রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ফলাফলগুলি উল্লেখ করাে।

রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য

রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় রায়তকে জমিতে স্থায়ী অধিকার না দিয়ে তাকে ৩০/৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি শর্তে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হত। এই ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল一


[1] মধ্যস্বত্বভােগীর অনুপস্থিতি: রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরকার ও কৃষকের মাঝখানে কোনাে জমিদার বা মধ্যস্বত্বভােগী শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল না।


[2] জমির শ্রেণিবিভাগ: রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় জমি জরিপ করে কৃষকদের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় এবং উৎপাদনের ভিত্তিতে জমিকে ৯টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।


[3] জমির মালিকানা: এই ব্যবস্থায় কৃষকের হাতে জমির মালিকানার অধিকার দেওয়া হয়নি। জমির সম্পূর্ণ মালিকানা ছিল সরকারের হাতে। কৃষক শুধু জমি ভাগ করতে পারত।


[4] রাজস্বের হার: রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় রাজস্বের হার খুব বেশি ছিল এবং সাধারণত ৩০ বছর পরপর এই হারের পরিবর্তন করা হত।


রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফল


রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফল সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। এই ব্যবস্থায় সুফল ও কুফল উভয়ই লক্ষ করা যায়।


রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের সুফল:


  • জটিলতা হ্রাস: রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরকার ও কৃষকদের মধ্যে সরাসরি যােগাযােগ গড়ে ওঠায় প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পায় এবং জমি-সংক্রান্ত ভুল বােঝাবুঝির অবসান ঘটে।


  • শােষণ হ্রাস: মধ্যস্বত্বভােগীর অস্তিত্ব না থাকায় এই ব্যবস্থায় কৃষকরা শােষণ ও অত্যাচারের হাত থেকে যথেষ্ট মুক্তি পায়।


  • উচ্ছেদের আশঙ্কা হ্রাস: এই ব্যবস্থায় জমিদার জমি থেকে ইচ্ছামতাে কৃষকদের উচ্ছেদ করতে পারত না। ফলে কৃষকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।


  • ভূমিদাসপ্রথার অবসান: এই ব্যবস্থায় অধিকাংশ কৃষকের ভূমিদাস রাখার ক্ষমতা ছিল না। ফলে ভূমিদাসপ্রথার অবসান ঘটে।


রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের কুফল:


  • সরকারি অত্যাচার: রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকরা কালক্রমে রাষ্ট্র তথা সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারের শিকার হয়। তারা রায়তের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত।


  • ভাড়াটে প্রজা: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতাে স্থায়ী রাজস্বের হার রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় ধার্য করা হয়নি। কৃষক বাড়তি রাজস্ব না দিলে তাকে জমি থেকে উৎখাত করা হত। ড. বিপানচন্দ্রের মতে, জমিতে কৃষকের মালিকানা কার্যকর হয়নি। এই ব্যবস্থায় জমিতে কৃষকের মালিকানা না থাকায় কৃষক কোম্পানির ভাড়াটে প্রজায় পরিণত হয়।


  • রাজস্বের বােঝা: রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় রাজস্বের হার খুব বেশি ছিল যা পরিশােধের সামর্থ্য প্রজাদের ছিল না। উৎপন্ন ফসলের শতকরা ৪৫ থেকে ৫৫ ভাগ রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত। তা ছাড়া সরকার ইচ্ছা করলে কুড়ি বা ত্রিশ বছর পরপর রাজস্বের হার বৃদ্ধি করতে পারত।


  • প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্দশা: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলহানি ঘটলেও রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকরা রাজস্ব প্রদানে বাধ্য ছিল। এজন্য কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হত।


রমেশচন্দ্র দত্ত বলেছেন যে, "এই ব্যবস্থায় শােষণের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের চেয়ে তা অধিকতর ক্ষতিকর ছিল।" সরকারি আমলারা এই ব্যবস্থায় কৃষকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করতে পারত। জমির অস্থায়ী বন্দোবস্তই ছিল জনসাধারণের দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ।


ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে ভারতে ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট, শর্তাবলি ও প্রভাব আলােচনা করাে।


লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল আলােচনা করাে।