আর্তেজীয় কূপ থেকে পাম্পের সাহায্য ছাড়াই জল উঠে আসে’- কারণ নির্দেশ করাে | গিজার কী? এর উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করাে।

আর্টেজীয় বা আর্তেজীয় কূপের গঠন

পাম্পের সাহায্য ছাড়াই যে কূপ থেকে ভৌমজল স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে তাকে আর্টেজীয় বা আর্তেজীয় কূপ বলে। উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের আ্তোয়েস (Artois) অঞ্চলে 1126 খ্রিস্টাব্দে এই প্রকার কূপ প্রথম খনন করা হয় বলে, এই ধরনের কূপকে আর্তেজীয় কূপ বলে।


গঠন : আর্তেজীয় কূপ মূলত ভাজপ্রাপ্ত শিলার অধােভঙ্গে গঠিত হয়। ভাজের অধােভঙ্গ অংশে দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মাঝে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর অবস্থান করলে এবং প্রবেশ্য শিলাস্তরের মুখ ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে বৃষ্টির জল প্রবেশ্য শিলাস্তরে সঞ্চিত হয়ে আবদ্ধ জলবাহী স্তরে (অ্যাকুইফার) ভৌমজল ভাণ্ডার গড়ে ওঠে। এই জলবাহী স্তরের উন্মুক্ত জলতল অর্থাৎ জলচাপ তল অনেক উঁচুতে অবস্থান করলে এই জলস্তরের নীচের দিকে জলের উর্ধ্বমুখী চাপ অনেক বেশি থাকে। জলবাহী স্তরের এইরুপ অবস্থাকে আর্তেজীয় অবস্থা এবং ওই স্তরকে আর্তেজীয় স্তর বলে। জলের এই উর্ধ্বমুখী চাপের জন্য আর্তেজীয় স্তরের ওপরের অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের কোনাে দুর্বল অংশ দিয়ে কিংবা অপ্রবেশ্য স্তরের মধ্য দিয়ে কূপ খনন করলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভৌমজল ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। এভাবে আর্তেজীয় প্রস্রবণ গঠিত হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে, ওডিশার বালেশ্বর জেলায় অনেক আর্তেজীয় কূপ আছে। রাজস্থানের উদয়পুর, আজমীর ও জয়পুর প্রভৃতি শহরের নীচে আর্তেজীয় স্তরের অস্তিত্ব থাকায় এখানে চিরস্থায়ী হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।


গঠনের শর্ত : অধােভঙ্গের আকারে দুই অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে প্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থান আর্তেজীয় কূপ খননের প্রথম শর্ত। জলচাপ তল অবশ্যই কূপের উর্ধ্বে অবস্থান করবে। আবদ্ধ জলবাহী স্তরের প্রবেশ্য শিলাস্তরের প্রান্তভাগ অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উন্মুক্ত থাকা প্রয়ােজন।


গিজার


আইরিশ শব্দ Geyser শব্দের অর্থ হল গর্জন। গিজার বা গাইজার একপ্রকার পর্যাবৃত্ত (Periodic) উয় প্রস্রবণ। এইরূপ প্রস্রবণ দিয়ে ভূগর্ভে সঞ্চিত অত্যুয় জল ও বাষ্প নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর গর্জন করতে করতে প্রবল বেগে ভূগর্ভের সংকীর্ণ পথ ধরে ভূপৃষ্ঠে উৎক্ষিপ্ত হয়, তাই এর নাম গিজার। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা প্রদেশের ইয়েলােস্টোন জাতীয় উদ্যানের ওল্ড ফেথফুল গিজার পৃথিবীবিখ্যাত।


গিজারের উৎপত্তি


সদ্যমৃত ও জীবন্ত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে ভূত্বকের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উয়তাও দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। ভৌমজল ম্যাগমা চেম্বারের সংস্পর্শে এলে দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভূ-অভ্যন্তরের গহরে জলীয়বাষ্প অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকে। ভূ-অভ্যন্তরের উয় জল থেকে উঠে আসা জলীয় বাষ্পের চাপ যখন বাতাসের বায়ুর চাপ অপেক্ষা বেশি হয়, তখন গহ্বরের মুখ দিয়ে অবরুদ্ধ বায়ু, বাষ্প ও উয় জল ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে গিজার সৃষ্টি করে। জল ও বাষ্প গহর থেকে বেরিয়ে এলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে। ফলে কিছুক্ষণের জন্য শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। এই সময়ে ধীরে ধীরে জলের সঞ্চয় ঘটে এবং ক্রমান্বয়ে বাম্পচাপ বাড়ে। এই চাপ সঙ্কটসীমা অতিক্রম করলে পুনরায় জলীয়বাষ্প ও জলের উৎক্ষেপণ ঘটে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে জলের উৎক্ষেপণ ও শান্ত অবস্থা চলতে থাকে।