বিভিন্ন প্রকার জাঙ্গল উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যসহ পরিবেশগত অভিযােজন সম্বন্ধে লেখাে।

বিভিন্ন প্রকার জাঙ্গল উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশগত অভিযােজন

যেসব উদ্ভিদ শুষ্ক অর্থাৎ জলের পরিমাণ কম এমন অঞ্চলের মাটিতে জন্মায় তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বলে। ওপেনহেইমার (Oppenheimer, 1960)-এর মতে, যেসব উদ্ভিদ পরিবেশের জলের অভাবকে সাফল্যের সঙ্গে আয়ত্ত করার জন্য নিজেদের দেহের অঙ্গসংস্থানিক (Morphological ) শারীরসংস্থানিক (Anatomical) ও শারীরবৃত্তীয় (Physiological) পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখে, তারাই জাঙ্গল উদ্ভিদ। অভিযােজনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জাঙ্গল উদ্ভিদকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।


(১) খরা পলায়নকারী :


  • শুষ্ক অঞ্চলে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির উদ্ভিদ আছে, যারা জলের অভাবকে এড়িয়ে চলার জন্য অতি অল্প সময়ের মধ্যে


  • জীবনচক্র সম্পন্ন করে ফেলে। সংক্ষিপ্ত বর্ষা ঋতুর শুরুতে বীজের অঙ্কুরােদগম হয়, তারপর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটায় ও মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই বীজ উৎপন্ন করে। এদের ক্ষণস্থায়ী বর্ষজীবী উদ্ভিদ (Ephemera Annuals) বলা হয়।


  • এসব উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডলীয় চরম শুষ্কতাকে সহ্য করতে পারে না। বীজের মাধ্যমে এরা শুষ্ক ঋতু ও তার প্রভাবকে এড়িয়ে যায়।


  • ক্ষণস্থায়ী বর্ষজীবী উদ্ভিদের মূল অপেক্ষা বিটপ (কাণ্ড) অংশ বড়াে হয়। যেমন- বােরাজিনেসি।


(২) খরা অগ্রাহ্যকারী বা মোচনকারী :


  • অনেক একবর্ষজীবী ও কতিপয় দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ এই শ্রেণির অন্তর্গত। খরা বর্জনকারী উদ্ভিদের মতােই এরা ক্ষুদ্রাকৃতির এবং এদের বিটপ (কাণ্ড) অঞ্চল মূলজ অঞ্চল অপেক্ষা বড়াে হয়।


  • খরার সময়ে বা প্রতিকূল পরিবেশে এদের মাটির ওপরের অংশ (বায়বীয় অংশ) শুকিয়ে যায়, কিন্তু বাকি অংশ মাটির মধ্যে থেকে যায়।


  • বৃষ্টিতে মাটি সরস হয়ে উঠলে ওই অংশ থেকে পুনরায় নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। এই সময়ে এরা খরা থেকে নিষ্কৃতি বা মুক্তি পায়। যেমন—গ্রামনি, প্যাপিলিওনেট।


(৩) খরা প্ৰতিরোধকারী :


  • শুষ্ক ও মরুভূমি অঞ্চলে এমন কিছু উদ্ভিদ প্রজাতি আছে, যারা সময়ে সময়ে অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় হ্রাসবৃদ্ধি ঘটিয়ে সারাবছর ধরে খরাকে প্রতিরােধ করে বেঁচে থাকে। এইসব উদ্ভিদ রসালাে (Succulent) প্রকৃতির। উদাহরণ- ফণীমনসা, রসালাে ক্যাকটাস (Cacti), ঘৃতকুমারী, শতমূলী ইত্যাদি। এইসব উদ্ভিদ কলা ও কোষের বৃদ্ধি ঘটিয়ে বর্ষার সময় মূল, কাণ্ড ও পাতায় প্রচুর জল সঞ্চয় করে রাখে। এ সময়ে এরা ফুলে ফেঁপে ওঠে। বৃষ্টিহীন ঋতুতে ও চরম খরার সময়ে ওই সঞ্চিত জলকে এরা বেঁচে থাকার জন্য ব্যবহার করে। তখন এরা শুকিয়ে যায়।


  • এসব উদ্ভিদের কাণ্ড, পাতা ও রােম মােমের আস্তরণে মােড়া থাকে, যাতে বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের সময় জল বেশি মাত্রায় দেহ থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে।


  • এরা দিনের বেশিরভাগ সময় পত্ররন্ধ্র বন্ধ রাখে এবং প্রস্বেদন মাত্রা কমিয়ে দেয়। কিন্তু রাতের বেলা পত্ররন্দ্র খােলা রাখে।


  • অত্যধিক খরার মধ্যেই এরা বেড়ে ওঠে এবং দীর্ঘদিন ধরে ফুল ও ফল উৎপন্ন করে।


(৪) খরা সহ্যকারী :

এই শ্রেণির উদ্ভিদেরাই সত্যিকারের জাঙ্গল উদ্ভিদ। কারণ এরা দীর্ঘসময় মাটিতে জলের অভাব অথবা স্থায়ীভাবে মাটির তাজা ভাব (Wilting) হারানােকে সহ্য করতে পারে। কিছু কিছু বৃক্ষ আছে, যারা অল্প সময়ের জন্য খরাকে সহ্য করতে পারে। কিন্তু বহু তৃণ ও গুল্ম আছে, যারা মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর ধরে খরাকে সহ্য করতে পারে। সুতরাং, খরাকে সহ্য করার মাত্রা অনুযায়ী খুব সহনশীল (Highly Tolerant) থেকে চরম সহনশীল (Absolute Tolerant) পর্যন্ত সব ধরনের জাঙ্গল উদ্ভিদ দেখা যায়। এরা যেভাবে শুষ্ক পরিবেশকে অনন্যভাবে মানিয়ে নেয়, তা হল一


  • প্রধান মূলকে (Tap Root) মাটির গভীরে দ্রুত বর্ধিত করে।

  • প্রচুর শাখামূল বিস্তার করে।

  • উচ্চ আস্রবণ চাপ (High Osmotic Pressure) বৃদ্ধি করে।

  • চরম খরার সময়ে প্রস্বেদন ক্রিয়া নিম্নস্তরে নামিয়ে আনে।

  • পাতা ও কোশের আয়তন হ্রাস করে।

  • এদের পাতা কাঁটায় পরিণত হয়।

  • মাটির আর্দ্রতা অত্যধিক কমে গেলে গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং জলীয় অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত নতুন কোনাে বৃদ্ধি ঘটে না। এই ধরনের উদ্ভিদ হল বাবলা (Acacia), আকন্দ, করবী প্রভৃতি।


জলবায়ু কীভাবে উদ্ভিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। অথবা, স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।


স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর অধঃক্ষেপণ ও তাপমাত্রার প্রভাব উল্লেখ করাে।


জলজ উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস করাে এবং জলজ পরিবেশে এগুলি কীভাবে বেঁচে থাকে তা উল্লেখ করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)