প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে গুজরাটের কৃষকদের দুরবস্থার পরিচয় দাও। এই সময় সেখানকার কৃষকদের ওপর করের বােঝা বৃদ্ধি প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও তার পরিণতি উল্লেখ করাে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গুজরাটের কৃষকদের দুরবস্থা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ও তারপর ভারতে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় তা গুজরাটের কৃষকদের দুর্দশা যথেষ্ট বাড়িয়ে দেয়। তাদের দুরবস্থার বিভিন্ন দিক আলােচিত হলㅡ


[1] মূল্যবৃদ্ধি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে গুজরাটে কৃষি ও শিল্পোৎপাদন খুবই ব্যাহত হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য যথেষ্ট বেড়ে যায়। বস্ত্র, চিনি, লবণ, কেরােসিন প্রভৃতির মূল্য সর্বাধিক বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দামও যথেষ্ট বাড়ে। ফলে সেখানকার কৃষকদের সমস্যা খুবই তীব্রতর হয়।


[2] খাদ্য সংকট: গুজরাটের বারংবার শস্যহানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারি প্রভৃতির ফলে কৃষকরা সীমাহীন দুরবস্থার শিকার হয়। এখানকার কৃষিপ্রধান খেদা জেলায় অনাবৃষ্টি ও খরায় মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেখানে কৃষকদের ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের পক্ষে সরকারের রাজস্ব পরিশােধ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। নানা সংকটের সম্মুখীন হয়ে সরকারের কাছে তারা রাজস্ব হ্রাসের ব্যর্থ আবেদন জানায়।


[3] দুর্ভিক্ষ ও মহামারি: খেদায় বারংবার শস্যহানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারি প্রভৃতির ফলে এখানকার কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে গুজরাটের খেড়া বা খেদা জেলায় অনাবৃষ্টি ও খরায় মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার গরিব কৃষকদের পক্ষে সরকারের রাজস্ব পরিশােধ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। নানা সংকটের সম্মুখীন হয়ে সরকারের কাছে তারা রাজস্ব হ্রাসের ব্যর্থ আবেদন জানায়।


[4] কৃষকদের বিপর্যয়: গুজরাটের কৃষকরা যখন দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক সংকটে দারুণভাবে বিপর্যস্ত, তখন ১৯১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকার কৃষকদের ওপর করের বােঝা আরও বৃদ্ধি করে। ফলে পতিদার ও কুনবি সম্প্রদায়ের কৃষক-সহ দরিদ্র মানুষ অন্তহীন দুর্দশার শিকার হয়। সরকারের অনুগত ভূস্বামীরা সেই বিপুল পরিমাণ কর আদায় করতে গিয়ে কৃষকদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। কর প্রদানে ব্যর্থ চাষীদের জমি থেকে উৎখাত করা হতে থাকে। এর ফলে সেখানকার কৃষকদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।


কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গুজরাটের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি শােষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।


[1] আন্দোলনের সূচনা: কৃষকদের দুর্দিনে তাদের ওপর করের বােঝা বৃদ্ধি করলে এবং কর আদায়ের জন্য তাদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে দরিদ্র কৃষকরা প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে। মহিলা পাণ্ডা ও অন্যান্য কয়েকজন স্থানীয় নেতা কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করেন। আন্দোলন শীঘ্রই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।


[2] গান্ধিজির ভূমিকা: কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি গুজরাটের কৃষকদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে আন্দোলনে যথেষ্ট গতি আসে। গান্ধিজি খেদার ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে (২২ মার্চ) সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। গান্ধিজির প্রভাবে খেদায় কৃষকরা দলে দলে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে শামিল হয়। স্থানীয় যুবক সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তােলেন।


[3] খাজনা প্রদান বন্ধ: গান্ধিজি ও তার অনুগামী সত্যাগ্রহীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে সরকারকে খাজনা দিতে নিষেধ করেন। তাঁর আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গুজরাটের বহু এলাকায় সামর্থ্যহীন দরিদ্র কৃষকরা সরকারকে খাজনা দিতে অস্বীকার করে।


[4] দমননীতি: কৃষকদের আন্দোলন প্রতিরােধ করতে সরকার তীব্র দমননীতির আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালানাে হয়। এর ফলে দরিদ্র কৃষকরা ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। কৃষকদের ব্যাপক আন্দোলনের পর শেষপর্যন্ত গান্ধিজি কৃষকদের পক্ষ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলােচনা করেন। আলােচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, যাদের খাজনা দেওয়ার সামর্থ্য আছে তারা সরকারকে খাজনা দেবে। যাদের সামর্থ্য নেই, সরকার তাদের খাজনা মকুব করবে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে। এই সময় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের পরিচয় দাও।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করাে। এ প্রসঙ্গে ব্যাবিংটন স্মিথ কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।


ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী প্রভাব পড়েছিল? যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ভারতের কৃষকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?