কৈশােরের চাহিদাগুলি কী? মাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে এই বয়সের ওই চাহিদাগুলি পূরণে সহায়তা করতে পারে?

কৈশােরের চাহিদা

স্ট্যানলি হল, জারশিল্ড, বার্নাড প্রমুখ মনােবিজ্ঞানী কৈশাের কালের ওপর বহু গবেষণা করেছেন গবেষণার সূত্র ধরে তাঁরা এই সময়ের চাহিদার ওপর যে বক্তব্য পেশ করেছেন, সেগুলি হল一


(১) স্বাধীনতার চাহিদা: এ সময়ে কিশােরকিশোরীরা বয়স্কদের ভূমিকা পালন করতে চায়, শৈশবের পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে তারা স্বনির্ভর হতে চায়। তারা মুক্তি চায়, আর চায় স্বাধীনভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে।


(২) আত্মপ্রকাশের চাহিদা: এ বয়সে বিভিন্ন সৃষ্টিমূলক কাজের মধ্য দিয়ে কিশােরকিশােরীরা নিজেদের প্রকাশ করতে চায়।


(৩) দুঃসাহসিকতার চাহিদা: কৈশােরকালে শিশুদের মধ্যে দুঃসাহসিকতার চাহিদা দেখা যায়। অনেক সময় অবশ্য এই দুঃসাহস হঠকারিতায় পরিণত হয়।


(৪) গণতান্ত্রিক চাহিদা: বয়ঃসন্ধিক্ষণের ছেলেমেয়েরা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তাদের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে জানতে চায়। একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে কাজ করে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে চায় তারা।


(৫) আত্মনির্ভরতার চাহিদা: এই বয়সের ছেলেমেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তারা স্বনির্ভর হতে চায়।


(৬) নিরাপত্তার চাহিদা: এই বয়সে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে তাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই বয়স্কদের কাছ থেকে তারা নিরাপত্তা চায়।


(৭) নৈতিক চাহিদা: এই সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালােমন্দের বােধ তীব্র আকার নেয়। তারা চায় সকলেই নৈতিকতা মেনে কাজ করুক। তাই কোথাও নৈতিকতার অভাব দেখলে তারা প্রতিবাদ করে।


(৮) জীবনদর্শনের চাহিদা: মানুষের লক্ষ্য কী, মানুষ কোন্ পথে চলবে, প্রতিকূলতাকে কী উপায়ে অতিক্রম করবেএইসব প্রশ্ন কিশােরকিশােরীদের মধ্যে দেখা দেয়। যে পথে চললে সমাজ এবং দেশের কল্যাণ হয় তারা সেই সঠিক দিশা খুঁজতে থাকে।


(৯) যৌন চাহিদা: এই বয়সের ছেলেমেয়েদের যৌন অঙ্গ পূর্ণতা পায় এবং যৌন গ্রন্থিগুলি। সক্রিয় হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তারা আকর্ষণ বােধ করে। এই পর্যায়ে যৌন বিষয় সম্পর্কে তাদের কৌতুহল বৃদ্ধি পায়।


উপরিউক্ত চাহিদাগুলির কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কর্মসূচি নির্দিষ্ট করা প্রয়ােজন।


মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে কৈশােরের চাহিদাপূরণ


মাধ্যমিক শিক্ষা হল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষান্তর। কৈশােরে বা বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের দেহে, মনে, সামাজিক এবং প্রাক্ষোভিক জগতে পরিবর্তনের দরুন যে সকল চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলি পরিপূরণে এই শিক্ষা স্তরটি সহায়তা করে।


(১) স্বাধীনতার চাহিদাপূরণে সহায়তা: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযােগ করে দেয়। ফলে এই শিক্ষা ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতার চাহিদাপূরণের পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাসও গড়ে তুলতে সাহায্য করে।


(২) গণতান্ত্রিক নাগরিকতার বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সু-অভ্যাস, সুমনােভাব গড়ে তােলে। এ ছাড়া তাদের চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশেও মাধ্যমিক শিক্ষা সহায়তা করে। ফলে তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।


(৩) জ্ঞান আহরণের চাহিদাপূরণে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের নানান বিষয়ে জ্ঞান আহরণের সুযােগ ঘটে। ফলে তাদের কৌতূহল ও অতিরিক্ত জ্ঞান আহরণের চাহিদা পূরণ হয়।


(৪) জীবনাদর্শের চাহিদাপূরণে সহায়তা: মাধ্যমিক পাঠক্রমে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে মনীষীদের জীবনীপাঠের ব্যবস্থা থাকে। মহাপুরুষদের জীবনীপাঠের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জীবনাদর্শ গঠনের চাহিদাপূরণের চেষ্টা করা হয়।


(৫) যৌনজীবন সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা: মাধ্যমিক পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি মানুষের যৌনজীবন সম্বন্ধীয় সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই শিক্ষার পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত জীবনবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে এবং জীবনশৈলীর পাঠ নিতে গিয়ে মানুষের যৌনজীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়।


শিক্ষামনােবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও লক্ষ্য আলােচনা করাে।


শিক্ষামনােবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলােচনা করাে।


শিক্ষামনােবিজ্ঞান কী ধরনের বিজ্ঞান? শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলােচনা করাে।


শিক্ষামনােবিজ্ঞানের কয়েকটি সংজ্ঞা লেখাে মনােবিজ্ঞান ও শিক্ষামনােবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য কী? একজন শিক্ষক মনোবিদ্যার সাহায্য নেবেন কেন?


মানবজীবন বিকাশের প্রক্রিয়া বলতে কী বােঝ? এই প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি বিস্তারিতভাবে আলােচনা করাে।


বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ ও সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করাে। এই প্রসঙ্গে বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।


বিকাশের বৈশিষ্ট্য ও নীতি উল্লেখ করাে। বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্যগুলি কী?