ডেভিসের ক্ষয়চক্রের সংক্ষিপ্ত সমালােচনা করাে। এল. সি. কিং-এর শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে | কিং-এর পাদ সমতলীকরণ মতবাদটি ব্যাখ্যা করাে।

ডেভিসের ক্ষয়চক্রের সমালােচনা

(১) ডেভিস প্রবর্তিত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ হতে পারে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ভূমির উত্থানের ফলে ক্ষয়চক্র বিঘ্নিত হতে পারে।


(২) ডেভিসের মত অনুযায়ী, ভূমির উত্থান পর্বে ক্ষয়কার্যের হার অতি নগণ্য এবং প্রকৃতপক্ষে তা শুরু হয় উত্থান পর্ব শেষ হলে, কিন্তু বাস্তবে তা অসম্ভব।


(৩) ডেভিস ভূমির দ্রুত উত্থানের কথা বলেছেন, কিন্তু পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুযায়ী এটি ধীর গতিসম্পন্ন।


(৪) ডেভিসের মত অনুযায়ী, ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ভূমিভাগ সুস্থির অবস্থায় থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নাও হতে পারে।


(৫) ডেভিস সময়ের ওপর যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, পেঙ্কের মতে, তা অমূলক।


ডেভিসের ক্ষয়চক্র কঠোরভাবে সমালোচিত হলেও এর কতকগুলি উল্লেখযােগ্য দিক আছে। যেমন一

  • ডেভিসই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষয়চক্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন।
  • তার মডেলটি অতি সরল এবং ভূমিরূপ বিশ্লেষণে ও শ্রেণিবিন্যাসে অত্যন্ত প্রায়ােগিক।
  • তিনি অতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভূমিরূপ বিবর্তনের হার পর্যবেক্ষণ করেছেন ও তাকে সহজ ও স্বচ্ছ ভাষায় উপস্থাপিত করেছেন।\
  • বর্তমান দিনের ভূতাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে তাঁর মতবাদ সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ, ভারসাম্য রেখাচিত্র, ক্ষয়ের শেষ সীমা ইত্যাদি ধারণাগুলিকে তিনি তাঁর মডেলে সংযােজন করেছেন।


কিং-এর শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের ধারণা/ কিং-এর পাদ সমতলীকরণ মতবাদ


এল.সি.কিং দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে 1948 খ্রিস্টাব্দে ভূমিরূপের বিবর্তন সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে পর্বত ঢালের পশ্চাদপসরণেই ফলেই পাদসমভূমি গঠিত। পর্যায়ক্রমে যৌবন, পরিণত ও বার্ধক্যের মধ্য দিয়ে মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে পাদসমভূমি গঠিত।


(১) যৌবন পর্যায় : পূর্ববর্তী পাদসমভূমি উত্থানের মধ্য দিয়ে মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র শুরু হয়। ভূমির উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলের নদীগুলি নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে খাড়া পাড়বিশিষ্ট উপত্যকা গঠন করে। পরবর্তীকালে নদীর নিম্নক্ষয়ের মাত্রা কমে গেলে উপত্যকার খাড়া ঢালের সর্বত্র সমানভাবে আবহবিকার প্রক্রিয়া দ্রুত কাজ করতে থাকে। ফলে ঢালের দ্রুত পশ্চাদপসরণের সঙ্গে সঙ্গে পর্বতেরও পশ্চাদপসরণ ঘটে। তখন পর্বতের সম্মুখভাগে এক সমতলপৃষ্ঠের সৃষ্টি হয়। একে পেডিমেন্ট বলে। পেডিমেন্ট ক্রমাগত প্রসারিত হলে অন্তর্বর্তী জলবিভাজিকা সংকীর্ণ হয়ে পাহাড়ের রূপ ধারণ করে। একে ইনসেলবার্জ বলে। ইনসেলবার্জ গােলাকার হলে তাকে বাের্নহার্ট বলে।


(২) পরিণত পর্যায় : নদী এই পর্যায়ে তার নিম্নক্ষয়ের ক্ষমতা হারায়। পেডিমেন্টগুলি খুব বেশি বিস্তৃত হওয়ায় কিছু কিছু ইনসেলবার্জ অবলুপ্ত হয়। ফলে পেডিমেন্টগুলি সংযুক্ত হয়ে বিস্তীর্ণ সমপ্রায় ভূমি বা পেডিপ্লেন সৃষ্টি হয়।


(৩) বার্ধক্য পর্যায় : এই পর্যায়ে অধিকাংশ ইনসেলবার্জ বিলুপ্ত হয়। ভূমির বন্ধুরতা তেমন থাকে না। একাধিক পেডিপ্লেন যুক্ত হয়ে অসংখ্য অবতল ঢালযুক্ত বিস্তীর্ণ পেডিপ্লেন গঠিত হয়।