জীবনব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য কী? এর ভিত্তি এবং সাংগঠনিক দিকের ওপর আলােচনা করাে।

জীবনব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য

জীবনব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য হল ধারাবাহিকভাবে জ্ঞানার্জন, জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পুনর্নবীকরণ এবং সাম্প্রতিকতমকরণ। এ ছাড়া যারা কোনাে কারণে প্রথাগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বা অল্প বয়সে পাঠত্যাগ করেছে তাদের আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার সুযােগ তৈরি করা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছে যেমন বৃত্তিকালীন শিক্ষা এবং অবসরকালীন জীবনকে গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা।


জীবনব্যাপী শিক্ষার ভিত্তি


জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রধান ভিত্তি হল দুটি। প্রথমত, শিখন কেবলমাত্র বাল্যকাল বা বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ—এ ধারণা ভ্রান্ত। দ্বিতীয়ত, প্রয়ােজনীয় এবং উদ্দেশ্যমূলক শিখন কেবলমাত্র বিশেষ এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সম্ভব—এ ধারণাও ঠিক নয়। শিখন সর্বদা সর্বক্ষেত্রে এবং সব পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়।


জীবনব্যাপী শিক্ষার সংগঠন


জীবনব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যক্তির সমগ্র জীবনে শিক্ষা-সংক্রান্ত সব সুযােগগুলিকে বিবেচনা করা হয়।

এই শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে [1] শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যাবলি এবং [2] জীবনব্যাপী শিখন সম্পর্কীয় দক্ষতার ওপর। Knapper এবং Corpley (1991)-এর মতে, একজন আদর্শ জীবনব্যাপী শিক্ষার্থীর মধ্যে নিম্নলিখিত ব্যাক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি কাম্য一


[1] ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য


  • শিখন এবং বাস্তব জীবনের মধ্যে সম্পর্ক সম্বন্ধে সচেতনতা।

  • জীবনব্যাপী শিক্ষার চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা।

  • জীবনব্যাপী শিক্ষার নিরবচ্ছিন্নরূপ বজায় রাখার জন্য উচ্চ প্রেষণা।

  • জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় আত্মবিশ্বাস।


[2] জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য দক্ষতা


  • বাস্তবভিত্তিক উদ্দেশ্য নির্দিষ্টকরণের ক্ষমতা।

  • অর্জিত জ্ঞানকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা।

  • নিজেই নিজের শিখনকে য়ন করার ক্ষমতা।

  • তথ্য নির্দিষ্টকরণের দক্ষতা।

  • বিভিন্ন শিখন কৌশলের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশে শিখনের ক্ষমতা।

  • শিক্ষোপকরণ যেমন পাঠাগার, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহারের দক্ষতা|

  • বিভিন্ন বিষয় থেকে তথ্য আহরণ এবং সেগুলি ব্যবহারের ক্ষমতা।


জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দূর ও মুক্তশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেটওয়ার্ক দ্বারা যুক্ত থাকবে। সব রকমের শিক্ষাপ্রযুক্তি যেমন টেলিভিশন, কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সম্প্রচার, ভিডিয়াে টেক্সট এবং টেলিটেক্সট, Cd-Rom, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং টেলিকনফারেন্স এই শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থা ওয়ার্কশপ, বৃত্তিকালীন শিক্ষা, সংক্ষিপ্ত কোর্স এবং বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে আরও জীনবমুখী করে তােলার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়।


ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায় যে, জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রেক্ষিত বৃহৎ। সব ধরনের শিখনকৌশল বিশেষ করে প্রথাগত এবং প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং তার রূপদান ব্যতীত সার্থক জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা সংগঠন করা সম্ভব নয়।


আদিম যুগে শিক্ষা বলতে কী বােঝাত? এই প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় এবং পাশ্চাত্যবাদীদের মতে শিক্ষা কী? আধুনিক ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য চিন্তাবিদদের মতে শিক্ষা কী?


শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ এবং ব্যাপক অর্থ আলােচনা করাে এবং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।


শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বােঝায়? এই দুটির মধ্যে তুমি কীভাবে সমন্বয়সাধন করবে?


শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বােঝ? ওই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখাে।


শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বােঝ? ওই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি আলােচনা করাে।


শিক্ষার বহুবিধ লক্ষ্যগুলি উল্লেখ করাে।


শিক্ষার প্রধান লক্ষ্যগুলি কী কী? এদের মধ্যে তুমি কোন্টিকে গ্রহণযােগ্য বলে মনে করাে এবং কেন?