স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ও মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করাে | স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ এবং মরু ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে ইনসেলবার্জ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করাে।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ও মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের পার্থক্য

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র : (১) সমুদ্রবক্ষের উত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়। (২) আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র সম্পন্ন হয়। (৩) স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে নদীর কাজই প্রাধান্য লাভ করে। (৪) স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে যৌবন পর্যায়ে ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা বাড়ে। (৫) পরিণত পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা বৃদ্ধি পায়। (৬) স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে সমপ্রায় ভূমি (পেনিপ্লেন) ও মােনাড়নক সৃষ্টি হয়। (৭) সমুদ্রপৃষ্ঠ স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা।


মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র : (১) পূর্ববর্তী পাদভূমির উত্থানের মধ্য দিয়ে মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়। (২) শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র সম্পন্ন হয়। (৩) মরু অঞ্চলে ভূমিরূপ বিবর্তনে আবহবিকার, পুঞ্জিত স্বলন, জলধারা ও বায়ু মিলিতভাবে কাজ করে। (৪) মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রে যৌবনে ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমাগত হ্রাস পায়। (৫) যৌবন পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা সবচেয়ে বেশি থাকে। (৬) মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে পেডিপ্লেন ও ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয়। (৭) ভৌমজলতল মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা।


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে প্লাবনভূমিতে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে ভূমির ঢাল একেবারে কমে যায়। তাই নদীর নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশি হয়। নদী চলার পথে বাধা পেলে তা এড়িয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। জলস্রোত নদীবাঁকের যে-অংশে আঘাত করে সেখানে ক্ষয় হয় এবং এর বিপরীত অংশে সঞ্চয় হয়। ধারাবাহিকভাবে নদীতে ক্ষয় ও সঞ্চয়ের ফলে অসংখ্য নদীবাঁকের সৃষ্টি হয়। নদী খুব এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হলে পরস্পর দুটি নদীবাঁকের মধ্যবর্তী অংশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে নদীবাক সংযুক্ত হলে নদী বাঁকা পথ ছেড়ে দিয়ে সােজা পথে চলতে শুরু করে। ফলে পরিত্যক্ত নদীবাঁকটি হ্রদের আকার ধারণ করে। একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।


মরু ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে ইনসেলবার্জ সৃষ্টি


জার্মান শব্দ ইনসেলবার্জের অর্থ হল দ্বীপ শৈল। 1926 খ্রিস্টাব্দে পাসার্জ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতাে সমতল মরুভূমির মাঝে খাড়া পার্শ্বদেশ ও প্রায় সমতল শিখরদেশবিশিষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত অবশিষ্ট ভূমিরূপের নাম দেন ইনসেলবার্জ। ভূবিজ্ঞানী এল.সি.কিং-এর মতে, দুটি নদী-উপত্যকার মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সংকীর্ণ খাড়া পাড়বিশিষ্ট পাহাড়ের রূপ ধারণ করলে তাকে ইনসেলবার্জ বলে। পূর্ব আফ্রিকার ক্ষয়প্রাপ্ত খাড়া পাড়বিশিষ্ট গােলাকৃতির এইরূপ ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপকে ভূবিজ্ঞানী বর্নহার্ট নিজের নাম অনুযায়ী নামকরণ করেন বর্নহার্ট। মরু অঞ্চলে বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর নিম্নক্ষয় বন্ধ হয়ে গেলে পাহাড়ের খাড়া ঢালের পশ্চাৎ অপসারণের ফলে ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয়।


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের যে-কোনাে দুটি পর্যায়ে সৃষ্ট ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।


ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলি আলােচনা করাে।


ডেভিসের ক্ষয়চক্রের সংক্ষিপ্ত সমালােচনা করাে। এল. সি. কিং-এর শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে। অথবা, কিং-এর পাদ সমতলীকরণ মতবাদটি ব্যাখ্যা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)