ভারত ও চিনের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আধিপত্যের তুলনামূলক আলোচনা

ভারত ও চিনের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আধিপত্যের তুলনা


ভারত

  • ইউরােপের শিল্পজাত পণ্যসামগ্রীতে ভারতের বাজার ছেয়ে গেলে ভারতের শিল্প ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।


  • বিদেশি শক্তিগুলি, বিশেষ করে ব্রিটেন ভারতবর্ষকে একটি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করে।


  • ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের উপর চাপানাে কয়েকটিঅসম চুক্তি হল আলিনগরের সন্ধি, এলাহাবাদের প্রথম ও দ্বিতীয় সন্ধি, ম্যাঙ্গালােরের সন্ধি, সলবাইয়ের সন্ধি, বেসিনের সন্ধি প্রভৃতি।


  • ইংরেজ কোম্পানি ভারতের বৃহদংশে তীব্র শোষণমূলক ভূমিব্যবস্থা চালু করে।


  • ভারতের বাণিজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের দখল চলে যায়। ফলে ভারতের দেশীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


  • ভারতের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, কাঁচামাল এবং বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত অর্থসম্পদ দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে বিলাতে চলে যেতে থাকে।


  • প্রথমদিকে পাের্তুগাল, ব্রিটেন, ফ্রান্স হল্যান্ড, ডেনমার্ক প্রভৃতি ইউরােপীয় রাষ্ট্র ভারতে বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠা করে। শেষ পর্যন্ত অন্যান্য শক্তিগুলিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হারিয়ে ইংরেজরা এদেশে নিজেদের চূড়ান্ত রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে


  • ব্রিটিশ কোম্পানি ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মােগল বাদশাহ ফারুখশিয়ারের কাছ থেকে 'দস্তক' বা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে।


  • ব্রিটিশ কোম্পানি মােগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে 'দেওয়ানি' অর্থাৎ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে।


  • ভারত ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রিটিশ উপনিবেশ।


চিন

  • ইউরােপের শিল্পজাত পণ্যসামগ্রীতে চিনের বাজার ছেয়ে গেলে চিনের শিল্প ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।


  • বিদেশি শক্তিগুলি চিনকেও একটি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করে।


  • ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক চিনের উপর চাপানাে কয়েকটি অসম চুক্তি হলনানকিং-এর সন্ধি, বগ-এর সন্ধি, টিয়েনসিনের সন্ধি, পিকিং-এর সন্ধি, শিমােনােসেকির সন্ধি প্রভৃতি।


  • চিনের বিভিন্ন বন্দর বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়লে সমগ্র চিন বিদেশি পণ্যে ছেয়ে যায়।


  • বৈদেশিক শােষণে চিনের বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ, আমেরিকা ও অন্যান্য বিদেশি বণিকদের দখলে চলে যায়। ফলে চিনের দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংস হয়।


  • বিদেশি বণিকরা চিনের বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, অর্থ, খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ অবিরাম নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।


  • চিনে বিভিন্ন ইউরােপীয় শক্তির মধ্যে ইংরেজরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ঠিকই তবে অন্যান্য শক্তিগুলির আধিপত্য সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়নি। ব্রিটেন ছাড়া আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, ওলন্দাজ প্রভৃতি শক্তিগুলিও চিনে কিছু না কিছু আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।


  • ইংরেজরা ভারতের মতাে চিনে 'দস্তক' বা বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার পায়নি।


  • ইংরেজ বা অন্যান্য ইউরােপীয় বণিক জাতিগুলি চিনে দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করতে পারেনি।


  • চিনকে বিদেশি শক্তিগুলির পূর্ণাঙ্গ উপনিবেশ না বলে বড়জোর আধা-উপনিবেশ বলা যায়।



ইউরােপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক ভারত ও চিনে ঔপনিবেশিক শােষণের অভিজ্ঞতার মধ্যে সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


ইউরােপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক ভারত ও চিনে ঔপনিবেশিক শােষণের আধিপত্যের বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


নানকিং-এর সন্ধি ও তিয়েনসিনের সন্ধির মূল শর্তগুলি আলােচনা করাে।