ব্যক্তিগত বিকাশের উপযােগিতা বা গুরুত্ব আলােচনা করাে।

ব্যক্তিগত বিকাশের উপযােগিতা

শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির বিকাশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিকাশের উপযােগিতা নীচে আলােচনা করা হল।


[1] দৈহিক বিকাশ : শিক্ষা শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যার্জনেই সীমাবদ্ধ নয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, ইন্দ্রিয় এবং পেশিসমূহের সঠিক সঞ্চালনও শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর ফলেই ব্যক্তি বিভিন্ন কাজে দক্ষ হতে পারে। এর জন্য প্রয়ােজন ব্যক্তির দৈহিক বিকাশ।


[2] মানসিক বিকাশ : ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়াগুলি যেমন স্মৃতি, কল্পনা, চিন্তন, যুক্তি নির্ণয়, প্রবণতা, মনােযােগ, আগ্রহ প্রভৃতি সমস্ত বৈশিষ্ট্য পুথিগত বা কর্মমূলক সমস্ত ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রয়ােজন৷ এই বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশ শিক্ষাকে সফল করে তুলতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।


[3] বৌদ্ধিক বিকাশ : ব্যক্তির জ্ঞান ও বৌদ্ধিক বিকাশ শিক্ষার লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করে। জ্ঞান ও বৌদ্ধিক বিকাশের ফলে শিক্ষার্থী পরিবেশকে আরও ভালাে করে বুঝতে পারে, জীবনের সমস্যার দিক বিশ্লেষণ করে তার সমাধানের পথ খুঁজে নিতে পারে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করা এবং সেইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়।


[4] প্রাক্ষোভিক বিকাশ : শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক মনােভাব, শিখনের প্রতি ভালােবাসা, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা, ধৈর্য, জ্ঞানের প্রতি নিষ্ঠা সবই প্রাক্ষোভিক বিকাশের পরিচয় যা শিক্ষার ফলেই ঘটে। এইভাবে ব্যক্তির প্রাক্ষোভিক বিকাশ শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।


[5] নৈতিক বিকাশ : ভালােমন্দ বিচার করার ক্ষমতা, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা, জীবনসংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার সাহস প্রভৃতি শিক্ষার বিশেষ লক্ষ্য।


[6] সামাজিক বিকাশ : সমাজে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা, সমাজের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলা ইত্যাদি ব্যক্তির সামাজিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার লক্ষ্যপূরণে ব্যক্তির মধ্যে এই বিকাশ বিশেষভাবে প্রয়ােজন।


[7] কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ : দেশ ও জাতির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, সঞ্চালন ও উন্নয়নে সার্থকভাবে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়েই শিক্ষার কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্য অর্জিত হয়।


[8] কর্মদক্ষতার বিকাশ : ব্যক্তিকে কর্মদক্ষ করে তুলে জাতীয় উৎপাদনে তাকে শামিল করা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়েই ব্যক্তি তথা জাতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।


[9] সূনাগরিকতার বিকাশ : সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যপালন, নাগরিক জীবনে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ, নাগরিক জীবনের সমস্যার প্রতি সচেতনতা, অন্ধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন সবই হল সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলি গড়ে তােলার মধ্য দিয়েই শিক্ষার লক্ষ্য অর্জিত হয়।


[10] গণতান্ত্রিক বিকাশ : ব্যক্তির মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। তাই শিক্ষার লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতে ব্যক্তির মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করতে হবে।


ওপরের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির যথাযথ বিকাশ ঘটলে ব্যক্তি পূর্ণতা লাভ করে এবং প্রকৃত মানুষে পরিবর্তিত হয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।


জীবনব্যাপী শিক্ষার ধারণা, বৈশিষ্ট্যাবলি এবং প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


জাতীয় বিকাশের জন্য শিক্ষার পুনর্গঠন বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করাে।

অথবা, জাতীয় বিকাশের জন্য শিক্ষাকে কীভাবে কাজে লাগানাে হবে তা আলােচনা করাে।


ভারতের জাতীয় বিকাশের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ আলােচনা করাে।


'শিক্ষার লক্ষ্য জাতীয় উন্নয়ন'—এ বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করাে।

অথবা, জাতীয় উন্নয়ন বলতে কী বােঝায়? শিক্ষা কীভাবে জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য করে?


সামাজিক বিকাশের উপযােগিতা বা গুরুত্ব আলােচনা করাে।


সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা আলােচনা করাে।


শিক্ষার লক্ষ্য সামাজিক বিকাশ– এ বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করো।

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যটি ব্যাখ্যা করাে।