ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করাে। হ্যারিকেন ও টাইফুন বলতে কী বােঝ?

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি

নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় তাদের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। তীব্রতার মাপকাঠি অনুযায়ী বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) ক্রান্তীয় গােলযােগকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে। যথা [1] ক্রান্তীয় ডিপ্রেসন (গতিবেগ ঘণ্টায় 40 কিমির কম), [2] ক্রান্তীয় ঝড় (গতিবেগ ঘণ্টায় 40 থেকে 120 কিমি) এবং [3] ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বা প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণবাত (ঘণ্টায় গতিবেগ 120 কিমি থেকে 300 কিমি বা 400 কিমি)


ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের চারটি পর্যায়


প্রারম্ভিক পর্যায় : এই পর্যায়ে সমুদ্রের ওপর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে উয়তার প্রভাবে বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে কমে। এলােমেলােভাবে বাতাস বইতে থাকে এবং ক্রমাগত আবর্তিত হয়ে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়।


বিকাশশীল পর্যায় : এই পর্যায়ে বায়ুর চাপ ক্রমাগত কমতে থাকে, বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায় এবং ঝড়ের চক্ষুকে কেন্দ্র করে বাতাস প্রবলবেগে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে যায়। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়। ঘূর্ণবাত ভেঙে কয়েকটি ছােটো ছােটো ঘূর্ণবাতে পরিণত হয়। এদের মধ্যে একটি ক্রমশ বড়াে হয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতে পরিণত হয়।


পরিণত পর্যায় : এই পর্যায়ে ঘুর্ণিঝড় প্রবল আকার ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে 4টি বৃত্তীয় বলয়ে ভাগ করা যায়। যথা—(i) 10 কিমি 20 কিমি ব্যাসযুক্ত কেন্দ্রবলয়। এই অংশে বাতাসের গতিবেগ খুবই কম, আকাশ পরিষ্কার থাকে। (ii) এর পরবর্তী বলয় 50 কিমি - 150 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশে বায়ুর চাপীয় ঢাল বেশ খাড়া। তাই বাতাসের গতিবেগ প্রবল, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও খুব বেশি। (iii) বহিস্থ বলয়টি ঝঞ্চাবিক্ষুপ্ধ। (iv) সবচেয়ে শেষের বলয়ে দুর্বল ঝােড়াে বাতাস প্রবাহিত হয়।


সমাপ্তি পর্যায় : শক্তিশালী ঘূর্ণবাত স্থলভাগে প্রবেশ করার পর ভূপৃষ্ঠের ঘর্ষণজনিত বাধার জন্য এর গতিবেগ কমে যায়। স্থলভাগে সমুদ্র থেকে জলীয় বাম্পের জোগান কমে বলে ঘূর্ণবাতের শক্তি উল্লেখযােগ্যভাবে কমে যায়। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়। নিম্নচাপের কেন্দ্র ক্রমাগত উচ্চচাপে পরিণত হয়। অবশেষে ঘূর্ণবাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।


হ্যারিকেন ও টাইফুন


পশ্চিম-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্রে যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে তা হ্যারিকেন নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের সমুদ্রের জলরাশি 27 °সে. বা তার অধিক উয় হলে সমুদ্রের ওপর গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রচণ্ড বেগে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে। এই ঝড় বর্তমানে ক্যাটরিনা, বিটা-বিটা প্রভৃতি নামে পরিচিত। চিন সাগরে এই ঝড় টাইফুন নামে পরিচিত।


বৈশিষ্ট্য :

  • এই ঝড়ের ব্যাস 150 থেকে 650 কিলােমিটার।

  • এই ঝড়ের কেন্দ্রে 10-15 কিমি ব্যাসযুক্ত শান্ত ও বৃষ্টিহীন অঞ্চল অবস্থান করে। একে ঝড়ের চক্ষু বলে।

  • এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় 150 200 কিলোমিটার।

  • এই ঝড়ের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রে প্রবল জলােচ্ছাস ঘটে। এই ঝড় স্বল্পক্ষণ স্থায়ী ও বিধ্বংসী।

  • সমুদ্রের ওপর উৎপত্তি লাভ করায় এই ঝড়ের ধ্বংসলীলা সমুদ্রের ওপরই বেশি কার্যকরী হয়। স্থলভাগে প্রবেশের সাথে সাথে এই ঝড়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও হ্রাস পেতে থাকে।

  • এই ঝড় সাধারণত জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে আবির্ভূত হয়।