ্যে শিল্প-প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব ছিল। ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে এবিষয়ে শিক্ষার প্রসারে সরকার বিশেষ চেষ্টা করেননি।


[3] ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অনগ্রসরতা: ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান-বিষয়ক জ্ঞানের অভাবে ভারতীয় মালিকানায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের অগ্রগতি যথেষ্ট ব্যাহত হয়। এজন্য তারা রেল ইঞ্জিন, মােটরগাড়ি, জাহাজ, এরােপ্লেন প্রভৃতি শিল্পের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি।


[4] পশ্চিম ভারত-কেন্দ্রিকতা: শিল্পক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে বােম্বাই এর পারসি, গুজরাটি, মাড়ােয়ারি প্রভৃতি বণিকরা যে সাহস দেখাতে পেরেছিল তা পূর্ব ভারতের ধনী পুঁজিপতিরা দেখাতে পারেনি। ফলে পশ্চিম ভারতে শিল্পের অধিক প্রসার ঘটলেও পূর্ব ভারতে তা ঘটেনি। ফলে বােম্বাই-সহ পশ্চিম ভারতে দেশীয় শিল্পের অধিক প্রসার ঘটে।


[5] বস্ত্রশিল্পের প্রাধান্য: ভারতীয় শিল্পপতিরা যেসব শিল্পে প্রচুর মূলধন বিনিয়ােগ করে তার মধ্যে প্রধান ছিল বস্ত্রশিল্প। মূলত পশ্চিম ভারতে এই শিল্পের প্রসার ঘটে।


[6] পূর্ব ভারতে কম বিনিয়ােগ: ভারতীয় পুঁজিপতিদের মূলধন পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে কলকাতা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়ােগ হয়। এখানকার পুঁজিপতিরা জমিতে অর্থ বিনিয়ােগকেই নিরাপদ মনে করে।


বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পোদ্যোগী


[1] পারসি শিল্পোদ্যোগী: পারসি শিল্পপতি জামশেদজি টাটা (১৮৩৯-১৯০৪ খ্রি.) ছিলেন ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য। ভারতীয়দের মধ্যে তিনি লােহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনে সর্বাধিক সাফল্য দেখিয়েছেন।


[2] গুজরাটি শিল্পোদ্যোগী: গুজরাটি শিল্পপতিরা শিল্পস্থাপনে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন ওয়ালচাঁদ হীরাচাঁদ, পুরুষােত্তম দাস ঠাকুরদাস, আম্বালাল সারাভাই প্রমুখ। ওয়ালচাঁদ হীরাচাদ খনি, বীমা, সিমেন্ট, মােটরগাড়ি নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগ করেন।


[3] মাড়ােয়ারি শিল্পোদ্যোগী: ভারতে শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা মাড়ােয়ারি শিল্পপতিদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন স্বরূপচাঁদ হুকুম চাঁদ, বিড়লা, ডালমিয়া, সিংহানিয়া প্রমুখ। মাড়ােয়ারি শিল্পপতিদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য হুকুমচাদ আফিম ও খাদ্যশস্যের ব্যাবসায় যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি হুগলি নদীর তীরে একটি পাটকল স্থাপন করেন।


[4] বাঙালি শিল্পোদ্যোগী: বাঙালি শিল্পপতিদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ছিলেন স্যার ব্রজেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুর। ব্রজেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় লৌহ ইস্পাত শিল্পে মূলধন বিনিয়ােগ করেন।


[5] দেশীয় রাজ্যের শিল্পোদ্যোগ: ব্রিটিশ-ভারতের বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যও শিল্পস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেয় মহীশূর, বরােদা, কোচিন প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য। মহীশূরের দেওয়ান বিশিষ্ট ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার উদ্যোগে মহীশূরে শিল্পের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ভদ্রাবতী লৌহ ও ইস্পাত কারখানার প্রতিষ্ঠা তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি।


[6] ইংরেজদের সহযােগী ভারতীয় শিল্পোদ্যোগী: বিংশ শতকে ইংরেজ শিল্পপতিদের সহযােগী হিসেবে কয়েকজন ভারতীয় শিল্পপতি এদেশে শিল্পের প্রসারে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। শ ওয়ালেস কোম্পানির সহযােগী তারাচাদ ঘনশ্যাম দাস, ব্যালি ব্রাদার্সের সহযােগী গােয়েঙ্কা, গ্রাহাম ব্রাদার্সের সহযােগী ঝুনঝুনওয়ালা, অ্যান্ড্রু ইউলসের সহযােগী ভাটিয়া প্রমুখ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।


ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ডালহৌসির স্বত্ববিলােপ নীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতে শিল্পের অগ্রগতির কারণ কী ছিল? এই সময় শিল্পের বিকাশে সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছিল?


১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলােচনা করাে।