1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের বিষয়বস্তু আলােচনায় প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত লেখাে। ওই চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখাে।

চার্টার অ্যাক্ট (1813) সম্পর্কে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের তথা সনদ আইনের বিষয়বস্তু আলােচনা করার সময় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত গ্রহণ করা হয়। প্রাচ্যবাদীরা অর্থাৎ হেস্টিংস প্রমুখ ভারতীয় প্রশাসক ভারতে পাশ্চাত্য সভ্যতা তথা খ্রিস্টান চিন্তাধারা বিস্তারের পক্ষপাতী ছিলেন না। লর্ড মিন্টোর প্রস্তাব ছিল ভারতের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা। তিনি বলেছিলেন যে, ভারতের ধর্ম, নৈতিকতা, শিক্ষার মান এবং শিক্ষিতের সংখ্যা ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের দিকে এগােচ্ছে। এর পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ এবং অর্থব্যয় বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। কিন্তু এই সঙ্গে তিনি খ্রিস্টান মিশনারিদের নিরুৎসাহিত করার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ মিশনারিদের উৎসাহিত করলে, শিক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বজায় থাকবে না।


অন্যদিকে, পাশ্চাত্যবাদী গােষ্ঠী গ্রান্ট উইলবার ফোর্স এবং খ্রিস্টান মিশনারিরা বিশ্বাস করতেন যে, ইংরেজি ভাষা এবং খ্রিস্টান ধর্মের নীতি অনুযায়ীই শিক্ষাদান হবে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা এবং এই শিক্ষা বিস্তারের দায়িত্ব খ্রিস্টান মিশনারিদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। তবে এর জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ কোম্পানি-সরকারকেই ব্যয় করতে হবে। লর্ড ওয়েলেসলি পাশ্চাত্যবাদীদের মতকেই সমর্থন জানালেন| প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সমর্থনকারীদের এইরকম মতবিরোধের মধ্যেই মিন্টোর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে 1813 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মিশনারি এবং শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। তারই ফলশ্রুতি হল 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট।


চার্টার অ্যাক্টে (1813)-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য


1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট (সনদ আইন) ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে এক নবযুগের সচনা করে। এরই প্রভাবে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একটি সুনির্দিষ্ট রূপ পেতে শুরু করে। যেসব কারণে এই অ্যাক্টটি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব লাভ করে, সেগুলি হল—


(1) সরকারি অর্থ মঞ্জুরের ব্যবস্থা: এই অ্যাক্টের 43 নং ধারায় ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য, এর আগে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালিত সরকার কোনাে অর্থ মঞ্জুর করেনি। সুতরাং এই অ্যাক্টকে সরকারিভাবে শিক্ষা বিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


(2) ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে মিশনারিদের স্বাধীনতা দান: এই অ্যাক্টের 13 নং ধারায় পরোক্ষভাবে মিশনারিদের জয় ঘােষিত হয়। তারা বিনা বাধায় ভারতে প্রবেশের এবং বসবাসের অধিকার লাভ করে। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের বিষয়েও তারা অনেকটা স্বাধীনতা লাভ করে।


(3) ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার বীজবপন: মিশনারিদের দাবি অনুযায়ী খ্রিস্টান ধর্মের ভিত্তিতে শিক্ষাদানের বিষয়টি এই চার্টার অ্যাক্টে স্বীকৃত হয়নি। ফলে শিক্ষাকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। আজও ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।


(4) ভারতবাসীর শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা: আংশিকভাবে‌হলেও এই চার্টার অ্যাক্টে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, ভারতবাসীর শিক্ষার দায়িত্ব তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালিত সরকারের তথা রাষ্ট্রের।


(5) পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ব্যবস্থা: এই চার্টার অ্যাক্টের 43নং ধারায় ভারতবাসীর শিক্ষার জন্য যে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়, তা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পাশ্চাত্যবাদীরা যুক্তি ও তর্কের মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের পথকে অনেকখানি সুগম করতে পারে। এর ফলে ইংরেজি ভাষা‌ সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে।


(6) শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগের স্বীকৃতি: 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরােক্ষভাবে বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগই প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে এই দুই উদ্যোগই বর্তমান।


মুসলিম যুগে শিক্ষার সুবিধাগুলি কী কী ছিল?


মুসলিম যুগে শিক্ষার অসুবিধাগুলি কী কী ছিল?


মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা কেমন ছিল—সে সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে।


মধ্যযুগে হিন্দুশিক্ষা কেমন ছিল-সে সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে।


ইসলামিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মক্তবের ভূমিকা আলোচনা করাে।


ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় মাদ্রাসার ভূমিকা লেখাে।


1813 খ্রিস্টাব্দের চাটার অ্যাক্টের পটভূমি লেখাে। ওই অ্যাক্টের শিক্ষা বিষয়ক এবং মিশনারি- সংক্রান্ত ধারা দুটি লেখাে। ওই ধারা দুটি কতটা কার্যকরী হয়েছিল?