আখের ব্যবহার লেখাে | আখ চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি বর্ণনা করাে।

আখের ব্যবহার

আখ একটি শর্করা জাতীয় অর্থকরী ফসল। আখের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি হল─


  • পৃথিবীর মােট চিনি উৎপাদনের ২/৩ ভাগই আখ থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। আখ থেকে রস বের করে তা থেকে প্রধানত চিনি ও গুড় প্রস্তুত করা হয়।

  • গুড় প্রস্তুত করার সময় আখের রস থেকে সুরাসার, মােম, কৃষিকাজের উপযােগী সার ইত্যাদি পাওয়া যায়।

  • এ ছাড়া প্লাস্টিক শিল্পের প্রয়ােজনীয় অ্যাকোনাইটিক অ্যাসিড আখ থেকেই পাওয়া যায়।

  • আখের অগ্রভাগ পশুখাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়।

  • আখ থেকে রস বের করে নেবার পর যে ছিবড়ে অবশিষ্ট থাকে তা কাগজ ও শব্দরােধক বাের্ড, জ্বালানি, কৃত্রিম রেশম প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়।

  • আখের শুকনাে পাতা ও কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ও সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


আখ চাষের অনুকূল অবস্থা


(ক) ভৌগোলিক অবস্থা :


(১) জলবায়ু : ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে আখ উৎপন্ন হয়।


  • উষ্ণতা : আখ চাষের জন্য সারা বছর 21°সে. থেকে প্রায় 28°সে. উয়তা প্রয়ােজন।


  • বৃষ্টিপাত : আখ চাষের জন্য বছরে 150 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়ােজন। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 সেমি-র কম হলে জলসেচের প্রয়ােজন হয়। আখ পরিণত হওয়ার সময় শুষ্ক ও রৌদ্রকরােজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়ােজন হয়। এতে আখে রসের পরিমাণ বেড়ে যায়। সামুদ্রিক আবহাওয়া আখ চাষের পক্ষে বিশেষ অনুকূল, কারণ সমুদ্রের লােনা বাতাস ও মাটি হেক্টর প্রতি আখের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। কুয়াশা বা তুহিন আখ চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। এজন্য পার্বত্য অঞ্চলে আখ চাষ করা যায় না।


(২) মৃত্তিকা : আখ চাষের জন্য উর্বর মৃত্তিকার প্রয়ােজন। চুন ও লবণাক্ত দোআঁশ মাটি আখ চাষের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। জমিতে জলনিকাশের ব্যবস্থা থাকাও একান্ত প্রয়ােজন। কাদামাটিতে জলনিকাশের অসুবিধা থাকায় আখ চাষ ভালাে হয় না। আখ চাষের জন্য মাটিতে নিয়মিত সার ব্যবহার করা দরকার।


(৩) ভূপ্রকৃতি: আখ চাষের জমিতে জল দাঁড়ানাে ক্ষতিকর। এই কারণে সামান্য ঢালু জমি আখ চাষের পক্ষে আদর্শ, কারণ ঢালু জমি জলনিকাশের উপযুক্ত।


(খ) অর্থনৈতিক অবস্থা :


(১) শ্রমিক : আখ রােপণ ও ফসল কাটার জন্য নিপুণ ও সুলভ শ্রমিক একান্ত প্রয়ােজন। ঘনবসতিপূর্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য আখ চাষের সহায়ক হয়েছে।


(২) পরিবহণ : আখক্ষেত্রে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা থাকাও একান্ত অপরিহার্য। কারণ, আখ কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস নিষ্কাশন করে না নিলে রসের পরিমাণ কমে যায়। এই কারণে চিনির কারখানাগুলি সাধারণত আখ চাষের জমির কাছেই গড়ে ওঠে।


(৩) মূলধন : আখ চাষের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় বলে উপযুক্ত সার দেওয়া প্রয়ােজন। এ ছাড়া, রােগ প্রতিরােধের উদ্দেশ্যে কীটনাশক প্রয়ােগ এবং প্রয়ােজনে জলসেচেরও ব্যবস্থা করতে হয়। এই কারণে আখ চাষে যথেষ্ট মূলধন বিনিয়ােগ করতে হয়।