জলজ উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস করাে এবং জলজ পরিবেশে এগুলি কীভাবে বেঁচে থাকে তা উল্লেখ করাে।

জলজ উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস

যেসব উদ্ভিদ পর্যাপ্ত পরিমাণ জলে জন্মায়, কিংবা সম্পূর্ণভাবে জলজ পরিবেশে জীবনযাপন করে, তাদের জলজ উদ্ভিদ বলে। এদের মূল জলে নিমজ্জিত থাকে। হ্রদ, পুকুর, নদী, জলাশয় ও অন্যান্য জলজ পরিবেশ এবং আর্দ্র ভূমিতে বসবাসকারী উদ্ভিদেরা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। জলজ উদ্ভিদগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়一


ভাসমান জলজ উদ্ভিদ : এইপ্রকার উদ্ভিদ জল ও বাতাসের সংস্পর্শে জন্মায়। মাটির সঙ্গে এদের কোনাে যােগাযােগ থাকে না। এগুলি মুক্তভাবে জলের উপরিতলে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এদের অস্থানিক মূলগুলি জলের মধ্যে থাকে, কিন্তু পাতা ও অন্যান্য অংশ জলের ওপরে বাতাসের সংস্পর্শে অবস্থান করে। পর্বমধ্যগুলির আন্তঃকোশের ফাঁকা জায়গা বায়ুপূর্ণ থাকায় এরা জলে ভেসে থাকতে পারে। কচুরিপানা, টোপাপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি এ-জাতীয় উদ্ভিদের উদাহরণ।


কিছু কিছু জলজ উদ্ভিদ শুধুমাত্র জলের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় বেঁচে থাকে। এই প্রকার ভাসমান উদ্ভিদ কোনাে প্রকার প্রস্বেদন ক্রিয়া ঘটায় না। উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন, সারগাম, ডাকউইড ইত্যাদি এ জাতীয় উদ্ভিদের উদাহরণ।


নিমজ্জিত অথচ ভাসমান জলজ উদ্ভিদ : এমন অনেক জলজ উদ্ভিদ আছে যারা জলের মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসমান থাকে। এরা সম্পূর্ণভাবে জলের মধ্যে অবস্থান করলেও এদের মূল কাদামাটিতে আবদ্ধ থাকে না। এসব উদ্ভিদের কাণ্ড লম্বা কিন্তু পাতা ছােটো হয়। এদের সরু সরু পাতাগুলাে মূলের কাজ করে। উদাহরণ— সারগাসম, লেমনা, ঝাঝি প্রভৃতি।


প্রােথিত মূলযুক্ত নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ : এই শ্রেণিভুক্ত উদ্ভিদ জলের নীচে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় কাদামাটিতে মূল দ্বারা আটকে থাকে। উদাহরণ পাতাশ্যাওলা, বানশ্যাওলা, পাথরমূল, শিংমূল, পুকুরের আগাছা ও অধিকাংশ আণুবীক্ষণিক অ্যালগি।


ভাসমান পাতাবিশিষ্ট প্রােথিত মূলযুক্ত জলজ উদ্ভিদ : এই শ্রেণির উদ্ভিদের মূলগুলি পুকুর, জলাশয়, হ্রদ ইত্যাদির জলের নীচের কাদায় আটকে থাকে। পাতা ও ফুল ছাড়া উদ্ভিদের বাকি অংশ সম্পূর্ণ জলের নীচে থাকে। উদাহরণ- পদ্ম, শালুক, পানিফল প্রভৃতি।


প্রােথিত মূল কিন্তু উত্থিত জলজ উদ্ভিদ : এই শ্রেণির উদ্ভিদ অগভীর জলাশয়ে বেড়ে ওঠে। শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য এদের অতিরিক্ত জলের প্রয়ােজন হয়। আত্তীকরণ অঙ্গ জলের ওপরে থাকে। অঙ্কুরােদগম অংশ জলপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরের দিকে বর্ধিত হয়। মূলজ অংশ কাদামাটিতে আবদ্ধ থাকে। এদের উভচর উদ্ভিদও (Amphibious Plants) বলা হয়। এরা খাল, বিল, ডােবা, পুকুর, হ্রদ ইত্যাদির ধারে জন্মায়। এরা বর্ষাকালে আংশিক জলমগ্ন থাকে। উদাহরণ— ধানগাছ, কর্ডঘাস (Cordgrass), হােগলা, হিংচে প্রভৃতি।


জলজ পরিবেশে অভিযোজন


যেভাবে জলজ পরিবেশে এ ধরনের উদ্ভিদের অভিযােজন ঘটে তা হল—


  • মূল রােমহীন, ছােটো ও অবিন্যস্ত। মূলগুলি নরম ও গুচ্ছাকার।

  • কলাগুলি স্পঞ্জের মতাে। দুটি কলার মধ্যবর্তী কোশগুলির মধ্যে বড় ফাঁক থাকে ও বাতাসে পূর্ণ হয়।

  • মূলত্বকে বায়ুপূর্ণ প্যারেনকাইমা কলার প্রাধান্য দেখা যায়।

  • এদের কাণ্ড দীর্ঘ ও স্পঞ্জের মতাে নমনীয়। কাণ্ডে কিউটিকল প্রায় থাকে না।

  • ভাসমান পাতাগুলি সাধারণত বড়াে ও গােলাকার এবং মসৃণ ও উজ্জ্বল। নিমজ্জিত পাতাগুলি ছােটো, সরু ও খণ্ডিত হয়। পাতার উপরিভাগ মােমের দ্বারা আবৃত থাকে।

  • নিমজ্জিত পাতা ও কাণ্ডে এরেনকাইমা সুগঠিত প্রকৃতির হয়।

  • পরাগমিলন জলের মাধ্যমে ঘটে থাকে। বীজত্বক শক্ত ও পুরু অথচ হালকা হয়।


জাঙ্গল উদ্ভিদ ও লবণাম্বু উদ্ভিদের তুলনা করাে। মেসােফাইট বা সাধারণ উদ্ভিদের সাধারণ ও অভিযােজনগত বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।


জলবায়ু কীভাবে উদ্ভিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। অথবা, স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।


স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর অধঃক্ষেপণ ও তাপমাত্রার প্রভাব উল্লেখ করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)