জীবনব্যাপী শিক্ষার ধারণা, বৈশিষ্ট্যাবলি এবং প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

1972 সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আয়ােজিত প্রথম আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশনের বিবরণীতে (Learning to be : The world of Education today and tomorrow) জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেছে। শিক্ষা পুনর্গঠনে যে সাতটি মূল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল জীবনরূপী শিক্ষা জীবনব্যাপী শিক্ষার ধারণাকে আরও স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করতে গেলে এর বৈশিষ্ট্যাবলি উল্লেখ করা প্রয়ােজন।


জীবনব্যাপী শিক্ষার বৈশিষ্ট্যাবলি

[1] ব্যক্তির ইচ্ছাধীন : এই শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কোনাে বাধ্যবাধকতা নেই। এই শিক্ষা স্ব-নিয়ন্ত্রিত এবং ব্যক্তির প্রেষণার ওপর নির্ভরশীল।


[2] লক্ষ্যভিত্তিক : নির্দিষ্ট কোনাে লক্ষ্য অর্জন—যেমন কোনাে বিষয়ে জ্ঞানার্জন, পেশাগত দক্ষতা অর্জন, উচ্চতর শিক্ষার্জন ইত্যাদি এই শিক্ষায় প্রেষণা সঞ্চার করে।


[3] শিক্ষার সময়কাল নির্দিষ্ট নয় : যে সময় থেকে ব্যক্তি শিক্ষা গ্রহণে সমর্থ, সেই সময় থেকে আমৃত্যু তিনি শিক্ষা অর্জন করতে পারেন।


[4] নির্দিষ্ট কোনাে পাঠক্রম নেই : নির্দিষ্ট এবং বাঁধাধরা কোনাে পাঠক্রম নেই। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে পাঠক্রম থাকলেও তা নমনীয়।


[5] শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা : এখানে ব্যক্তি অর্থাৎ শিক্ষার্থী যথেষ্ট স্বাধীন। তার ইচ্ছা, সামর্থ্য এবং প্রয়ােজন অনুযায়ী শেখার স্বাধীনতা পায়।


[6] নমনীয় মূল্যায়ন : কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নমনীয়।


[7] জীবনব্যাপী শিক্ষার কোর্স : প্রথাগত শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সের বিষয়বস্তুকে জীবনব্যাপী শিক্ষার উপযােগী করে এই শিক্ষার কোর্স রচিত হয়। এ ছাড়া বৃত্তি শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সও অন্তর্ভুক্ত হয়।


[8] ব্যাবহারিক মূল্য : জীবনব্যাপী শিক্ষা কেবলমাত্র জ্ঞানার্জনের শিক্ষা নয়| ব্যক্তির ব্যাবহারিক জীবনেও এর বিশেষ প্রয়ােজনীয়তা দেখা যায়।


[9] শিক্ষার বিভিন্ন সংস্থার সংযোগসাধন : প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দূরশিক্ষা ও মুক্তশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জীবনব্যাপী শিক্ষা নেটওয়ার্কের দ্বারা সংযুক্ত থাকে।


জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা


জ্যাক ডেলরসের নেতৃত্বে ইউনেস্কো কমিশনের প্রতিবেদনে (Learning throughout life: Challenges for the twenty-first century 1996) বলা হয়েছে, একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা হল জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিক্ষার ব্যাপ্তি সমগ্র জীবনব্যাপী হওয়ার পিছনে পাঁচটি প্রয়ােজনের উল্লেখ করা যায়।


[1] পরিবর্তনশীল জীবন : আধুনিক জীবন পরিবর্তনশীল। বর্তমানে প্রযুক্তির এবং তথ্য পরিবর্তনের যুগের সঙ্গে সার্থক অভিযােজনের জন্য প্রয়ােজন হল নিরবচ্ছিন্ন বা প্রবহমান শিক্ষা, যা জীবনব্যাপী শিক্ষার পক্ষেই সম্ভব।


[2] বৃত্তি জগতের পরিবর্তন : প্রযুক্তির উন্নতি, নতুন দ্রব্যের উৎপাদন, উৎপাদনের নতুন কৌশল এবং নতুন জ্ঞান বৃত্তি জগতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বর্তমান বৃত্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষার প্রয়ােজন যা জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার সাহায্যে অর্জন করা সম্ভব।


[3] সামাজিক পরিবর্তন : দ্রুত সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার বিশেষ প্রয়ােজন।


[4] সমাজের দুর্বল অংশ : সমাজের দুর্বল অংশের শিক্ষার চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা সাহায্য করে।


[5] জনসংখ্যার চরিত্রের পরিবর্তন : আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের বয়স ষাট বছর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে অনেকেই কর্মক্ষম। এদের কর্মক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়। তবে এর জন্য প্রয়ােজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। জীবনব্যাপী শিক্ষা এ ব্যাপারে সহযােগিতার হাত প্রসারিত করে।


উপরােক্ত আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আধুনিক বিশ্বে জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়ােজন যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে শুধু তাই নয়, অপরিহার্যও হয়ে উঠছে।


জীবনব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য কী? এর ভিত্তি এবং সাংগঠনিক দিকের ওপর আলােচনা করাে।


শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্য এবং কৃষ্টিমূলক লক্ষ্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।


শিক্ষার লক্ষ্য থাকা প্রয়ােজন কেন? শিক্ষার লক্ষ্য কেন পরিবর্তনশীল?


শিক্ষার লক্ষ্যসমূহের প্রয়োজনীয়তা কী? কীভাবে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়?


শিক্ষা হল একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া—উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে। শিক্ষাকে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া বলা কতখানি যুক্তিযুক্ত তা লেখাে।


নীচের উক্তিগুলি ব্যাখ্যা করাে- (a) শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। (b) শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। (c) শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া।


শিক্ষাকে একটি প্রক্রিয়া বলার কারণ কী? বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাবিদরা শিক্ষাকে যেসব প্রক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা করেছেন, সেগুলি উল্লেখ করে। এদের মধ্যে যে-কোনাে দুটি ব্যাখ্যা করাে।